মিরপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: ৬ বছর আগে কুষ্টিয়ার আদালত প্রাঙ্গণে হামলার শিকার হওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে তিনি বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক আইজিপি, কুষ্টিয়ার সাবেক পুলিশ সুপারসহ প্রশাসন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের মোট ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
মামলার আসামীরা হলেন: ১. শেখ হাসিনা, ২. আসাদুজ্জামান খান কামাল, ৩. মাহবুবুল আলম হানিফ, ৪. হাসানুল হক ইনু, ৫. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, ৬. এস এম মেহেদী হাসান (তৎকালীন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার), ৭. সদর উদ্দিন খান (কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি), ৮. আতাউর রহমান আতা (শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি), ৯. নাসির উদ্দিন (পুলিশের তৎকালীন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা), ১০. মনিরুজ্জামান (কুষ্টিয়া আদালতের তৎকালীন কোট ইন্সপেক্টর), ১১. মো. ইয়াসিন আরাফাত তুষার (জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি), ১২. সাদ আহমেদ (জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক), ১৩. রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব (জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব কেপিসি'র ও সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সভাপতি), ১৪. সজীব শেখ ওরফে এসকে সজিব, ১৫. রেদওয়ান রনি, ১৬. মো. হাসিবুল ইসলাম সুইট, ১৭. লাম, ১৮. শশী, ১৯. রাকিব, ২০. জয়নাল আবেদীন, ২১. রবিউল ইসলাম, ২২. রেজাউল ইসলাম স্বপন, ২৩. আবু তৈয়ব বাদশা, ২৪. মীর অভি, ২৫. শিমুল, ২৬. মাহমুদ হাসান (কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব কেপিসি'র যুগ্ম সম্পাদক ও সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সাধারণ সম্পাদক), ২৭. ডাবলু মোল্লা ওরফে জীবন মাহমুদ ডাবলু, ২৮. হাসিব কুরাইশী, ২৯. অভি, ৩০. ফেরদৌস খন্দকার, ৩১. সোহাগ, ৩২. মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ৩৩. রাসেল, ৩৪. আতিকুর রহমান অনেক, ৩৫. শামীম রুমি, ৩৬. সবুজ, ৩৭. ফিরোজ কায়সার (কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব কেপিসি'র সাংগঠনিক সম্পাদক), ৩৮. এডভোকেট ইমরান হোসেন দোলন, ৩৯. এডভোকেট অনুপ কুমার নন্দী (সাবেক পিপি), ৪০. মানব চাকি, ৪১. ইমরান পারভেজ রাসেল, ৪২. রাকিব আহমেদ, ৪৩. সজীব আহমেদ, ৪৪. মো. বাঁধন, ৪৫. মাখন, ৪৬. সুজন, ৪৭. মো. অন্তর। এ ছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ১৫-২০ জনকে।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৮ সালের ২২ জুলাই কুষ্টিয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলায় জামিন নিতে যান মাহমুদুর রহমান। জামিন মঞ্জুরের পর তিনি আদালত থেকে বের হয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিতে উদ্যোগ নেন। কিন্তু সকাল থেকে আসামীরা তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে রড, লাঠি ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্রসহ কুষ্টিয়া আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হন। এক সময় তিনি অবরুদ্ধ হয়ে পড়লে পুলিশের কাছে সহযোগিতা চান। কিন্তু পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পুলিশ কোনো সহযোগিতা করেনি।
মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, প্রাইভেটকারে আদালত চত্বর থেকে বের হওয়ার সময় আসামীরা অস্ত্র, রড, লাঠিসোঁটা নিয়ে গাড়ির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। গাড়ির সব কাঁচ ভেঙে লাঠি ও ইটপাথর দিয়ে উপর্যুপরি তাঁকে আঘাত করেন। এতে তিনি ঘাড়ের ওপর, মাথার পেছনে ডান দিকে ও ডান চোখের নিচে গুরুতরভাবে রক্তাক্ত জখম হন। আঘাতে দুই হাত ও বুকে ব্যাথা পান। একপর্যায়ে তিনি দৌড়ে এক আইনজীবীর চেম্বারে আশ্রয় নিলে আসামীরা সেখানেও আক্রমণ করেন। এ ঘটনার পর তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় যশোর বিমানবন্দরে গিয়ে চিকিৎসকের মাধ্যমে প্রাথমিক সেবা নিয়ে ঢাকায় যান।
মামলা করার সময় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদাল হোসেন, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
কুষ্টিয়া সদর মডেল থানার ওসি মু. মাহফুজুল বলেন, বাদী মাহমুদুর রহমান ২০১৮ সালের ২২ জুলাই একটি মানহানি মামলার আসামি হিসেবে কুষ্টিয়া আদালতে হাজিরা দিতে আসেন। তখন এজাহার নামীয় আসামিদের নির্দেশে দিনভর অবরুদ্ধ করে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে আদালত চত্বরে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তার উপর হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত জখম করে গুরুতর আহত করা হয়। এ ঘটনায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে মোট ৪৭ জনের নামে এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান বলেন, আমার ওপর হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করেছি। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। এ সময় শেখ হাসিনাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি করেন তিনি।
এরপর কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় যোগ দেন মাহমুদুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি আল মামুন সাগর, সাধারণ সম্পাদক এএম জুবায়েদ রিপন, টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনিসুজ্জামান ডাবলু, সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম উল হাসান অপু, জামায়াতে ইসলামির জেলা আমির অধ্যাপক আবুল হাসেম প্রমুখ।
এরপর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কুমারখালী উপজেলার কয়াগ্রামে বুয়েট ছাত্রলীগের হামলায় নিহত আবরার ফাহাদের বাসায় যান।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available