নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি: ঢাকার নবাবগঞ্জে কৃষিজমির টপ সয়েল যাচ্ছে ইটভাটায়। ফলে দিনদিন কমে যাচ্ছে এই অঞ্চলের কৃষিজমি৷ পুকুর খনন করে দেবে বলে জমি মালিকদের বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে উর্বর ফসলী জমির টপ সয়েল কিনে নিচ্ছে মাটি ব্যবসাসীরা। এতে স্থায়ীভাবে উৎপাদন ক্ষমতা হারাচ্ছে চাষের জমি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। কিন্তু সাময়িকভাবে লাভবান হচ্ছে ওইসব মাটি ব্যবসায়ী৷ এভাবে প্রকাশ্যে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হলেও এসব বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের নেই জোরালো কোনো পদক্ষেপ।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এভাবে কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে বিক্রি করা হলে আগামীতে আশপাশের জমিগুলোর কৃষিতে ঝুঁকি বাড়বে এবং কমবে কৃষি ফলন।
সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নবাবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষি (তিন ফসলি) জমির মাটি বিক্রির মহোৎসব চলছে৷শুধু এবছর নয়, প্রতিবছর এই ডিসেম্বর মাস এলেই এই অঞ্চলে কৃষি জমির মাটি বিক্রির হিড়িক পড়ে৷ দীর্ঘদিন ধরে এভাবে কৃষি জমির মাটি কেটে বিক্রি করায় ওই এলাকায় প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে আবাদি জমির পরিমাণ৷পাশাপাশি কমছে কৃষি উৎপাদন৷
নবাবগঞ্জের কলাকোপা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী সাহেবখালী এলাকা ও পাশে একটি স্পটে প্রকাশ্যে চলছে মাটি কাটা। ভেকু দিয়ে কৃষিজমির এসব মাটি কেটে পাশেই ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। প্রায় ১৫-২০ ফুট গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। ফলে পাড় ভেঙে পড়ছে৷এতে আশপাশে যেসব ফসলি জমি রয়েছে ওইসব জমিও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে৷ ভাঙন শুরু হলে আগামীতে পাশের কৃষি জমিগুলোও রক্ষা পাবে না।
নবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী মাধবপুর-সাহেবখালী এলাকায় সরেজমিনে ওই স্পটে গেলে মাটি কাটার বিষয়ে দোহারের ইসলামপুর এলাকার জামাল নামের এক ব্যক্তির নাম উঠে আসে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে জামাল রাজপাড়া-মাধবপুর, সাহেবখালী ও ইসলামপুর এলাকায় মাটির ব্যবসা করে আসছেন জামাল৷ তাই সবার কাছে তিনি মাটি ব্যবসায়ী হিসেবেই পরিচিত। কৃষি জমির মাটি বিক্রি অবৈধ হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় নেতাদের শেল্টার নিয়ে ফসলি জমি কেটে মাটি বিক্রি করেছেন৷এ বিষয়ে জামালের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘এবছর আমি মাটির ব্যবসা করি না৷ যে সাইটের কথা বলেছেন ওটা অন্যরা পরিচালনা করে৷’
ওই জমির পাশে সরিষা, খেসারিসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করা হয়েছে। এমনকি আশপাশে যেসব জমির উপর দিয়ে মাটিবাহী মাহেন্দ্র গাড়ি চলাচল করে, ওইসব জমিও চাষাবাদকৃত৷ কেউ সরিষা আবার কেউ খেসারি আবাদ করেছেন৷ওইসব ফসলের উপর দিয়েই চলাচল করছে মাটিবাহী গাড়ি৷
শুধু ফসলই নয়, এই মাটিবাহী অবৈধ মাহেন্দ্র গাড়ি চলাচলে কার্পেটিং সড়ক নষ্ট করা হচ্ছে। অন্যান্য গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। মাটিবাহী গাড়ি এতটাই বেপরোয়া যে এসব কারণে ঝুঁকি নিয়ে পথচারীরা যাতায়াত করছেন। এছাড়া সড়কে মাটিবাহী গাড়ির ধুলায় অতিষ্ঠ স্থানীয় মানুষ ও অন্যান্য গাড়ি চালকরা৷ শুধু এই একটি স্পটই নয়, নবাবগঞ্জে বেশ কয়েকটি স্থানে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি দোহারেও কয়েকটি স্থানে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসমা জাহান মুঠোফোনে এশিয়ান টিভি অনলাইনকে বলেন, এভাবে কৃষি জমির মাটি বিক্রি করলে আট ইঞ্চি পর্যন্ত জমির উপরের যে অংশ রয়েছে, সেই টপ সয়েল কমে যাবে৷পুকুর খননের নামে যদি এভাবে কৃষি জমি কেটে মাটি বিক্রি করা হয় তাহলে আগামীতে নবাবগঞ্জে কৃষিখাতে হুমকি দেখা দিতে পারে৷তাই এসব বিষয়ে জমি মালিকদের বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন৷
এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিলরুবা ইসলাম এশিয়ান টিভি অনলাইনকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনও কেউ কোনো অভিযোগ করেনি৷ আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম৷ কৃষি জমি কেটে মাটি বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
নবাবগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম বলেন, রাজাপাড়া-মাধবপুর এলাকায় কৃষি জমির মাটি কাটার বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি৷ খোঁজ নিয়ে দেখা হবে৷
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available