বাকেরগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি: বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় দূর্গাপাশা ইউনিয়নে এক লম্পট যুবকের ধর্ষণে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ফাতেমা আক্তার মিম নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। ছাত্রীর গর্ভজাত শিশু অপসারণের চেষ্টায় মৃত্যু হয় ।
মৃত মাদ্রাসার ছাত্রী দূর্গাপাশা ইউনিয়নের ইছাপুরা গ্রামের ওমর ফারুক হাওলাদারের মেয়ে ও ইউনিয়নের দর্জি বাড়ি দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণীর ছাত্রী ।
বিগত নয় দিন বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৮ অক্টোবর রোববার সকাল ১০টায় তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, মৃত রাজ্জাক গাজীর পুত্র লম্পট শাকিল গাজী (২৩)’র ধর্ষণে পর অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে ওই মাদ্রাসার ছাত্রী। গর্ভজাত শিশু ঔষধ খাইয়ে অপসারণের চেষ্টা করায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার।
ছাত্রীর পিতা ওমর ফারুক বলেন, শাকিল গাজী তাদের পার্শ্ববর্তী এলাকার হওয়ায়, মাদরাসায় আসা-যাওয়ার পথে তার মেয়ে শাকিল গাজীর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তিনি আরও জানান, তার ছোট ছেলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ নিয়ে যায়ই । বাড়িতে কেউ না থাকায় শাকিল গাজী আমাদের বাড়িতে যায় এবং তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে। এতে আমার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি আমার মেয়ে শাকিলকে জানালে তার বড় ভাইয়ের স্ত্রীসহ পার্শ্ববর্তী থানা বাউফলের কালি সুরি বাজারে একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায় । ক্লিনিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানতে পারে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এর পর থেকে শাকিল গাজী ও তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ও বোন ইয়াসমিন মিলে গর্ভজাত শিশু অপসারণের চেষ্টা করে ।
মৃত্যু শিক্ষার্থীর মা জানান, মেয়ের শারীরিক পরিবর্তন দেখে বেশ কয়েকদিন ধরে তার সন্দেহ হয়। অভাবের সংসার দেখে ডাক্তারে কাছে নিয়ে জাইতে পারি নাই। এরপর মেয়ের কাছে জানতে চাইলে সে ঘটনা খুলে বলে। পরে ধর্ষক শাকিল গাজীর কাছে জানতে চাইলে সেও অপরাধের কথা স্বীকার করে। এনিয়ে আমাদের এলাকার মুরুব্বী অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য নুর মোল্লার নিকট জানালে তিনি শাকিলের আপন বড় ভাই জাফর গাজী ও নিকট আত্মীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলামকে জানান। তারা আজ না কাল বলে ঘুরাঘুরি করতে থাকেন। এদিকে মেয়েকে নিয়ে গর্ভজাত শিশু অপসারণ করতে বিভিন্ন ঔষধ পানি খাইয়েছেন। যার কারণে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছে, হচ্ছে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় কালিসুরি বাজারে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যাই। ক্লিনিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ঔষধ খাইয়ে বাচ্চা নষ্ট করে, যার কারণে রক্তক্ষরণ হয়। ঔষধ খাওয়ার জন্য বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়, তাই নষ্ট বাচ্চা বের করার জন্য অপারেশন করা হয় । এতে তার আরও শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে আইসিইউ বিভাগে রাখা হয়। আর আইসিইউতেই মৃত্যু হয়।
ছাত্রীর মার নিকট পূর্বের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ফরিদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম শফিক ও শাকিলের নিকট আত্মীয় ইউপি সদস্য নজরুল এ বিষয়ে শালিস মীমাংসা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন তাই আমরা থানায় জানাই নি এছাড়াও মান-সম্মানের ভয়ে।
এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ থানা ওসি তদন্ত মোস্তফা জানান, ফাতেমা আক্তার মিম নামে এক মাদ্রাসার ছাত্রীর অন্তঃসত্ত্বা হয়ে মৃত্যুর কথা শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available