• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০৮:৪৮:২৫ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০৮:৪৮:২৫ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

ফিচার

বাংলাদেশ, পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ এর ইতিকথা

২৮ ডিসেম্বর ২০২২ বিকাল ০৫:৪৩:৩৯

বাংলাদেশ, পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ এর ইতিকথা

বাংলাদেশ, পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ এর ইতিকথা

মো. মোশাররফ হোসেন

দিনের নীল আকাশে তাকালেই আমরা দেখতে পাই সুন্দর সুন্দর তুলোর মত মেঘগুলো আকাশে চমৎকারভাবে উড়ে বেড়াচ্ছে। রাতের আকাশেও পূর্ণিমার সময় এমনটা দেখা যায়। মেঘগুলো দেখে আমাদের অনেকের দারুণ লাগে। সেগুলো কখনো বিশাল আকৃতিতে থাকে আবার কখনো একেবারেও কুয়াশার মত হালকা যেন আকাশে উড়ে বেড়ানো তুলোর পাল। কিন্তু কখনো কি আমরা ভেবে দেখেছি যে এই সব তুলোর মত মেঘের পালের কারণেই আজকের এই বাংলাদেশের সৃষ্টি! অনেকের হয়তো এখনই এটা পড়ে চক্ষু চড়কগাছ হয়েছে। কিন্তু আমি মোটেও মিথ্যে বলছি না। এসব মেঘের লক্ষ লক্ষ বছরের বর্ষণে এই বঙ্গ-দেশ বা বঙ্গীয় ব-দ্বীপ। আর কথা না বাড়িয়ে চলুন গল্প করতে করতে সেই সৃষ্টির ইতিহাসটা জেনে আসা যাক।

বহু বছর আগেকার কথা। বাংলাদেশের এই জায়গাটায় ছিল কেবলই সমুদ্র। টেকটনিক সঞ্চালন কিছুটা স্থিতিশীলতা পেয়েছে। ভারত আর ইউরোপ কাছাকাছি আসছে একত্রিত হবার জন্য। সময়টা টারশিয়ারি যুগেরও বহু আগের সময়ের। কেবল তৈরি হয়েছে হিমালয় ও অন্যান্য পার্বত্য অঞ্চল। পৃথিবী তখন অনেকটাই শান্ত। এই সময়টাতেই সূর্যের আলোয় সমুদ্রের পানি বাষ্পীভূত হওয়া শুরু হয়। ব্যাপারটা এমন যে, আপনি যদি কোথাও সামান্য পানি ফেলে রাখেন তাহলে দেখবেন সেখানকার পানি আস্তে আস্তে উবে যাচ্ছে। একে বলা বাষ্পীভবন। এক্ষেত্রে সকল তাপমাত্রাতেই পানি বাষ্পে পরিণত হয়। ঠিক এভাবেই প্রতিনিয়ত সমুদ্র থেকে বিশাল পরিমাণ পানি বাষ্পে পরিণত হচ্ছে। আর এই বাষ্পীয় পানিগুলোকেই আমরা মেঘ হিসেবে দেখতে পাই। প্রথমে সমুদ্রের উপরে মেঘগুলো খুব হালকা থাকে। সময় বাড়ার সাথে সাথে মেঘগুলো ভারী হতে থাকে। আর বঙ্গোপসাগরে যেই মেঘগুলো তৈরি হয় সেগুলো বাতাসের কারণে ভেসে ভেসে হিমালয়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। 

এভাবে একসময় বাধা পায় হিমালয়ের পর্বতগুলোর সাথে। যখন হিমালয়ের সাথে মেঘের বাধা পায় তখন কিন্তু মেঘগুলো আর হালকা থাকে না। এই বিশাল পথ পাড়ি দিতে দিতে পথমধ্যে আরও অনেক বাষ্প সংগ্রহ করে মেঘগুলো বিশাল ও ভারী মেঘে পরিণত হয়। আর এই ভারী মেঘগুলো হিমালয়ের সাথে উঁচু উঁচু পর্বতগুলোর সাথে ধাক্কা লাগার সাথে সাথেই ঝরে পরে ধারণকৃত সব পানি। শুরু হয় প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত। এভাবে সমগ্র হিমালয় জুড়ে এমনটা হয়ে থাকে। আর এই বৃষ্টিপাত প্রায় সারা বছর ধরেই চলতে থাকে। এখন কথা হল এই পানিগুলো কোথায় যাবে? তাদেরকে তো আবার সেই সমুদ্রেই ফিরে যেতে হবে তাই না? হ্যাঁ, আসলেই তাই। আর এই কারণেই উঁচু পাহারগুলো থেকে পানির ধারা নিচুতে প্রবাহিত হতে শুরু করে। প্রথমে হয়তো এই পানির ধারা এলোপাথাড়ি ভাবে প্রবাহিত হতে থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে একটা নির্দিষ্ট স্রোতধারা তৈরি হয়ে যায়। আর তৈরি হয় নদীর! ঠিক এই পদ্ধতিতে হিমালয়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য নদীর। এর মধ্যে সবথেকে খ্যাত হল আমাদের পদ্মা যা কিনা ভারতসহ সবখানে গঙ্গা নামেই অধিক পরিচিত। এসব অসংখ্য ছোট ছোট ধারা মিলে গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে গঙ্গার উৎপত্তি।
যেভাবে দ্বীপ গঠিত হয়।

গঙ্গা ছাড়াও ব্রহ্মপুত্র, মেঘনাসহ অনেক নদী ভারত হয়ে ভারত বা বঙ্গোপসাগরের দিকে প্রবাহিত হয়েছে ও হচ্ছে। কারণ পাহাড়ের দিক থেকে সাগরের দিক স্বাভাবিকভাবেই নিচু হয়ে থাকে আর পানি উপর থেকে নিচের দিকেই যায়। যাই হোক, এভাবে বহু বছর ধরে এ প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। এখানে একটা জিনিস ভালো করে লক্ষ্য করুন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পানি কিন্তু উঁচু পাহাড় থেকে নিচু ভূমির দিকে প্রবাহিত হয়েছে এবং অবশেষে তা সাগরের পানিতে পতিত হয়েছে। আপনাকে যদি আমি এখন বলি একটি মাটির বল বানিয়ে সেটা খুবই শক্ত করে অথবা পাথর নিয়ে তাতে কিছুদিন যাবত একটানা পানি ঢালুন এবং তারপর সেটা পর্যবেক্ষণ করুন। কি দেখবেন তাহলে? উত্তরটা হল যে, আপনি দেখতে পাবেন মাটি বা পাথরটি ক্ষয় হয়ে কিছুটা ছোট হয়ে গিয়েছে। আর আপনি যদি পানিগুলো সংগ্রহ করতে পারেন তাহলে ঐ ক্ষয় হওয়া অংশ সংগ্রহ করা পানির তলানিতে দেখতে পাবেন। যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে নিজে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। ঠিক এভাবেই পাহাড় থেকে বৃষ্টির পানিতে পাথর, মাটি অন্যান্য উপাদান ক্ষয় হয়ে নদীর ধারায় পানির সাথে মিশে যায়। এইসব ক্ষয়িত অংশকেই বলা হয় পলি। আর এই পলি এসে জমা হয় নদীর মোহনায়। মোহনা হল যেখানে নদী এসে সাগরের সাথে মিলিত হয়। এখন আরেকটা কথা হল যে এই পলি এসে কেন নদীর মোহনাতেই জমা হয়? আসলে এই প্রশ্নটা খুবই যুক্তিযুক্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্নটার উত্তর জানার জন্য আপনাকে হাতে কলমে আরেকটি পরীক্ষা করে দেখতে বলব। প্রথমে একটি ট্রেতে কিছু বালি নিয়ে সেটা কিছুতে আনুভূমিক ভাবে রাখুন। এবার হালকা করে পানি ছেড়ে সেটা উপর থেকে নিচের দিকে পরতে দিন। 

এতে আপনি দেখবেন যে প্রথমে যেখানে পানি দিচ্ছেন অর্থাৎ ট্রের উপরের দিকে পানির গতি খুবই বেশি। কিন্তু নিচেরদিকে যেখানে পানি ট্রে অতিক্রম করে মাটিতে বা পানিতে পরছে সেখানে পানির গতি বা স্রোত একেবারেই কম। আর একটা বিষয় যেটা দেখবেন সেটা হল, ট্রের উপরের দিকের সব বালি ধুয়ে নিচে নেমে গিয়েছে এবং সেগুলো আনুভূমিক ট্রের নিচে জমা হয়েছে। ঠিক এমনটাই হয় নদীর ক্ষেত্রে। পাহাড়ের দিকে অর্থাৎ উপরের দিকে নদীর স্রোত প্রচণ্ড বেশি থাকে। সেখানে নদী খরস্রোতা ও গভীর তবে প্রস্থ কম। কিন্তু যখন সেই নদী ক্রমশ সাগরের দিকে অগ্রসর হয় তখন নদীর প্রস্থ বারে এবং দৈর্ঘ্য কমার পাশাপাশি গভীরতা হ্রাস পায়। নদীর উপরের দিকে প্রচণ্ড স্রোতের কারণে সেখানে পলি জমতে পারে না। কিন্তু নদীর মোহনায় স্রোত একেবারেই কম হওয়ায় সেখানের নদীর পানিতে তলানি জমে এবং চর জেগে উঠে। উপরের মত চর জমতে জমতে তৈরি হয়েছিল আমাদের বঙ্গ দেশ। এখন কথা হল যে এটাকে কেন ব-দ্বীপ বলা হয়! এরও একটা কারণ আছে। নদীর পানির সাথে বাহিত হয়ে আসা পলি যখন নদীর মোহনায় এসে জমে তখন সেটা নদীর প্রায় মাঝে বরাবর এসে জমে থাকে। এর কারণ হল দুইপাশের স্রোত বেশি থাকা। এভাবে যখন পলি এসে মাঝ বরাবর জমে আস্তে আস্তে সেটা বৃহত্তর হতে থাকে অর্থাৎ আকারে বাড়ে। এভাবে একসময় সেটা মোটামুটি পরিণত দ্বীপে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু মাঝ বরাবর দ্বীপ গঠিত হওয়ায় দুই পাশের জলধারা আবার সেই দ্বীপকে ক্ষয় করতে শুরু করে। ফলে দ্বীপটি বাংলা অক্ষর মাত্রা ছাড়া ‘ব’ এর মত অথবা ইংরেজি অক্ষর উল্টা ‘V’ এর মত আকার পায়। যার ফলে একে ব-দ্বীপ বা বেসিন বলে। আর এরকম অসংখ্য ব-দ্বীপ মিলে আমাদের এই বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে বলেই একে ব-দ্বীপ বলে। আর আমাদের বাংলাদেশই কিন্তু পৃথিবীর সবথেকে বৃহত্তম ব-দ্বীপ। এভাবেই মেঘ-বৃষ্টি আর পাহাড়ের কারণে আমাদের আজকের বাংলাদেশ। এই হল মোটামুটি বঙ্গদেশের ছোট্ট একটা গল্প।


গল্প তো শুনলেন। এবার চলুন ব-দ্বীপের কি পরিণতি হয় সেসবও একটু জানা যাক। ব-দ্বীপগুলো কিন্তু মোটেও দীর্ঘদিন বসবাসের যোগ্য নয়। আসলে এই দীর্ঘদিন বলতে লক্ষ বছরকে বোঝানো হয়েছে। বসবাসের অযোগ্য হওয়ার কারণ হল যে, যখন দ্বীপ গঠন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যাবে তখন নদী-নালা বিলুপ্ত হয়ে এটি মরুভূমিতে পরিণত হবে। অর্থাৎ, ধীরে ধীরে পলি জমে নদীর মোহনা একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে এবং নদী গুলো ছোট হয়ে যাবে। একসময় নদীর পানি প্রবাহিত হওয়ায় বাধা পাওয়ায় নদী নিশ্চিহ্ন হিয়ে যাবে। এখন তাহলে হিমালয়ের পানি কোথায় যাবে? আসলে তখন নদীর অন্য কোন সহজ পথ অবলম্বন করে চলতে হবে এবং পুরনো পথ বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে পুরনো পথের আশেপাশের এলাকায় শুরু হবে মরুকরণ। এভাবেই ব-দ্বীপ বাসের অনুপযোগী হয়। এর উত্তম উদাহরণ হল মিশরের সভ্যতা। সেখানে আগে নীল নদের পাশে দারুণ সুন্দর উর্বর জমি ছিল আর ছিল পানির নির্মল প্রবাহ। তখন মিশরও ছিল আমাদের মত নদীমাতৃক। কিন্তু আজ আর তা নেই। যদিও বাংলাদেশের এমন পরিণতি হতে আরও অনেক দেরি ছিল। কিন্তু দেশের বোকা মানুষগুলো যেভাবে নদী দখল করে নিজেদের বিপদ বাড়াচ্ছে তাতে বাংলাদেশে মরুকরণ শুরু হতে খুব বেশি দেরি নেই। তাই আমাদেরকে এখনই সচেতন না হলে পরে আর আফসোস করারও সময় পাওয়া যাবে না।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ





ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ৯ জনের মৃত্যু
২১ নভেম্বর ২০২৪ রাত ০৮:০৫:৩৩