কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ৬নং ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতুর বাড়িতে মিললো প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ৬০ পিস সরকারি ত্রাণের টিন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতুর বাড়ির কলপাড়ের পাশে ঘরের দেয়ালে টিনগুলি রাখা হয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলা পিআইও অফিস থেকে এই টিনগুলি দেওয়া হয় ইউনিয়নের দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য।
এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, হতদরিদ্রদের টিন দেওয়ার সময় প্রত্যেক ব্যক্তির কাছ থেকে ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতু টিনের প্রতি বান থেকে এক পিস করে টিন নিজে রেখে দেন।
এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, বেশ কয়েক মাস আগে আকস্মিক এক ঝড়ে উক্ত ইউনিয়নের অনেকের বসতবাড়িসহ ফসলাদির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় । এ সময় ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা প্রস্তুত করে সরকারি দপ্তরে জমা দেন ইউপি চেয়ারম্যান।
তার মধ্যে ইউনিয়নের অসহায়, হতদরিদ্র এবং ক্ষতিগ্রস্ত ৩০টি পরিবারের নামে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ঘর ছাউনির জন ২ বান করে মোট ৬০ বান টিন আসে। বিতরণের সময় চেয়ারম্যান প্রতি বান টিন থেকে এক পিস করে মোট ৬০ পিস সরিয়ে রাখেন।
চেয়ারম্যানের ভগ্নিপতির দেওয়া তথ্য মতে জানা যায়, বাড়ির উঠানে টিনের ছাউনি দেবেন বলে চেয়ারম্যান এই টিন এনে রেখেছেন। অপরদিকে চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম নিজের আপন ভাগিনাসহ কাছের বেশ কয়েকজন অসহায়, হতদরিদ্র কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও তাদেরকে ত্রাণের টিন প্রদান করেছেন।
বিগত ইউপি নির্বাচনে দেশে তৃতীয় লিঙ্গের একমাত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম ঋতু ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। টিন আত্মসাত করার মধ্য দিয়ে ইউনিয়নের সাধারণ জনগণের নিকট ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন ।
ইউনিয়নে টিন পাওয়া কয়েকজন অসহায়, হতদরিদ্র পূর্ব বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সন্ন্যাসীর ছেলে মিলন, কর্ণ খোড়ার স্ত্রী রেখা রানী, লাল মিয়ার ছেলে ফারুক হোসেন বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান প্রতি বান থেকে একটি করে টিন কম দিলেও মাস্টার রুল খাতায় সমুদয় টিন উল্লেখ করে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতু বলেন, উপকারভোগী একজনের টিন আমার বাড়িতে রেখেছিল, তাদের বাড়ির জায়গা না থাকার কারণে। ঐ টিন ইতিমধ্যে আমি তাদেরকে দিয়েও দিয়েছি। তবে চেয়ারম্যানের বাড়িতে টিন রাখা উপকারভোগীর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি তা জানাননি।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, বান প্রতি টিন কম দেওয়ার ব্যাপারটি সঠিক নয়। একটা কুচক্রী মহল উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য মিথ্যা ও ভুলভাল তথ্য ছড়াচ্ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুলতানা জাহান জানান, টিনগুলি আমরা সঠিক নিয়মেই বিতরণ করেছি। চেয়ারম্যান সাহেব টিনগুলি পরবর্তীতে কী করেছেন তা আমি বলতে পারবো না।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান জানান, বিষয়টি জানার পর চেয়ারম্যনের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে জানান, একজন বা দুইজন লোক বাড়ি তৈরি করছে মাঠের ভিতর। টিন চুরি হয়ে যাবে বলে তারা নেয়নি। তাই চেয়ারম্যানের বাড়িতে রেখে গেছে। তাদের ঘর তৈরি হলে টিনগুলি নিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, যদি এখানে কোন অন্যায় দেখা যায়, তাহলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available