রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিকে চির অম্লান রাখার উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অন্যতম কারণ হলো বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য কাছারি বাড়ি। দুঃখজনক হলেও সত্য, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছারি বাড়ি ব্যবহারের জন্য মানতে হয় নানাবিধ শর্ত। অন্যদিকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজেস্ব ক্যাম্পাস না থাকায় বর্তমানে দুটি বেসরকারি কলেজে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ও একটি বেসরকারি কলেজে চলছে লাইব্রেরির কার্যক্রম এবং ২টি ভাড়া বাসায় চলছে প্রশাসনিক কার্যক্রম।
শিক্ষার্থীদের দাবি, যার নামে, যার স্মৃতি রক্ষার্থে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার স্মৃতিধন্য কাছারি বাড়ি ব্যবহারে কেন এত শর্ত? কেনই বা কাছারি বাড়ি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকারভুক্ত নয়? একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও কাছারি বাড়িতে অবাধে প্রবেশ, রবীন্দ্র চর্চা, সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ থেকে বঞ্চিত তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. এরশাদুজ্জামান আশেক জানান, ক্যাম্পাস, হলবিহীন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রবীন্দ্র চর্চা, রবীন্দ্র দর্শন, রবীন্দ্র সৃষ্টিকর্ম নিয়ে গবেষণা, রবীন্দ্রনাথের জীবনী সম্পর্কে জ্ঞানার্জন, দলগত পাঠক্রমে অংশগ্রহণসহ নানা একাডেমিক কাজের জন্য রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির প্রাঙ্গণটি হতে পারে উৎকৃষ্ট ক্ষেত্র। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত। উন্মুক্ত জ্ঞানচর্চা ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে কাছারি বাড়ির তত্ত্বাবধান রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনা প্রয়োজন।
আরেক শিক্ষার্থী আম্মায় আছিফুন মিম বলেন, বরেন্দ্র জাদুঘর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতে পারলে কাছারি বাড়ি কেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতে পারবে না? কবির নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়েও যদি তাঁর স্মৃতির সান্নিধ্য লাভের সুযোগ না থাকে তাহলে এটি প্রতিষ্ঠার সার্থকতা কোথায়? ভারতের শান্তিনিকেতনের মতো রবীন্দ্র কাছারি বাড়িটিও বাংলাদেশের শান্তিনিকেতন হয়ে উঠলেই সার্থকতা পাবে। এতে শিক্ষার্থীরা অবাধে, নিরাপদে বিচরণ এবং মুক্তজ্ঞানচর্চার সুযোগ পাবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শাহ্ আজম বলেন, কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিময় ঠাকুর বাড়ি, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ। রবীন্দ্রনাথের হাতে গড়া বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ, শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের বাসভবন কোনার্ক, শ্যামলী, উদয়নসহ সমস্তকিছু। আমাদের দেশের প্রাচীনতম জাদুঘর, বরেন্দ্র জাদুঘরের তত্ত্বাবধান করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। তেমনিভাবে শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির তত্ত্বাবধান করার দায়িত্বটি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের হওয়া উচিত। রবীন্দ্রনাথের কাছারি বাড়ি শাহজাদপুরে অবস্থিত বলেই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় শাহজাদপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই কাছারি বাড়ির সঙ্গে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সম্পর্ক না থাকলে কী করে হয়!
উপাচার্য আরও বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ও কাছারি বাড়ির আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। কাছারি বাড়ির বিষয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এটি প্রক্রিয়াধীন আছে। কাছারি বাড়িতে রবীন্দ্র গবেষণা, সাংস্কৃতিক চর্চা ও পরিবেশনার সুযোগ সৃষ্টি , ঐতিহাসিক বকুলতলা সংরক্ষণ, কবির স্মৃতিকে অম্লান রাখাসহ রবীন্দ্রনাথ ও কাছারি বাড়িকে কেন্দ্র করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। রবীন্দ্র উপাচার্য বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষার্থীদের প্রকৃতির মাঝে নিয়ে গিয়ে পাঠদান করতেন। সেকথা স্মরণ করে আমাদের মনে হয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিকট কাছারি বাড়ি প্রাঙ্গণটি পঠন-পাঠন, গবেষণা, সাংস্কৃতিক বিনিময়ের কার্যকর ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available