চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি: অবৈধ দখলে হারিয়ে গেছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের কাদৈর বাজার সংলগ্ন হুগুলীয়া খাল। ওই এলাকায় ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য দূরদূরান্ত থেকে নৌকা দিয়ে মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবসায়ীরা এই খালটি ব্যবহার করতেন। আবার শুষ্ক মৌসুমে কৃষি কাজে স্থানীয় কৃষকরা এ খালের পানি ব্যবহার করতেন। কালের বিবর্তনে সেই খাল এখন শুধুই স্মৃতি।
প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালটি অবৈধ দখলে আর দূষণে আজ হারিয়ে গেছে। খালের দুই পাশে অসংখ্য দোকানঘর নির্মাণ করায় বিশাল এই খালটি আজ ছোট ড্রেনে পরিণত হয়েছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে ঝুপুয়া, বাগারপুষ্কুরনী, তুলাপুষ্করনী, হাজারী পাড়া, সাতবাড়িয়া, সুবর্ণপুর, পাইকপাড়া ও ভল্লাচৌ গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক হুগুলীয়া খালের পানি কৃষি কাজে ব্যবহার করতে পারছে না। এতে স্থানীয় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের কাদৈর বাজারের কোল ঘেঁষে বয়ে গেছে হুগুলীয়া খাল। একসময় ডাকাতিয়া, কাকঁড়ি নদী হয়ে হুগুলীয়া খাল দিয়ে নৌকাযোগে কাদৈর বাজারে মালামাল নিয়ে আসতেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকরা শুষ্ক মৌসুমে কৃষি কাজে এই খালের পানি ব্যবহার করতেন।
কালের বিবর্তনে প্রবাহমান হুগুলীয়া খালের দুই পাশ অবৈধভাবে দখলে নিয়ে ধীরে ধীরে দোকানঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। কেউ কেউ দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা বাণিজ্য করলেও অনেকে দখলের পর অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার অনেকে দোকান ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। এভাবেই দখল হতে হতে খালটি ৯০ শতাংশ হারিয়ে আজ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
তেলিগ্রামের কৃষক সিরাজুল হক বলেন, হুগুলীয়া খালটি বাণিজ্যক খাল হিসেবে পরিচিতি ছিল। ১৯৮০ সালের দিকেও এই খাল দিয়ে বড় বড় মালবোঝাই নৌকা কাদৈর বাজারে নোঙ্গর করত। ব্যবসায়ীরা বাজার শেষে নৌকায় করে ফিরে যেতেন। এই খালের পানি এলাকার কৃষকেরা কৃষি কাজে ব্যবহার করতেন। দখল হয়ে যাওয়ায় খালের ইতিহাস ঐতিহ্য বিলীন হয়ে গেছে। প্রভাবশালী মহল খালটি দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করে লাখ লাখ টাকা সালামি নিয়েছে এবং মাস শেষে ভাড়া আদায় করছে।
সুবর্ণপুর গ্রামের কৃষক আলী মিয়া বলেন, আমরা শুষ্ক মৌসুমে জমিতে এই খালের পানি কৃষি কাজে ব্যবহার করেছি। বর্তমানে খালটি দখলের কারণে শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। আবার বর্ষা মৌসুমে খালটি দিয়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পাশ্ববর্তী গ্রামের বাড়ি ঘরে পানি উঠে এবং জমিনের ফসল নষ্ট হয়ে যায়।
হাজারীপাড়া গ্রামের ওয়াজিউল্লাহ বলেন, তিনি ছয় বছর আগে খালের উপর দুইটি দোকান ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। সরকার উচ্ছেদ করে দিলে তিনি চলে যাবেন বলেও জানান।
আঠারোবাগ গ্রামের মোস্তফা বলেন, চার বছর আগে খালের উপর নির্মিত একটি দোকান ঘর পাইকপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন কালুর কাছ থেকে দখল শর্তে ৬ লক্ষ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছি। সরকারি খালের জায়গা কীভাবে ক্রয় করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তমালিকা পাল বলেন, সরকারি কোনো খাল দখলের সংবাদ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। হুগুলীয়া খালটি পরিদর্শন করে অবৈধ দখলমুক্ত করা হবে। প্রয়োজনে দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ মামলা করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available