খোকসা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: জ্বালানি হিসেবে, বাড়িঘর ও সবজি ক্ষেতের বেড়া, মাচা, পান বরজ, পার্টিক্যাল বোর্ড ইত্যাদি কাজে পাটকাঠির ব্যবহার আগে থেকেই হয়ে আসছে। জানা গেছে, বর্তমানে চীনসহ বিভিন্ন দেশে পাটকাঠি পুড়িয়ে পাওয়া কার্বন থেকে আতশবাজি, কার্বন পেপার, প্রিন্টার ও ফটোকপিয়ারের কালি, মোবাইলের ব্যাটারি, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ও সারসহ নানা পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। ফলে কদর বাড়ছে পাটকাঠির।
বাণিজ্যিক ব্যবহার ও দাম বাড়ার কারণে পাটের পাশাপাশি পাটকাঠিরও যত্ন নিচ্ছেন কৃষকরা। কুষ্টিয়ার খোকসায় চলতি মৌসুমে পানির অভাবে পাটের আঁশে যে ক্ষতি হয়েছে পাটকাঠি দিয়ে তা পুষিয়ে নিতে চান চাষিরা। জানা গেছে, বাণিজ্যিক চাহিদা বাড়ার কারণে উপজেলায় এবার পাটকাঠির কদর বেড়েছে কয়েক গুণ।
কৃষকরা জানিয়েছেন, একদিকে সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে লোডশেডিং এবং সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় পানির অভাবে এবার পাট জাগ দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে চাষিদের। এমনকি পানির অভাবে অনেকের ক্ষেতেই পাট শুকিয়ে মরে গেছে।
এমন পরিস্থিতে কৃষকরা পরিত্যাক্ত ডোবা, নোংরা জলাশায়, পুকুর ও মাটি খুঁড়ে পাট জাগ দিতে বাধ্য হন। এতে নষ্ট হয়ে যায় পাটের রং। ফলে পাটের দামও তুলনামূলক কম পাচ্ছেন কৃষকরা। তবে পাটকাঠির কদর বাড়ায় আশার আলো দেখছেন তারা।
উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে ভালো মানের পাট প্রতি মণ ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নিম্নমানের প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্চে ১৭০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকায়। যা গত বছরের তুলনায় বেশ কম।
উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের মালিগ্রামের পাট চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, পানির সমস্যার কারণের এবার পাট নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছি। মাটি খুঁড়ে আর নোংরা জলাশয়ে পাট জাগ দিয়ে পাটের রং নষ্ট হওয়ায় দাম প্রতিমণে পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকা কম পেতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পাটের রং নষ্ট হলেও পাটকাঠির রঙের তেমন পরিবর্তন হয়নি। আবার পাটকাঠির দামও পাওয়া যাচ্ছে আগের চেয়ে বেশি। তাই গুরুত্ব দিয়ে পাটকাঠির যত্ন নিতে শুরু করেছি।
কৃষকরা জানান, এক বিঘা জমিতে ৮ থেকে ৯ মণ পাট হয়। বিঘা প্রতি খরচ হয় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। তা থেকে প্রায় ১০ মণ পাটকাঠি বের হয়। এতে প্রতিবিঘা জমি থেকে পাওয়া পাটকাঠি প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা জানিপুর ইউনিয়নের ইচলাট গ্রামের পাটচাষি সুধাংশু বিশ্বাস বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতা এসে পাটকাঠি কিনে নিচ্ছেন। এবার পাটকাঠি বিক্রি করে পাটের লোকসান অনেকটা পুষিয়ে যাবে। পাটের পাশাপাশি পাটকাঠির বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার বাড়ায় একই ফসলে আমাদের বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা হয়েছে।
জানা গেছে, চীনসহ বিভিন্ন দেশে পাটকাঠি পুড়িয়ে পাওয়া কার্বন থেকে আতশবাজি, কার্বন পেপার, প্রিন্টার ও ফটোকপিয়ারের কালি, মোবাইলের ব্যাটারি, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ও সারসহ নানা পণ্য তৈরি করা হয়। সে কারণেই দূরদূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে কৃষকদের কাছ থেকে পাটকাঠি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কৃষকদের অভিমত, এসব কারখানা এ এলাকায় স্থাপন করা গেলে পাটকাঠির চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে। লাভবান হবেন কৃষকরাও।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় ৪ হাজার ৩শ ৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছিলো, যা থেকে পাওয়া পাটকাঠির মূল্য ৭০ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available