নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় টিনসেডের একটি গ্যারেজে ৪টি আবাসিক সংযোগের বৈদ্যুতিক মিটার ব্যবহার করে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চার্জ দিচ্ছেন শাহিন আলম নামে এক ব্যবসায়ী। বিদ্যুৎ আইন অমান্য করে ওই প্রতিষ্ঠানে সংযোগটি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নেসকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (নওগাঁ দক্ষিণ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী বিকাশ বড়ুয়ার বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে জানা যায়, নওগাঁ শহরের আরজী নওগাঁ মৌলভীপাড়া মহল্লার শাহিন আলম তিন বছর আগে নেসকোর ২টি আবাসিক সংযোগের মিটার দিয়ে গ্যারেজে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চার্জের ব্যবসা শুরু করেন। এক বছর আগে গ্যারেজটি প্রায় ১শ মিটার দূরে স্থানান্তর করে আরও ২টি আবাসিক সংযোগের মিটার সেখানে নেন তিনি। এরপর থেকেই ওই সংযোগে দিন-রাত সার্বক্ষণিক গ্যারেজে চার্জ দেওয়া হয় ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা। বিদ্যুৎ আইন অনুযায়ী বৈদ্যুতিক নতুন সংযোগ পেতে শুরুতেই গ্রাহক আবেদন করবেন। এরপর মাঠ পর্যায়ে তা পরিদর্শন করে সংযোগ দেওয়ার কথা বিদ্যুৎ বিভাগের। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) এই সংযোগ কতটুকু নিয়মের মধ্যে প্রদান করা হয়েছে তা অনুসন্ধানে গেলে নানান অসঙ্গতি পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিবেশী লিটনের মধ্যস্থতায় প্রায় এক বছর আগে নেসকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (নওগাঁ দক্ষিণ) উচ্চমান সহকারী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ হয় শাহিন আলমের। এরপর শাহিন আলমের আবেদনের যাবতীয় কাজ করে দেন রফিকুল ইসলাম। ম্যানেজ করা হয় ওই এলাকায় বৈদ্যুতিক নতুন সংযোগের পরিদর্শক উপ-সহকারী প্রকৌশলী বিকাশ বড়ুয়াকে। কোনরকম পরিদর্শন ছাড়াই বিকাশ বড়ুয়া ওই গ্যারেজে নতুন করে আরও ২টি আবাসিক বৈদ্যুতিক সংযোগ দেন। সংযোগ চালু হওয়ার পর ওই এলাকায় দায়িত্বরত মিটার রিডার একাধিকবার বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী বিকাশ বড়ুয়ার কাছে। তবে সেই অভিযোগে কর্ণপাত করেননি তিনি।
আরজী নওগাঁ মহল্লার স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন ও সাইফুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর যাবত শাহিন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা আবাসিক সংযোগ দিয়ে চার্জ দিয়ে আসছে। ইতিপূর্বে তার আগের বাড়িতে গ্যারেজ করে এই চার্জ দেওয়া হতো। বর্তমানে স্থানান্তর করে ১টি টিনের গ্যারেজ করে সেখানে আরও ২টি আবাসিক সংযোগের মিটার স্থাপন করে মোট ৪টি মিটার ব্যবহার করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চার্জ দেওয়া হচ্ছে।
শাহিন আলম বলেন, গ্যারেজের ৪টি আবাসিক মিটারই আমার নামে আছে। বিদ্যুৎ অফিসের উচ্চমান সহকারীর মাধ্যমে আমি সংযোগটি পেয়েছি। অফিসের কর্তাদের জানিয়েই এখানে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। রাতে অটোরিকশা চার্জ দেই, দিনে গ্যারেজ তালাবদ্ধ রাখা হয়।
উচ্চমান সহকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেকটা সংযোগের ফাইলই আমার টেবিলে আসে। তবে পরিদর্শন করে সংযোগ দেওয়ার দায়িত্ব ইঞ্জিনিয়ারের। এখানে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলেও আমার সেখানে জড়িত থাকার সুযোগ নেই।
বৈদ্যুতিক মিটার রিডার নাজমুল হোসেন বলেন, আবাসিক সংযোগ নিয়ে শাহিন আলম দীর্ঘ বছর যাবত বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। হুট করে তিনি এই সংযোগ পেয়েছেন। ওই গ্রাহকের বিরুদ্ধে নোটিশ করতে একাধিকবার বিকাশ স্যারকে জানিয়েছি। তবে এখনো নোটিশ পাঠানো হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নেসকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (নওগাঁ দক্ষিণ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী বিকাশ বড়ুয়া বলেন, ওই গ্যারেজে ৪টি মিটারের মধ্যে ২টি আবাসিক এবং ২টি বাণিজ্যিক এমন মৌখিক তথ্য আমি পেয়েছি। বিষয়টি আগে জানা থাকলে অবশ্যই ওই গ্রাহককে নোটিশ করা হতো। মিটার রিডার বা কেউই আমাকে অবগত করেননি। সবকটি সংযোগ নিয়ম মেনে পরিদর্শন করেই দেওয়া হয়। ওই সংযোগ প্রদানে অনিয়মে তিনি সম্পৃক্ত নন বলেও দাবি করেন।
নেসকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (নওগাঁ দক্ষিণ) নির্বাহী প্রকৌশলী মিলন মাহমুদ বলেন, আবাসিক সংযোগ নিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা সম্পূর্ণ অবৈধ। এই সংযোগ কে বা কারা দিয়েছে সেটি খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থ্যা নেওয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available