• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বিকাল ০৫:০৫:৪৩ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বিকাল ০৫:০৫:৪৩ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

সারাবাংলা

২০ বছর লড়াই করে নিজের গড়া স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন আকবর

৩ নভেম্বর ২০২৩ সকাল ০৮:৪৭:০৬

২০ বছর লড়াই করে নিজের গড়া স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন আকবর

পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ে ২০ বছর মামলার লড়াই চালানোর পর অবশেষে নিজ হাতে গড়া বিদ্যালয়ে আবারও শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন আকবর হোসেন নামের এক শিক্ষক। ১৯৯২ সালে তার হাত দিয়ে গড়া পঞ্চগড় সদর উপজেলার নয়নীবুরুজ দীঘলগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে যোগদান করেন এই শিক্ষক। এ সময় বিদ্যালয়ের তার সাবেক সহকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। মিষ্টি বিতরণ করা হয় সবার মাঝে।

বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পর রেজিস্টেশন হয় এবং আকবরসহ শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হন। তার কয়েক বছর পরেই ষড়যন্ত্র করে তাকে বিদ্যালয় থেকে অনৈতিকভাবে বহিষ্কার করা হয় বলে দাবি করেন তিনি। তারপর থেকেই মামলা পাল্টা আপিল এভাবেই চলে গেছে তার জীবনের ২০টি বসন্ত। দারিদ্রতা আর মামলার হয়রানিসহ জীবনে প্রতিটি দিন কেটেছে তার দুঃশ্চিন্তা আর হতাশার মধ্য দিয়ে। অবশেষে আদালতের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পেয়েছেন বলে দাবি করেন আকবর। আকবর আলীর বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের কাপরাঙ্গাপাড়া এলাকায়। প্রতিষ্ঠাকালে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি।  

আকবর হোসেনের পরিবার জানায়, দীঘলগ্রামে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় ১৯৯২ সালে নয়নীবুরুজ দীঘলগ্রাম বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন আকবর আলী। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। তার অনেক আগেই সভাপতি হবিবর রহমানের সাথে বনিবনা না হওয়ায় আকবর হোসেন শিকার হন ষড়যন্ত্রের। ২০০১ সালে তার স্ত্রীর সাথে বিরোধের একটি মামলায় ৩ মাস কারাগারে থাকতে হয় তাকে। পরে সমঝোতা হওয়ায় জামিনে মুক্তি পান তিনি। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর বিদ্যালয়ের সভাপতি হবিবর রহমান প্রধান শিক্ষক আকবর হোসেনকে আর বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেননি।

এভাবে চলে যায় কয়েক বছর । ২০০৪ সালে আদালতে মামলা করেন আকবর। মামলায় আদালত আকবরকে স্বপদে বহাল ও তার বকেয়া বেতন পরিশোধের নির্দেশ দেন। এদিকে আকবরকে সরিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সংশ্লিষ্টরা সভাপতির ভাতিজা বৌ আয়েশা সিদ্দিকাকে নিয়োগ দেন। এরপর এই মামলা গড়িয়েছে উচ্চ আদালত পর্যন্ত। চলেছে রায় আর পাল্টা আপিল। সবশেষ ২০২২ সালের ১৮ মে উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ শুনানি শেষে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন এবং আয়েশা সিদ্দিকার নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপর অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া আয়েশা সিদ্দিকাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

কিন্তু এর পরও আকবরকে যোগদান করাতে তালবাহানা শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তারা তাকে ঘুরাতে শুরু করেন। উপায় না পেয়ে ২০২২ সালের শেষের দিকে পঞ্চগড় সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেন তিনি। এরপর আকবর আলীকে যোগদান করানোর আদালতের নির্দেশ অমান্য করায় আদালত গত ২৯ অক্টোবর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এরপর তড়িঘড়ি করে ২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে আকবর হোসেনকে যোগদান করিয়ে বিদ্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।

ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক আজম আলী প্রধান বলেন, আমরা একসাথে শিক্ষকতা শুরু করি। এই বিদ্যালয়ের জন্য তিনি অনেক কষ্ট করেছেন। তারপর দীর্ঘ ২০ বছর আদালতের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরেছেন। আজ তিনি আবার যোগদান করায় আমরা খুবই আনন্দিত।  

আকবর আলীর স্ত্রী  জোসনা আক্তার বলেন, আমার স্বামী নিজেই এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। ওই সময় এখানে কোনো বিদ্যালয় ছিলো না। কিন্তু আমার স্বামীকে ষড়যন্ত্র করে বহিষ্কার করা হয়। মামলা চালাতে গিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। আজ আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই।  

আকবর হোসেন জানান, এই মামলার পেছনে আমার সবকিছু শেষ করে ফেলেছি। ছেলে দুইটাকেও ভালো করে লেখাপড়া করাতে পারিনি। ২০ বছর ধরে আমি সংগ্রাম করছি। চরম অভাবে দিন পার করেছি। তবুও ন্যায় বিচারের আশায় বছরের পর বছর ঘুরেছি। সভাপতি হবিবর রহমান, এটিইও আকবর আলী, জিন্নাত আলী ও টিইও রুস্তম আলী যোগসাজস্যে আমাকে বাদ দিয়ে আয়েশা সিদ্দিকাকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছিল। আজ ২০ বছর পরে আদালতের নির্দেশে আমাকে আমার পদ ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন আমাকে পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলোতে আর যেন হয়রানি না করা হয় সেই দাবি জানাই। পাশাপাশি আমি স্থানীয় বাসিন্দাসহ বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করি।

আইনজীবী আসাদুজ্জামান বলেন, আমি আকবর হোসেনের জারি মামলার আইনজীবী ছিলাম। সংশ্লিষ্টরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা না মানায় এই মামলা করা হয়। বিবাদীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হলেও তারা কোনো জবাব না দেয়ায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ারা জারি করেন। এরপর প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা কাগজপত্র যাচাই করে তাকে বিদ্যালয়ে যোগদান করায়।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম মন্ডল বলেন, দীর্ঘ চাকরি সংক্রান্ত মামলা চলার পর আদালতের নির্দেশে আমরা আকবর হোসেনকে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের অনুমতি দিয়েছি। তিনি আজ বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন।   

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ



সেনাকুঞ্জে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া
২১ নভেম্বর ২০২৪ বিকাল ০৪:২০:৫২





আলু বীজের চড়া দামে দিশেহারা হাওরের চাষিরা
২১ নভেম্বর ২০২৪ বিকাল ০৩:৩৬:৫৫