গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি: নাটোরের গুরুদাসপুরে ক্ষেতের ধান নষ্ট করে জোরপূর্বক ইটপরিবহনের রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে এক ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে। ২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পৌরসভার চাঁচকৈড় মধ্যমপাড়া মহল্লায় ওই রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
ক্ষেতের ধান নষ্টের ঘটনায় ইটভাটা মালিক জাকির সোনার ও তার ছেলে শাকিল সোনারসহ আটজনকে অভিযুক্ত করে বৃহস্পতিবার দুপুরে গুরুদাসপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। ভুক্তভোগীদের পক্ষে জিয়ারুল মন্ডল বাদী হয়ে অভিযোগটি দায়ের করেন। তার পরও রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোনোয়ারুজ্জামান অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ভুক্তভোগী কৃষক জিয়ারুল মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, তাদের ধান খেতের পাশেই জাকির সোনারের ‘মেসার্স এসআর বি ব্রিক্স’ নামে একটি ইটভাটা আছে। কয়েক বছরের মধ্যে তাদের অনেকের কৃষি জমি কব্জায় নিয়েছেন ইটভাটা মালিক।
সর্বশেষ তাদের পরিবারের আট সদস্যের চার বিঘা কৃষি জমি ইটভাটার কাজে লিজ নেওয়ার জন্য নানাভাবে চাপ দিয়ে আসছেন। ওই প্রস্তাবে রাজি হননি তারা। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ইটভাটা মালিক জাকির সোনার তার লোকবল নিয়ে তাদের খেতের ধান কেটে ইটপরিবহনের রাস্তা নির্মাণ শুরু করেন। প্রতিবাদ করেও প্রভাবশালীদের দাপটের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন তারা। নিরুপায় হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেও রাস্তা নির্মাণের কাজ বন্ধ করা যায়নি।
কৃষক জিয়ারুল মন্ডল আরও বলেন, প্রভাবশালীদের দাপট থেকে ধান রক্ষায় চারপাশে বাঁশের বেড়া দিলেও ক্ষেতের ধান রক্ষা করতে পারছেন না তারা। অথচ ধান গাছে থোর এসেছে, আর কিছুদিন পরেই এসব ধান কাটা যাবে।
জিয়ারুল মন্ডল জানান, তারা পাঁচভাই, দুইবোন ও বৃদ্ধ মায়ের নামে চারবিঘা জমি আছে। বছর জুড়ে চাষাবাদ করে সেই ফসল বিক্রি করেই কষ্টে সংসার চলে তাদের। কিন্তু ইটভাটা মালিকের কারণে শেষ সম্বল কৃষি জমিটি এখন টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা এই অন্যায়ের বিচারের দাবি জানান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইটভাটার পশ্চিম পাশের বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে ধান ক্ষেত। ভুক্তভোগী কৃষকদের উভয়পাশের কৃষি জমি লিজ নিয়ে সেখানে ইট তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছেন ইটভাটা মালিক। কিন্তু ভুক্তভোগী কৃষকরা তাদের কৃষি জমি ইটভাটা কর্তৃপক্ষকে লিজ না দেওয়ায় জোরপূর্বক ধান নষ্ট করে ইট দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছেন ইটভাটা মালিক জাকির সোনার।
ইটভাটা মালিক জাকিরের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার ছেলে সাকিল সোনার দাবি করেন, অভিযোগকারীদের ক্ষেতের চার পাশেই অনেক জমি লিজ নিয়ে ইটভাটার কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা। ইটভাটার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য অভিযোগকারীদের সামান্য জমিতে ইট ফেলে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। এজন্য তাদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করে দিবেন তারা।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, কৃষি জমি নষ্ট করে ইটভাটা নির্মাণের আইনগত বৈধতা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available