নলডাঙ্গা (নাটোর) প্রতিনিধি: নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার মির্জাপুর তেঘরপাড়া গ্রামের কোরবান আলীর জন্ম থেকেই দুই পা পক্ষাঘাতগ্রস্ত, শক্তিহীন। তিনি এক হাতের উপর ভর করে অনেক কষ্ট করে হাঁটাচলা করেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম কর্তা তার বাবা ৬ বছর আগে কৃষি শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে কোমরে আঘাত পেয়ে অসুস্থ হয়ে কাজকর্ম করতে না পারায় পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার।
এই পরিস্থিতে প্রতিবন্ধকতা জয় করে সংসারের হাল ধরেন শারীরিক প্রতিবন্ধী কোরবান আলী। তিনি ছোট পান দোকান করে সামন্য আয় দিয়ে পরিবারের ৬ জনের খাবার যোগান দিচ্ছেন। এইভাবে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে কোরবান আলীর কষ্টের সংগ্রামী জীবনযুদ্ধ টিকিয়ে রাখছে পরিবারটিকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোরবান আলী নলডাঙ্গা উপজেলার বিপ্রবেলঘরিয়া ইউনিয়নের নরশৎপুর গ্রামের বাজারের ছোট একটি দোকানে পান বিক্রি করছেন। প্রতিটির পানের দাম নিচ্ছেন ৫ টাকা। তার দোকানে অধিকাংশ পণ্য ৫ টাকা ১০ টাকা ২০ টাকা মূল্যের বিস্কুট চানাচুর ও চকলেট। দিন শেষে এসব পণ্য বিক্রি করে পান এক হাজার টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা। মূলধন বাদ দিয়ে লাভ হয় মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। কোরবান আলীর দৈনিক রোজগারের এই ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দিয়েই পরিবারের বাবা-মা, স্ত্রী ও তার দুই সন্তানের তিনবেলা খাবার যোগান।
জানা গেছে, কোরবান আলী প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা ছাড়া আর কোনো সরকারি সুযোগ সুবিধা পান না। একটি হুইল চেয়ারের অভাবে তিনি বাড়ি থেকে দুই হাতের উপর ভর করে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে নরশৎপুর বাজারে তার পান দোকানে যাতায়াত করেন।
দোকান খোলার পর কথা হয় শারীরিক প্রতিবন্ধী কোরবান আলীর সাথে। তিনি জানান, তার পিতা ৬ বছর আগে অন্যের বাড়িতে কৃষি শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে কোমরে আঘাত পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পর থেকে আর কাজ করতে পারেন না। বাধ্য হয়ে তাকেই সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। তার এই পানের দোকান করে দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই কোনো রকমে ৬ জনের সংসার চলে। তাদের মাঠে কোনো জমি নেই। এমনকি যে জায়গায় বাড়ি আছে, সেটাও তার মামাদের। তার দাবি, তার বাবা অথবা মায়ের নামে যদি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড ও টিসিবির ফ্যামেলি কার্ড দেওয়া হয়; তাহলে অনেকটা কষ্ট লাঘব হবে। সেই সাথে তিনি সরকারি আশ্রায়ণ প্রকল্পের একটি বাড়ি পাওয়ার আকুতি জানান।
শারীরিক প্রতিবন্ধী কোরবান আলীকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন বিপ্রবেলঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী।
নাটোর জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী কোরবান আলী কারও কাছে হাত না পেতে পান দোকান করে সংসার চালাচ্ছেন, এই বিষয়টাকে আমি সাধুবাদ জানাই। তাকে উপজেলার সমাজসেবা কার্যালয় হতে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হচ্ছে। তার জন্য আরও অন্য কিছু করা যায় কিনা আমি ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা চিন্তা করে দেখবো।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available