বরিশাল (সদর) প্রতিনিধি: তড়িঘড়ি করে ট্রাক টার্মিনালের জায়গায় বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল স্থানান্তরের কাজ শুরু হয়েছিলো ঢাকঢোল পিটিয়ে। তবে সেই কাজ আর শেষ হলো না। স্থানান্তর হচ্ছে না বাস টার্মিনাল। তাই অর্ধনির্মিত অবস্থায় পড়ে থাকা কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিল উত্তোলন করে নিয়েছে।
তবে নগর ভবন কর্তৃপক্ষ বলছে, যতটুকু কাজ হয়েছে, তার বেশি বিল দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই সাবেক মেয়রের নির্দেশে সেভাবেই বিল দেওয়া হয়েছে। এখন প্রকৌশল দপ্তর বলছে, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল কাশিপুরের ট্রাক টার্মিনালে যাওয়ার কোনো সুযোগই নেই। ফলে দুটি ভাগে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে কাশিপুরের ট্রাক টার্মিনালে তড়িঘড়ি করে বাস টার্মিনাল স্থানান্তরের পরিকল্পনা কেন নেওয়া হয়েছিল তা নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বিভাগীয় শহর বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রীবাহী পরিবহনের চাপ পূর্বের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এ কারণে নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালেও পরিবহনের চাপ বাড়ায় দীর্ঘ যানজট লেগেই রয়েছে। বরিশাল-ঢাকা রুটে অর্ধশতাধিক নতুন পরিবহন সংযোজন এবং অভ্যন্তরীণ রুটে কয়েরগুণ পরিবহনের চাপে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয় টার্মিনাল ব্যবস্থাপনায়। তাই বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালকে সংস্কারের জন্য দাবি তোলা হয়।
সূত্রে আরও জানা গেছে, সাধারণ বাস মালিক, স্থানীয় ওয়ার্কশপ ও পার্স ব্যবসায়ীদের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সদ্য সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালটি সংস্কার না করে কাশিপুরের শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত ট্রাক টার্মিনালের জন্য বরাদ্দ করা জায়গায় স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
চরম আপত্তির মুখেই বাস মালিক সমিতির তৎকালীন সভাপতি ও সম্পাদককে সাথে নিয়ে কাশিপুরের ট্রাক টার্মিনালে বাস টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু করে সিটি করপোরেশন। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, কাশিপুর ট্রাক টার্মিনালের জায়গায় বাস টার্মিনালের প্রায় অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে। টার্মিনালের পূর্ব-উত্তর দিক ঘিরে কাউন্টার ভবনের সামনে শাটার পর্যন্ত লাগানো হয়েছে। উত্তর দিকের কাউন্টারগুলোর সামনে শাটার লাগানো হলেও পেছন দিক খোলা। আর দক্ষিণ দিকে কয়েকটি কলাম উঠিয়ে রাখা হয়েছে। টার্মিনাল এলাকার মাঝে শ্যাওলা পড়েছে। আর জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে একটি অসম্পূর্ণ একতলা ভবন।
১৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে কাশিপুর ট্রাক টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, দুই-একটি বাস থাকলেও পুরো টার্মিনাল এলাকা ট্রাকের দখলে। সেখানে নির্মাণ কাজ হচ্ছে না, তেমনি লোকজনও খুব একটা নেই।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল বাশার বলেন, সদ্য সাবেক সিটি মেয়রের শেষ সময়ে চলমান সড়ক ও ড্রেনের কাজগুলোর মতো কাশিপুর ট্রাক টার্মিনালের জায়গায় বাস টার্মিনাল স্থানান্তরের কাজ বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার যে পর্যন্ত কাজ করেছে, সে পর্যন্ত বিল দিয়ে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
নির্মাণকাজ অসমাপ্ত রেখে কী পরিমাণ অর্থ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়ে গেছে, তার সঠিক পরিমাণ জানাতে না পারলেও কোটি টাকার বেশি বিল নেওয়া হয়েছে দাবি করে প্রকৌশলী আবুল বাশার আরও বলেন, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ এলাকা থেকে আপাতত স্থানান্তর করা হচ্ছে না। যদি স্থানান্তর না-ই করা হয়, তবে এতে রাষ্ট্র ও জনগণের বিরাট অর্থের অপচয় হলো কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সদ্য সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নির্দেশে ট্রাক টার্মিনালে বাস টার্মিনাল স্থানান্তরের লক্ষ্যে নির্মাণকাজ দুটি ভাগে শুরু হয়েছিলো। এখানে প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষে নির্মাণকাজের মান দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিলো না।
বাস মালিক সমিতির সাধারণ সদস্যরা জানিয়েছেন, কাশিপুরে বাস টার্মিনাল নেওয়ার বিষয়ে সাধারণ বাস মালিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের চরম আপত্তির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন বাস মালিক সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়রের ঘনিষ্টজন কিশোর কুমার দে। কিন্তু ২০২২ সালে বাস টার্মিনালের নির্মাণ কাজের সময় বিভিন্ন লাইভে মেয়রের সাথে ওই কাজ তদারকিতে তাদের দেখা গেছে। এখন মেয়র বদলের পর থেকেই তারা ভিন্ন রূপ ধারণ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নতুন সিটি মেয়র হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের একদিন আগে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় নগরীর দুটি বাস টার্মিনালের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বলেছেন, এখানকার অব্যবস্থাপনা নিয়ে ভাবা যায় না। স্যানিটেশন, পার্কিং ব্যবস্থা নেই। বিল্ডিং ভেঙে পড়ছে। এখানকার উন্নতি দ্রুতই করতে চাই। তবে সামনে জাতীয় নির্বাচনের কারণে কিছু সময়ের জন্য সমস্যা হতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available