মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: কৃষিতে সব কাজই হচ্ছে এখন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে। জমি তৈরি থেকে শুরু করে বীজতলা প্রস্তুত, ধানের চারা রোপন, সার-কীটনাশক স্প্রে, কাটা, ঝাড়াই-মাড়াই এখন সবই হচ্ছে যন্ত্রে। বেড়েছে কৃষি যন্ত্রের ব্যবহার, বদলে যাচ্ছে আবহমান গ্রাম বাংলার কৃষির দৃশ্যপট। আদি কৃষি পরিণত হচ্ছে আধুনিক কৃষিতে।
এখন কৃষি জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই, শুকানো সবই হচ্ছে যন্ত্রের ছোয়ায়। এ সুবাদে দেশের কৃষি প্রবেশ করেছে যান্ত্রিক যুগে, ফসল উৎপাদনের ব্যয় যেমন কমেছে, তেমনি ফসল ঘরে তোলা যাচ্ছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই। এতে ফসলের ক্ষতি কম হচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাচ্ছে ফসল। সংগ্রহের পর অপচয় হ্রাস পাওয়ায় বেশি ফসল পাচ্ছে কৃষক। উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ায় কৃষকের লাভের পরিমাণও বেড়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সংশ্লিষ্টরা ।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে ঘণ্টায় আড়াই বিঘা জমিতে ধান রোপণ করা যায়। এতে শ্রমিক, সময় ও অর্থের সাশ্রয় হয়। চারা রোপণে যন্ত্রটি ব্যবহার করলে রোপণ খরচ ৫০ থেকে ৭৫ ভাগ পর্যন্ত কমানো সম্ভব বলে জানা গেছে। আবার স্বল্প শ্রমিকেই হয়ে যাচ্ছে ধান কাটা ও মাড়াই। কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার দিয়ে ঘণ্টায় ৪ বিঘা জমির ধান কাটা যাচ্ছে। বীজ থেকে শুরু করে মাড়াই পযর্ন্ত যান্ত্রিকভাবে হচ্ছে প্রায় সবকিছু ।
পিরোজপুর গ্রামের মুদির দোকানদার আরিফুল ইসলাম (২৫) জানান, তিনি একদম ছোট বেলায় গরুর গাড়ি, গরু দিয়ে হাল চাষ করতে দেখেছেন। এখন আর তাদের এলাকায় গরু দিয়ে হালচাষ করতে দেখা যায় না। এখন গরুর গাড়ি, মহিষের গাড়ি নেই বরং হালচাষ হচ্ছে মেশিনে।
এছাক আলী (৪৮) জানান, আগে জমি প্রস্তুত থেকে রোপণ পর্যন্ত লাগতো দীর্ঘ সময়। আবার শ্রমিক সংকটে ধান কাটা নিয়েও বিপাকে পড়তো কৃষকরা। সময়ের ব্যবধানে গত কয়েক বছরে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ায় কৃষকদের সেই কষ্ট লাঘব হতে চলেছে। এখন আর শ্রমিকদের অপেক্ষায় দিন গুণতে হয় না কৃষকদের। কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের ফলে স্বল্প সময়েই কয়েক বিঘা জমি চাষাবাদ করা যাচ্ছে।
কৃষক জালাল উদ্দীন (৩০) জানান, তাদের এলাকায় বিভিন্ন গাছের গোড়া বিশেষ করে কলা ও আনারস গাছের গোড়া থাকায় জমিতে গরুর লাঙ্গল দিয়ে চাষবাদ করা সম্ভব হতো না, সেখানে এখন ট্রাক্টর দিয়ে অল্প সময়ে একফুট গভীরে চাষ করে অল্প দিনেই চারা রোপন করা যায়। যার ফলে সময় ও উৎপাদন ব্যয় অনেক কমেছে।
বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকপ্রাপ্ত গারোবাজারের কৃষক ছানোয়ার হোসেন জানান, এক সময় গরু চড়ানোর জন্য জমি ৩-৪ বছর পতিত রাখা হতো, বছরে কেবল এক ফসলই হতো। এখন কৃষি বহুমুখীকরণ ও বানিজ্যিকিকরণের ফলে কৃষিতে ফসলের বৈচিত্র্য এসেছে, কৃষি উৎপাদন বেড়েছে।
তিনি জানান, যান্ত্রিকরণের পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা করা গেলে কৃষি আগের চেয়ে আরও বেশি এগিয়ে যাবে। কীটনাশক ব্যবহারের জন্য ড্রোন ব্যবহার করতে পারলে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত থাকবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, কৃষি যান্ত্রিকরণের ফলে কৃষিতে বিপ্লব এসেছে। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, সময় অপচয় রোধসহ প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকে ফসল রক্ষা পাচ্ছে। বীজ থেকে শুরু করে ঝাড়াই-মাড়াই সবকিছুই হচ্ছে যান্ত্রিকভাবে।
তিনি জানান, সরকার যান্ত্রিকীরণের জন্য সমতল এলাকায় ৫০% ও হাওড় উপকূলীয় এলাকার জন্য ৭০% ভর্তুকি দিচ্ছে। ড্রোনের মাধ্যমে কীটনাশক স্প্রের ব্যবস্থাও দ্রুতই হবে বলে আশা করছেন তিনি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available