নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের শিমের হাট নামে পরিচিত চকআতিতা। এ হাটে প্রতিদিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে শিম বেচাকেনা। প্রতিদিন ২ লক্ষাধিক টাকার শিম বিক্রি হয় এই হাটে।
স্থানীয় চাষিদের সুবিধার জন্য তাদের উৎপাদিত শিম বিক্রির জন্য গত তিন বছর ধরে এ হাট বসানো হচ্ছে।
ব্যবসায়িদের হাত ধরে চকআতিতা হাট থেকে শিম চলে যায় ঢাকা, ফেনী ও দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। ৩ ঘণ্টার হাটে প্রতিদিন বিক্রি হয় দুই লক্ষাধিক টাকার শিম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় ৬ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের শাকসবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৭৫০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগের আশা, এবার অন্তত ৮ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন শিম উৎপাদন হবে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৩১ কোটি টাকা।
সদর উপজেলার বর্ষাইল ও কীত্তিপুর ইউনিয়নে শিম চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। বর্ষাইল ইউনিয়নে চকআতিতা গ্রামের এ বাজারটি পুরোনো। শিম চাষিদের সুবিধার জন্য গত তিন বছর ধরে এখানে শিমের মৌসুমি হাট বসানো হয়। শিমের মৌসুমে (প্রায় ৩ মাস) প্রতিদিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বেচাকেনা চলে। এ হাটটি এখন শিমের হাট নামেই পরিচিত পেয়েছে।
চকআতিতা হাটে প্রকারভেদে প্রতিকেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা। এ হাটে প্রতিদিন প্রায় ২০০ মণ শিম সরবরাহ হচ্ছে।
অনন্তপুর গ্রামের শিম চাষি সোহান হোসেন বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় গাছে ফুল আসলেও শিম আসতে দেরি হয়েছে। তবে সম্প্রতি হালকা শীতের আমেজ পড়ায় গাছে শিম আসতে শুরু করেছে।
৫ মাস মেয়াদের শিমের আবাদে বিঘাপ্রতি খরচ হয় প্রায় ৪০-৪৫ হাজার টাকা, যা থেকে বিক্রি হয় লক্ষাধিক টাকার শিম।
শুকুর চাঁদপুর গ্রামের চাশি বাছের আলী বলেন, এবার শিমে পোকর উপদ্রব হয়েছে। ২-৩ দিন পর পর কীটনাশক প্রয়োগ করতে হচ্ছে। বিঘাপ্রতি ১২-১৪ হাজার টাকা কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। লাভের একটি অংশ চলে যায় কীটনাশক প্রয়োগে। মৌসুমের শুরুতে এই শিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি ধরে, এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা ধরে।
একই গ্রামের চাশি হানিফ মন্ডল বলেন, ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেটের কারণে অনেক সময় আমরা দাম ঠিকমতো পাই না। হাটে কম পরিমাণ শিম আসলে দাম ভাল পাওয়া যায়। আর শিমের পরিমাণ বেশি হলে দাম কম হয়। ব্যবসায়ীরা যে দামে বলে সে দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হতে হয়। ফেরত নিয়ে গেলে তো নষ্ট হয়ে যাবে। এছাড়া ৪০ কেজির পরিবর্তে ৪২ কেজিতে মণ হিসেবে বিক্রি করতে হচ্ছে।
শিম ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, এ এলাকায় প্রচুর শিমের আবাদ হয়। কৃষকদের সুবিধার জন্য গত তিন বছর আগে চকআতিতা বাজারে শিম মৌসুমে তিনমাস প্রচুর শিম বেচাকেনা হয়। এ হাটটি শিমের হাটের জন্য অন্যতম। এ হাট থেকে শিম কিনে ঢাকা, ফেনী ও দিনাজপুরসহ কয়েকটি জেলায় সরবরাহ করা হয়। শিম সরবরাহের পর শুকিয়ে গিয়ে ওজনে কমে যায় বলে চাষিদের কাছ থেকে ৪২ কেজিমে মণ হিসেবে কিনতে হয়।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি ও তাপমাত্রার কারণে শিমের কিছুটা সমস্যা হলেও এখন আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। শিমের উৎপাদন ভালো হওয়ার পাশাপাশি চাষিরাও লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available