রংপুর ব্যুরো: চিকিৎসা সেবায় বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুনামের সাথে সেবা দিয়ে যাচ্ছে বৃহত্তম রংপুরের জনসাধারণকে। সুনামের কারণেই রংপুর বিভাগ ছাড়াও দূরদূরান্ত থেকে স্বজনরা রোগী নিয়ে আসেন এই হাসপাতালে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবার মান ক্রমেই নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। অপরিছন্নতা এবং দালালদের দৌরাত্ম্যের কারণে চিকিৎসা সেবার মান মুখ থুবড়ে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগী ও স্বজনরা।
৩০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সরেজমিনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে রোগী ও স্বজনরা জানান, দুর্নীতি ও অনিয়ম ছড়িয়ে পড়েছে হাসপাতালের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। হাসপাতালের গেটে ঢোকার আগে গুনতে হয় টাকা। রোগীকে ভর্তি করার আগে ঘিরে ফেলে দালাল চক্র, ভর্তি হয়ে ট্রলিতে করে ওয়ার্ডে রোগী নিয়ে এলে সেখানেও গুনতে হয় টাকা। ভর্তি রোগীকে ডাক্তার দেখতে না এসে পাঠানো হয় সহকারী সেবিকাদের কাছে।
স্বজনরা আরও জননান, টাকা নেয়ার নিয়ম না থাকলেও সরকারি স্যালাইন পুশ করিয়ে নিচ্ছে এক হাজার টাকা। যদিও স্যালাইনের গায়ে লেখা ক্রয়-বিক্রয় দণ্ডনীয় অপরাধ। হাসপাতাল থেকে শুধু গ্যাসের ঔষধ পাওয়া যায়। বাকি সব ওষুধ কিনতে হয় বাইর থেকে। এসব হয়রানির শিকার থেকে রেহাই পাচ্ছে না কেউ।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আাসা মোহসিনা ও তাসলিমা আখতার জানান, আমরা ভর্তি হওয়ার পর ট্রলিতে করে বেডে নিয়ে আসে, সেখানেও টাকা নিচ্ছে। বেড না থাকায় ফ্লোরে শোয়ানো হয়েছে। পরে সরকারি স্যালাইন একটি রোগীর শরীরে দিয়ে এক হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু স্যালাইনের গায়ে লেখা ক্রয়-বিক্রয় দণ্ডনীয় অপরাধ। পরে আমরা একই স্যালাইন দোকান থেকে কিনে এনেছি মাত্র ৬৫ টাকা দিয়ে। অনেক সময় ডাক্তারকে ডাকলে সাড়া দিচ্ছেন না ডাক্তার। অপেক্ষায় থাকতে হয় ডাক্তারের দরজায়। রোগীকে নিয়ে সব সময় শঙ্কায় থাকেন স্বজনরা।
রোগীর স্বজনরা আরও জানান, সরকারি মেডিকেলে বেড ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। বাইর থেকে ওষুধসহ সব কিছুই কিনে আনতে হয়। অসহায় ও গরিব পরিবারের টাকা না থাকায় পাচ্ছে না সুচিকিৎসা। ওষুধ কেনার সামর্থ্য না থাকায় মেডিকেলের বেডেই দিতে হচ্ছে অনেকের জীবন।
তারা আরও জানান, সরকারিভাবে মনিটরিং না থাকার কারণে হয়রানির শিকার হতে হয় রোগী ও স্বজনদের। সেই সাথে ময়লার স্তূপ হয়ে আছে চারপাশে। অপরিছন্নতার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন রোগীর সাথে স্বজনরাও।
২০২৩ সালের শুরুর দিকে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক তার নিজের মা-কে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসে হয়রানির শিকার হওয়ায় সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সে সময় ১১ জন কর্মচারীকে বহিষ্কার করা হলেও অনিয়ম আর হয়রানির শিকার থেমে নেই। মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে এসে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে ফিরছেন বাড়িতে।
দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবার আলী জানান, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিন্ডিকেট ভাংতে হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে হস্তক্ষেপ করতে হবে। কাউকে ছাড় দেয়া চলবে না। নিয়মিতভাবে মনিটরিং করা হলে দালালদের দৌরাত্ম্য থাকবে না। আর ডাক্তাররা যদি রোগীর সেবায় আরো তৎপরতা বাড়ায় তাহলে কেউ কোন অভিযোগ করতে পারবে না বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আ.ম.আখতারুজ্জামান বলেন, ডাক্তারের মা-কে ভর্তি করাতে এসে একটু সমস্যা হয়েছিলো। বর্তমানে আমাদের আর কোনো সমস্যা নেই। আমাদের ডাক্তার-নার্সরা সব সময় রোগীদের সেবা করে চলছেন। কারো সাথে কেউ কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেন যেন না করে সে বিষয়ে আমরা সতর্ক করি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available