মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: ২০১৬ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে রাবেয়া নাসরিন যোগ দিয়েছিলেন সুবিধা বঞ্চিত অবহেলিত শিশুদের একটি পাঠশালায়। আউশনারা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়। ছাত্রছাত্রীদের কেউ অন্ধ, কেউ বধির, কেউ বিকলাঙ্,। কেউ শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী। কারো নাক দিয়ে পানি ঝরছে, কারো চোখে ময়লা, কারো লালা ঝরছে অবিরাম।
এ বিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবে রাবেয়া নাসরিন রুমি যোগদানের পর থেকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এই শিশুদের নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। কীভাবে ওদের জন্য ভালো কিছু করা যায়। সহকর্মীদের নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক, অভিভাবক এবং এলাকাবাসীকে নিয়ে করেন কর্মপরিকল্পনা। সেই কর্মপরিকল্পনা নিয়েই এগিয়ে যেতে থাকেন।
এ প্রধান শিক্ষক রাবেয়া নাসরিন রুমির সেই প্রচেষ্টা বৃথা যায়নি, ২০২৩ সালে উপজেলা ও টাঙ্গাইল জেলা পর্যায়ে সমাজ সেবায় বিশেষ অবদান রাখায় পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা। ৯ ডিসেম্বর শনিবার মধুপুর উপজেলা ও টাঙ্গাইল জেলায় বেগম রোকেয়া দিবসে শ্রেষ্ঠ জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ শীর্ষক প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা পান। শনিবার সকালে রোকেয়া দিবসে টাঙ্গাইল জেলা প্রসাশক কায়ছারুল ইসলাম এ সম্মাননা প্রদান করেন। তার জন্ম মধুপুর উপজেলার কালামাঝি গ্রামে। তিনি আব্দুর রশিদ মন্ডল ও আনোয়ারা বেগমের কনিষ্ঠ সন্তান।
রাবেয়া নাসরিন রুমি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার আলোকদিয়া ইউনিয়নের কালামাঝি গ্রামের এক সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম আঃরশিদ মন্ডল এবং মাতা আনোয়ারা বেগমের কনিষ্ঠ সন্তান তিনি। তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ও বিশেষ শিক্ষা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ থেকে বিএসএড ডিগ্রি পাশ করেন। বর্তমানে এমএসএড কোর্সে অধ্যয়নরত।
জানা যায়, ২০১৬ সালে সুইড বাংলাদেশ উদ্যোগে সুবিধা বঞ্চিত অবহেলিত বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় আউশনারা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়। সরকারিভাবে এমপিও স্বীকৃতি না থাকায় স্কুল পরিচালনা করার জন্য অর্থিক যোগান তিনি নিজে যতটুকু পেরেছেন দিয়েছেন। বাকিটা সমাজের বিত্তশালী, ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছুটেছেন হন্যে হয়ে। ছাত্রছাত্রীদের ড্রেস, শিক্ষা উপকরণ, দুপুরের খাবার ইত্যাদি ব্যয় মেটাতে স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়ে দিনরাত নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সহযোগিতায় ১২০ জন প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীর ভাতার ব্যবস্থা, উপজেলা প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও শিশুদের জন্য সহায়ক উপকরণ, বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণ, ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল ক্যাম্প, শীতবস্ত্র বিতরণ, কর্মমুখী শিক্ষা, বিবাহ ও কর্মসংস্থানে সুযোগ তৈরির মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসনের মতো নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে তিনি সমাজের সর্বস্তরের মানুষদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সমাজ সেবা কর্মকতা, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন এনজিও, সমাজকর্মীসহ সমাজের সচেতন মানুষদের তার কাজের সাথে সম্পৃক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
স্কুলটি পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা এবং সংস্কৃতি চর্চায়ও সবার নজরকাড়ে। ২০১৮ সালে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক স্পেশাল অলিম্পিকে বিদ্যালয়ের দুজন ছাত্র একাধিক ক্যটাগরিতে স্বর্ণ পদকসহ আরও অন্যান্য পদক লাভ করে।
রাবেয়া নাসরিন রুমি জানান, দীর্ঘ ৮ বছর যাবত বিনা বেতনে আসহায় প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক শিশুদের মাতৃস্নেহে পড়া লেখার পাশাপাশি সমাজের স্বাভাবিক শিশুদের জীবনমান পরিচালনার কৌশলরপ্ত করতে তিনি প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় সমন্বয় পরিষদ টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকসহ ডিজঅ্যাবল পিপলস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি সারা দেশে ১৭শ’র অধিক বিশেষ শিক্ষা বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি ও এমপিও দাবিতে জোরালো ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available