রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : নাদিয়ারা তিন বোন। তিনজনের বড় নাদিয়া। পরিবারের স্বপ্ন ছিলো পড়ালেখা করে নাদিয়া চাকরি করবে, হবে ফার্মাসিস্ট। পড়ালেখার দায়িত্ব নেবে ছোট দুই বোনেরও। বাবা-মায়ের অবর্তমানে সে হবে ওই দুই বোনের অভিভাবক, তাই মেয়েদের ঘিরেই বাবার সব স্বপ্ন। কিন্তু এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিমিষেই শেষ হয়ে গেল সব, হলো স্বপ্নের অবসান।
গত রোববার দুপুর পৌনে ১ টায় রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকার যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে ভিক্টর পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সাথে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেল আরোহী শিক্ষার্থী নাদিয়া আক্তারের মৃত্যু হয়। সে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মাসিস্ট বিভাগের ছাত্রী ছিল। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্বনেতা গ্রামে। ২০ বছর ধরে তারা নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় বসবাস করতো।
এদিকে নাদিয়া’র শোকের ছায়ায় ভারি হয়ে উঠেছে গ্রামের বাড়ি। মা পারভীন আক্তারের কান্নার আহাজারী যেন থামছেই না। ক্ষণে ক্ষণে মেয়ের কবরের দিকে ছুঁটে যান সে। কিছুক্ষণ পরপর হয়ে পড়েন অজ্ঞান। বিলাপের আহাজারিতে বলছেন, ‘ওমা মাটির কবরে কীভাবে থাকবা। গতকালও আমার কাছে ফোনে বললো মা আমার আজ ক্লাস নাই বই কিনতে বের হবো। এ কেমন বই কিনতে গেলা মা।’
নিহত নাদিয়া’র বাবা জাহাঙ্গীর মৃধা বলেন, তিন মেয়ের মধ্যে ও সবার বড় ছিলো নাদিয়া। আমার কোন ছেলে নাই। মেয়েরাই আমার সব। ওদের মধ্যেই ছেলের স্বপ্ন বুনতাম। মেয়েটা স্ট্যাবলিস্ট (প্রতিষ্ঠিত) হবে। ছোট দুই বোনের দেখা শুনা ওই করবে এমন আশা ছিলো আমাদের। নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে রাঙ্গামাটি সরকারী কলেজে ভর্তির সুযোগ হয়েছিল। দূরের কলেজে ভর্তি করিনি। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্দানের ফার্মেসি বিভাগে ভর্তি করাই। নারায়ণগঞ্জ থেকে ভার্সিটিতে আসা যাওয়া সহজ করতে গত সপ্তাহে উত্তরার আসকোনা এলাকার একটি ছাত্রী নিবাসে ওঠে। গতকাল (রোববার) যমুনা ফিউচার পার্কের কাছেই বন্ধুর মটরসাইকেল যোগে বই কিনতে গেলে ভিক্টর পরিবহনের একটি বাসের সাথে ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলে মারা গেছে মা আমার। আমার পিষে গেল মাটিতে।
চোখের কোনে জমে থাকা ছল ছল লোনা জলে নাতনীর কবরের পাশে দাড়িয়ে আশি বছর বৃদ্ধ দাদা ধলু মৃধা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘অত্যান্ত ভালো মেয়ে ছিলো। কলেজে পড়তো ঠিকই, মাথায় হিজাব পরে ক্লাস করতো। সবার সাথে ভালো আচরণ করতো। আমি মাঝে মধ্যে ঢাকা গেলে আমাকে গ্রামে আসতে দিতো চাইতো না। বলতো দাদা তুমি এখানেই থেকে যাও। গ্রামের বাড়িতে দাদি বুড়ো মানুষ তোমার ঠিকমত খেয়াল রাখতে পারে না। আবার গ্রামে এলেই প্রায়ই ফোন করে বলতে দাদা তুমি ঢাকায় চলে এসো। আমাদের সাথে থাকো দাদাভাই ঢাকা সবাই আছে শুধু তুমিই নাই।’
নাদিয়ার মামা বেল্লাল হোসাইন বলেন, ‘ভাগ্নিকে নিয়া বোন এবং দুলাভাইর অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সব শেষ। এখন শুধুই স্মৃতি।’
পরিবারের এখন দাবি, ঘাতক চালকসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান তারা।
রোববার রাতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জের তল্লা ছোট মসজিদের মাঠে নামাজে জানাজা সম্পন্ন করে গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব নেতা গ্রামের নিজ বাড়ীর পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা নাদিয়াকে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available