নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের শিমভান্ডার খ্যাত নবীগঞ্জের পাহাড়ী এলাকার মহাসড়কের দু’পাশের বিস্তীর্ণ মাঠে শিমের চাষ করা হয়। যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই সাদা-বেগুনী রংয়ের শিম ফুলে প্রকৃতি যেন মিলে মিশে একাকার। শীত মৌসুমের শুরুতে মনোরম শিমের ফুলে ভরে উঠেছে মাঠ-ঘাট, খাল-বিল ও ঘরের চাল, পুকুরের পাড়।
শিম কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে দিগাম্বর বাজারের গড়ে উঠেছে পাইকারী শিমের হাট। এখান থেকে মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বাইরের অনেক পাইকারও শিম কিনে নিয়ে যান। প্রতিদিন সকালে ট্রাকে করে শিম পৌঁছে যায় দেশের বিভিন্ন জায়গায়। লাভ বেশি হওয়ায় ধান ছেড়ে শিম চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের।
গেল ৫ বছরে হবিগঞ্জ জেলায় শিম চাষ বেড়েছে দ্বিগুণ। শিম চাষকে বাণিজ্যিক আকারে নিয়ে গেছেন এখানকার চাষীরা। শিম মূলত শীতকালীন সবজি। গ্রীষ্মেও ভালো ফলন হয়। নবীগঞ্জে প্রতি বারের মতো এবারও শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। চারিদিকে শুধু শিম আর শিম। ক্ষেত থেকে কয়েক দফা শিম তোলা হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। এখনো ফুল আসছে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত প্রায় একই রকম ফলন হবে। শিমের ভালো বাজার মূল্য পেয়ে খুশি কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জে প্রায় ৬শ’ হেক্টর জমিতে এবার শিমের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে জমিতে উৎপাদন খরচ ২-৩ লাখ টাক হলেও হেক্টর প্রতি প্রায় ৭-৮ লক্ষ টাকার শিম উৎপাদন হচ্ছে। এখানে লাল ফুল জাতের শিমের বেশি ফলন হয়ে থাকে। তাই প্রায় ৯৫ শতাংশ জমিতেই লাল ফুলের শিম আবাদ করা হয়েছে।
বর্তমানে বাজারে শিমের বেশ ভালো দাম রয়েছে। মাস খানেক আগে শিম প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। এখন তা নেমেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
শিমের উন্নত জাতের উদ্ভাবনের কারণে, এখন কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই শিম চাষ করা যাচ্ছে। তাই সকলে শিম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আধুনিক প্রশিক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিয়মিত তদারকি থাকলে কৃষকরা গোটা নবীগঞ্জ উপজেলার অর্থনীতিকে আরও মজবুত করতে সক্ষম হবে। একই সঙ্গে নিজেদেরও আর্থসামাজিক মর্যাদাও বাড়বে। কৃষি কাজে আগ্রহ বাড়াতে সার-বীজসহ সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে কৃষি মন্ত্রণালয়কে আরো আন্তরিক হওয়ার দাবি কৃষকদের।
উপজেলার ১৩নং পানিউমদা ইউনিয়নের কৃষক রেজাউল হক জানান, ছোটকাল দেখেছি, শিম লাগানো হতো ভিটে বাড়িতে। জমিতে হতো ধান। এখন চাহিদা বেড়েছে, ফলনও বেড়েছে। তাই শিম চাষ করতে জমি, ভিটা, রাস্তাঘাট, খাল কিছুই বাদ নেই। যার যেখানে জমি ফাঁকা আছে সেখানেই শিম গাছ লাগিয়েছে।
কৃষক মো. আয়াছ মিয়ার স্ত্রী বলেন, এবার শিমের ভালো ফলন হয়েছে। স্বামীর সাথে শিম উত্তলন ও পরিচর্যা কাজ করছি।
একই ইউনিয়নের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, শিম চাষ করে আমরা লাভবান হওয়ার আশা করছি। যেভাবে ফলন এসেছে তাতে সকল খরচ উঠার পরেও ২-৩ লাখ টাকার মতো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ ফজলুল হক মনির বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শিম চাষ খুব ভালো হয়েছে। কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। শিম উৎপাদন করতে কম পরিশ্রম ও কম খরচে বেশি লাভবান হওয়া যায়। উপজেলা কৃষি অফিস শিম চাষিদের বিভিন্ন সময় এসব ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকে।
তিনি বলেন, সারা দেশেই হবিগঞ্জের শিমের কদর রয়েছে। কৃষকরা যাতে শিমের ন্যায্য মূল্য পায়, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছি।
কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশে পঞ্চাশটিরও বেশি শিমের জাত আছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বাইনতারা, হাতিকান, চ্যাপ্টা শিম, ধলা শিম, পুটি শিম, বারি শিম ১, বারি শিম ২, বিইউপিএফ শিম ৩, ইপসা শিম ১, ইপসা শিম আইরেট ইত্যাদি আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাত। এর প্রায় সবগুলোই হবিগঞ্জে আবাদ হয়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available