গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি : নাটোরের গুরুদাসপুরে এক কলেজ ছাত্রীর সাথে প্রেমের পরে স্ত্রীকে অত্যাচার ও নির্যাতনের অভিযোগে ওই কলেজের চতুর্থ শ্রেণির পিয়ন শাহাদত হোসেনকে (৩৫) কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত।
স্ত্রী সীমা খাতুন (৩০) বাদী হয়ে স্বামী শাহাদত হোসেনের বিরুদ্ধে করা মামলায় জামিন নিতে গিয়ে ২৩ জানুয়ারি সোমবার সকালে আটক হয়েছেন অভিযুক্ত পিয়ন।
শাহাদত হোসেন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার যোগেন্দ্রনগর এলাকার মো. রবিউল করিমের সন্তান এবং রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (পিয়ন)।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রোজী মোজ্জামেল মহিলা কলেজের ৪ জন ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের এক সহপাঠির সাথে পিয়ন শাহাদত হোসেন প্রেম করতো। দায়িত্ব পালনের সময় অন্যান্য ছাত্রীদের দিকে কুনজর দিতেন তিনি। শাহাদত হোসেনের উপস্থিতিতে আমরা কলেজে নিজেদের অনিরাপদ মনে করছি।’
শাহদত হোসেনের স্ত্রী সিমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার মামা রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজের সমাজবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান মাজেম আলী মলিনের সহযোগিতায় বিয়ের পরে ওই কলেজে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (পিয়ন) পদে আমার স্বামীর চাকুরী হয়। বিয়ের পর থেকে থেকেই যৌতুকের জন্য শাহাদত আমাকে নানাভাবে নির্যাতন, নিপীড়ন ও অত্যাচার করেছে। বেতনভুক্ত হবার পরে কর্তব্য পালনরত অবস্থায় ওই কলেজের এক ছাত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে আমার স্বামীর। আমি নিষেধ করলে আমাকে মারধর করতো। এক পর্যায়ে দেড়শ টাকার স্টেম্পে ওই মেয়েকে বিয়ে করার জন্য স্বাক্ষর চান। আমি স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করলে আমার উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। পরে নির্যাতনের ভয়ে আমার বাবার বাড়িতে চলে আসি।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে আমি রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করি। পরে ৩১ অক্টোবর ২০২২ তারিখে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে বাদী হয়ে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা করি। নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় আমার মামার (রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজের শিক্ষক) বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মোবাইল ছিনতাইয়ের মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা করে আমার স্বামী শাহাদত হোসেন।’
মামলা সুত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে বিয়ের পরে যৌতুকের জন্য স্ত্রী সীমা খাতুনকে শারিরিক ও মানুষিক নির্যাতন করত স্বামী শাহাদত হোসেন। যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানালে ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন, শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টা করে, বস্তায় ভরে গুম করার চেষ্টা করলে সীমার চিৎকারে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গুরুদাসপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে কিছুটা সুস্থ্য হলে থানায় মামলা করতে গেলে না নেওয়ায় আদালতে মামলা করে সীমা খাতুন।
রোজী মোজ্জাম্মেল কলেজ সুত্রে জানা যায়, পিয়ন শাহাদতের স্ত্রী সীমা খাতুনের অভিযোগে কলেজ কর্তৃপক্ষ সাবেক অধ্যক্ষ রসায়ন বিভাগের শিক্ষক মায়া রানী চক্রবর্তীকে আহবায়ক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটি ভুক্তভোগী স্ত্রী সিমা খাতুন, আবাসিক ছাত্রী, চতুর্থ শেণির কর্মরত পিয়ন, শিক্ষক, অভিযুক্ত শাহাদত হোসেনসহ এলাকাবাসীর স্বাক্ষর গ্রহণ করেন। শেষে পিয়ন শাহাদত হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পান। পিয়ন শাহাদত নিজেও ওই ছাত্রীর সাথে প্রেমের কথা স্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাহাতাব উদ্দিন বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী অত্র কলেজের পিয়ন মো. শাহাদত হোসেনকে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সাথে বৈঠক করে তাকে ২২ দিনের বাধ্যতামুলক ছুটি দেওয়া হয়। পরে বিধি মোতাবেক তাকে দুটি শোকজ করা হয়। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে শাহাদত হোসেনের পরিবারের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে গুরুদাসপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলাল শেখ বলেন, ‘মহিলা কলেজের সুনাম রক্ষায় পিয়ন শাহাদত হোসেনের যথাযত বিচার হওয়া দরকার। যেন অন্য কেউ এ ধরণের অপকর্মের সুযোগ না পায়।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available