ঈদগাঁও (কক্সবাজার) প্রতিনিধি: কক্সবাজারে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে চারটি আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও প্রধান নির্বাচনী এজেন্টদের সঙ্গে ‘আচরণ বিধিমালা ও প্রতিপালন’ বিষয় নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা এই মতবিনিময় সভা করেন। এ সময় তিনি প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রচারণায় রোহিঙ্গা ও অপরাধীদের ব্যবহার করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযানও চলছে।’
জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘আপনারা জনগণকে নেতৃত্বে দেন, তাই আপনারা সমাজের আইডল। আপনাদের কাছে মানুষ সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ আশা করে। তাই প্রচারণায় একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত।
এসময় উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, জেলা নির্বাচন অফিসার, মো. ইয়ামিন হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, তাপ্তি চাকমা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি ), জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটগণ, কক্সবাজার ৪টি আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীগণ।
কক্সবাজারের ৪টি সংসদীয় আসনে প্রতীক পেয়ে প্রচারযুদ্ধে রয়েছেন ২৬ প্রার্থী। আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে প্রচার-প্রচারণা। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বহুল কাঙ্ক্ষিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
টানা আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা মতবিনিময় সভায় এক প্রার্থী-অপর প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নানা অভিযোগ করে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। নির্বাচনে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের হুমকি, কালো টাকা বিতরণ, সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাসহ নানা অভিযোগ করেন প্রার্থীরা। সভায় কয়েকজন প্রার্থী তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করেন।
সভায় কক্সবাজার-১ আসনে বর্তমান এমপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলমের বিরুদ্ধে হাতঘড়ি মার্কার প্রার্থী কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম তার সমর্থক ও দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি হুমকি ধমকির অভিযোগ করেন।
অন্যদিকে ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম এমপি বলেন, চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদী একজন অস্ত্রধারী ও বিভিন্ন মামলার আসামি। তার নেতৃত্বে আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে আমার কর্মী সমর্থকদের হুমকি ও হয়রানি করা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সত্য না। তা যাচাই-বাছাই করার অনুরোধ জানান তিনি।
কক্সবাজার-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ‘প্রচারণায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শরীফ বাদশা আমার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কুৎসা রচনা করছে। তার অনুসারীরা ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে। নির্বাচনী কার্যালয় ও শাপলাপুরে ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ বাদশা জানালেন, নির্বাচনী প্রচারণায় নৌকার অনুসারীরা তাকে পদে পদে বাধা দিচ্ছে। তিনি বলেন, নৌকার পক্ষের ধারাবাহিক প্রতিবন্ধকতা নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছে।
কক্সবাজার-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজান সাঈদ ও নৌকার প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল একে অপরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন। এসময় তর্কে জড়িয়ে পড়েন দুই প্রার্থী, জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা পরে তাদের থামিয়ে দেন।
কক্সবাজার-৪ আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল বশর বলেন, ‘উখিয়া-টেকনাফে বদির স্ত্রীকে কোনো সমস্যায় পাঁচ বছর মানুষ কাছে পায়নি। কীভাবে তিনি পাঁচ বছর পর আবার মানুষের সামনে আসেন। মানুষ এখন মাদকের কলঙ্ক থেকে মুক্তি চায়, অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসতে চায়। তাই তারা যতোই বাধা দিক না কেন, আগামী ৭ জানুয়ারি মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঈগল প্রতীকে ভোট দেবে। কিন্তু সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির বিরুদ্ধে আমার সমর্থক ও দলীয় নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি ও হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। বিশেষ করে বদি বিভিন্ন এলাকায় কালো টাকা বিলি করে ভোটারদের বিভ্রান্ত করছে। এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল বশরের বক্তব্যে একমত পোষণ করে সাংসদ শাহীন আক্তারের স্বামী আবদুর রহমান বদি বলেন, চিলের মাংস মানুষ খায় না, চিলে চিলের মাংস খায়। সুতরাং আমি ন ডরাই।
নির্বাচনের প্রার্থীরা আসন্ন নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের সংস্কারের কথা তুলে ধরেন। নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের আশ্বাসন প্রদান করেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available