ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: সরিষা খেতের পাশে মৌবাক্স স্থাপনের মাধ্যমে মধু সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন উত্তরের জেলা জয়পুরহাটের ক্ষেতলালের মৌ-চাষীরা। উপজেলার তুলসীগঙ্গা ইউনিয়নের বিলের ঘাট টু জামালগঞ্জ চারমাথা রাস্তার পাশে এ চিত্র দেখা যায়।
জানা গেছে, মধু সেবন মানব দেহের জন্য বেশ উপকারী ও ঔষধী গুনাগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা। তারমধ্যে নির্ভেজাল মধু প্রেমীর সংখ্যা আরও বেশি। এ ছাড়াও সরিষার পরাগায়নের জন্য মৌমাছি বড় ধরনের নিয়ামক হিসাবে কাজ করে। তাইতো প্রতি বছর এই সময়ে চাষীরা সরিষা থেকে মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করেন।
ক্ষেতলাল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, গত বছর এ উপজেলায় ১ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিলো। তবে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে কৃষকের বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ, রাজস্ব প্রদর্শনী, ফলোআপ কার্যক্রমসহ অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষককে সহায়তা ও উদ্বুদ্ধকরণের ফলে এ বছর চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। যা গতবছরের তুলনায় অনেকটা বেশি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার তুলসীগঙ্গা ইউনিয়নের বিলের ঘাট টু জামালগঞ্জ চারমাথা রাস্তার দুপাশে সরিষা চাষে পুরো মাঠ যেন ঢেকে আছে সুন্দর এক হলুদের চাদরে। এমন চাদরে ঘেরা প্রকৃতিতে ফুলের গন্ধ আর মৌমাছির গুঞ্জন ছড়াচ্ছে মাঠে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন ঢাকার নারায়ণগঞ্জ থেকে আগত খোরশেদ এবং জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের শাহানুর নামের দুই মৌ-চাষী।
সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে পোষা মৌমাছির প্রায় ১০০টি বাক্স। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ছয় থেকে সাতটি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়েছে। বাক্সগুলোর ভেতরে দেওয়া হয়েছে একটি করে রাণী মৌমাছি। যাকে ঘিরে আনাগোনা করছে হাজারো পুরুষ মৌমাছি। একটি রাণী মৌমাছির বিপরীতে প্রায় তিন থেকে চার হাজারের মতো পুরুষ মৌমাছি থাকে একেকটি বাক্সে। রাণীর আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করছে মৌমাছিরা। পরে এই চাক থেকেই মধু সংগ্রহ করেছেন মৌ-চাষীরা।
প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেছেন মৌ-চাষীরা। এরপর এসব মধু তারা স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করছেন। মৌ-চাষের মাধ্যমে চাষীরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে দূর হচ্ছে বেকারত্ব।
এ বিষয়ে মৌ-চাষী শাহানুর ইসলাম বলেন, আমি প্রায় ৮-৯ বছর ধরে এই মধু সংগ্রহের কাজ করছি। এ বছর আমার দু’টি সাইটে মধু সংগ্রহের কাজ চলছে। এটি বাদেও জয়পুরহাটের পুরানাপৈল একটি সাইটে মধু সংগ্রহের কাজ করছি। এখানে প্রায় ২০ দিন ধরে এই মধু সংগ্রহ করছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬ মণ মধু সংগ্রহ করতে পেরেছি। এসব মধু ৪০০ টাকা কেজি হিসেবে এখান থেকেই বিক্রি করছি। মধু সংগ্রহ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছি।
ঢাকার নারায়ণগঞ্জ থেকে মধু সংগ্রহ করতে আসা মৌ-চাষী খোরশেদ বলেন, আমরা মধু সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছি। মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ দিয়ে তৈরি প্রায় ১০০টি বাক্স বসিয়েছি। এ সকল বাক্সের ভেতরে কাঠের তৈরি সাতটি ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বানানো বিশেষ কায়দায় লাগানো থাকে এক ধরনের সিট। প্রতিটি বাক্স থেকে ৬-৭ কেজি মধু পাই। গত ২০ দিন ধরে সবগুলো বাক্স মিলে ১৫ থেকে ১৬ মণ মধু সংগ্রহ করেছি। প্রতি কেজি মধু ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। এসব সরিষা ফুলের মধু খাঁটি ও সুস্বাদু হওয়ায় আশপাশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন ভীড় জমাচ্ছে মধু কিনতে।
ক্ষেতলাল উপজেলা কৃষি অফিসার জাহিদুর রহমান বলেন, উপজেলায় এ বছর চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। যা গতবছরের তুলনায় অনেকটা বেশি। সরিষা খেতে মৌমাছির বিচরণ থাকায় ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হয়, ফলে সরিষার ফলনও বেশি হয়।
জয়পুরহাট বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক লিটন চন্দ্র ঘোষ বলেন, চলতি মৌসুমে এ জেলায় ৩০ টন মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে ১০০ কৃষককে পরামর্শ ও উৎসাহিত করছি এবং বিগত দিনে মৌচাষের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। যাতে সরিষা খেতে মৌবাক্স স্থাপনের মাধ্যমে মৌ-চাষ করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available