জাবি প্রতিনিধি: শুক্রবার ১২ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন। প্রতিষ্ঠার পর গৌরব, ঐতিহ্য আর সাফল্যের ৫৩ বছর পার করে ৫৪ বছরে পদার্পণ করলো এই বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট তৎকালীন সরকার এক অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার পূর্ব নাম জাহাঙ্গীরনগরের সঙ্গে মিলিয়ে 'জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়' নামে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গহণ করে। এরপর ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট পাস হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়' রাখা হয়। সে হিসেবে ২০০১ সাল থেকে ১২ জানুয়ারি 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস' হিসেবে পালন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
প্রতিষ্ঠালগ্নে মাত্র ৪টি বিভাগ, ২১ জন শিক্ষক ও ১৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীনে ৩৪ বিভাগ ও চারটি ইনস্টিটিউট মিলিয়ে প্রায় ৭০০ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে সাড়ে ১৪ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন প্রতিষ্ঠানটিতে।
১৯৭০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য নিযুক্ত হন অধ্যাপক মফিজ উদ্দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম। তিনি গত ১৩ সেপ্টেম্বর চার বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান
বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য স্থাপনার মধ্যে রয়েছে- দেশের সবচেয়ে উঁচু শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য সংশপ্তক, ভাষা আন্দোলন স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য অমর একুশ। এছাড়া নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের নামে রয়েছে গ্রিক আদলে তৈরি দৃষ্টিনন্দন মুক্তমঞ্চ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশজুড়ে 'প্রাকৃতিক স্বর্গ' এবং 'সংস্কৃতির রাজধানী' নামে খ্যাত। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে অতিথি পাখির অভয়ারণ্যও বলা হয়। অন্যদিকে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের উদ্যোগে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র ও প্রজাপতি পার্ক স্থাপন করে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবদান দেশ-বিদেশে প্রশংসা লাভ করেছে। গত বছর বিশ্বের দুই শতাংশ গবেষকদের মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে ছয়জন গবেষক স্থান করে নিয়েছেন।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে ছয়টি হলের কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের অধীনে লেকচার থিয়েটার, পরীক্ষার হল, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, নতুন লাইব্রেরি ভবন ও ছাত্রীদের জন্য খেলার মাঠসহ অনেক স্থাপনার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের পরিবহন সংকট অনেকটা দূর হয়েছে।
তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সফলতা ও অর্জনের পাশাপাশি রয়েছে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘ পথচলার প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তি অনেক কম। পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও হলগুলোতে রয়েছে সিটের তীব্র সংকট। এছাড়া হাতেগোনা কয়েকটি বিভাগ ছাড়া বেশিরভাগ বিভাগে মানসম্মত গবেষণা হয় না। অতিথি পাখির অভয়ারণ্য বলা হলেও পরিবেশ দূষণসহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাখি আসছে খুবই কম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি থেকে শুরু করে পরীক্ষা পদ্ধতি ও শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট তৈরি করার সিস্টেম সনাতন পদ্ধতিতে হচ্ছে। ২৯ বছর ধরে নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু)। এছাড়া একাধিক বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে রয়েছে ক্লাসরুম সংকট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টার থেকে পর্যাপ্ত সেবা না পাওয়ার অভিযোগও দীর্ঘদিনের। তবে চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সব সংকট দূর হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
১২ জানুয়ারি শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে চাকরি মেলা, রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, বৃক্ষরোপণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ এবং শিল্পী শফী মন্ডলের একক সঙ্গীতানুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের চাওয়া সমাবর্তন আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি, চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আবাসন ও ক্লাসরুম সংকটও দূর হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট কমানো, গবেষণা ও মেডিক্যাল সেন্টারের সেবা বাড়ানো বিষয়েও আমরা আন্তরিক।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available