ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলা থেকে প্রায় ৭ কিলো মিটার দক্ষিণে রাউত নগর বাজারের পূর্ব পাশে লেহেম্বা এবং হোসেনগাঁও ইউনিয়নের মাঝামাঝিতে কুলিক নদীর উপর সেতু নির্মান কাজ থমকে গেছে। বাঁশের সাকুই হচ্ছে দুই ইউনিয়ন বাসীর পারাপারের একমাত্র উপায়।
নদীর পশ্চিম পাড়ে হোসেনগাঁও ইউনিয়নে রাউত নগর এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এবং রাউত নগর বাজার রয়েছে। কমলমতি শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকিনিয়ে নিত্যদিন নদী উপর বাঁশের সাকুদিয়ে পার হয়ে যায় বিদ্যালয়ে। একই ভাবে কৃষক-কৃষানিরা চাষাবাদ করার সময় গরুর গাড়ী নিয়ে পারাপারে দুর্ভোগে স্বীকার হতে হয়। এছাড়াও হরিপুর উপজেলার মানুষও বাঁসের সাকুদিয়ে পার হয়ে যায় লেহেম্বা ইউনিয়নে। এভাবে প্রায় ৩৬ বছর ধরে কষ্টের শেষ নেই স্থানীয়দের। সেতু নির্মাণের আশায় বছরের পর বছর অপেক্ষার প্রহর গুনছে এলাকাবাসী।
তৎকালিন পানি উন্নয়ণ বোর্ড জনবহুল এলাকার জনসাধারণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ১৯৮৬-৮৭ সালে ১৫০ মিটারের সুইচগেট নির্মাণ করে। ওই বছরেই ভয়াবহ বন্যায় ভেঙ্গে যায় সুইচ গেটটি। কালের স্বাক্ষী হিসেবে নদীর মাঝ খানে দাঁড়িয়ে রয়েছে ৩০-৪০মিটার অবশিষ্ট সুইচগেটের ভাঙ্গা অংশ। তখন থেকে দুই ইউনিয়নের মানুষ চরম দুর্ভোগের মোকাবেলা করে আসছে। এমপি এবং চেয়ারম্যানদের কাছে আবেদন করেও কোনও লাভ হয়নি। তারা শুধু আশার বাণী দিয়েছেন। হয়নি সংস্কার কিংবা নতুন সেতু নির্মাণ। এমনটি বললেন ভুক্তভোগীরা।
এলাকাবাসীর অনেক আবেদনের পর ২২-২০২৩ অর্থ বছরে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩৫ মিটার সেতু এবং ৭০মিটার রাস্তা বরাদ্ধ হয়। ইতোমধ্যেই ঠিকারদার পক্ষ মাটি টেস্ট কাজ শরু করে। অজ্ঞাত কারণে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
ঠিকাদার পক্ষের কেয়ার টেকার আব্দুল হাই বলেন, এলজিইডি এবং ঠিকাদার পক্ষের মধ্যে চলছে ঠেলা ঠেলি। মানুষের মুখে শুনেছি এনিয়ে হাইকোটে নাকি মামলা হয়েছে।
স্থানীয় শামসুল হক বলেন, ১৯৮৭ সাল থেকে অনেকবার মাপামাপি হয়েছে। বিশেষ করে ৪নং লেহেম্বা এবং ৩নং হোসেনগাঁও ইউনিয়নের বাসীন্দারা ভোগান্তীর স্বীকার। দেরিতে হলেও ব্রীজের বরাদ্দ হয়। তার পরও কেরফা লেগে যায়।
তিনি আরও বলেন, এলজিইডি নাকি মাল চাচ্ছে, মাল ছাড়া এই সেতু হবে না। এমনটি নাকি বলেছে ঠিকাদার পক্ষ। সেতুটির অভাবে আমরা প্রায় ৬৫ বছর যাবৎ কষ্ট করে আসছি।
স্থানীয়রা বলেন, স্বাধীনের পর থেকেই নৌকা করে পারাপার হতো এলাকার মানুষ। ১৯৮৬ সালে একটি সুইচগেট নির্মাণ করা হয়। নির্মানের ১ বছরের মাথায় ভেঙ্গে যায়। তার পর থেকে আবার নৌকা করে পারা পার হয় এপার এবং ওপারের জনগণ। আবাদী জমির ফসল ৬-৭ কিলো রাস্তা ঘুরে বাড়ি নিয়ে যায়। দীর্ঘদিন পরে ব্রীজটি বরাদ্দ হলেও শুরু হচ্ছে না নির্মাণ কাজ। ২ বছর যাবৎ ব্রীজের মালা মাল নদীর তীরে পড়ে রয়েছে।
স্থানীয় প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওহাব বলেন, তার চোখের দেখা এ নদীতে ৫ বার নৌকা ডুবি হয়েছে। একাধিক লোক মারা গেছে। বর্ষা কালে ৩ মাস কমলমতী শিক্ষার্থীরা স্কুল, কলেজে যেতে পারে না। পারে না প্রসূতি মা হাসপাতালে যেতে । এপার ওপারের মিলে প্রায় লক্ষ্যাধিক জনগণ চরম ভোগান্তির স্বীকার।
উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার মাইনুল হক বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও সেতুটি টেন্ডার হয়। পাইলিং কাজে সমস্যা থাকায় কাজটি বন্ধকরে দেওয়া হয়। পাইলিং করার সময় ৮-১০মিটার অস্থায়ী একটি কেচিং বসে যাচ্ছিলো। ফলে কাজটি বন্ধ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে ভাল কাজ করার জন্য তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তারা এলজিইডি দফতরের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে নারাজ। এনিয়ে ঠিকাদার পক্ষ হাইকোটে একটি রিট করেছে। ইতোমধ্যেই সমাপ্তির কাজ শেষ হয়ে গেছে। সমাপ্তির তারিখ ছিল ১৬/১১/২৩।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available