মো. মোরশেদ আলম, স্টাফ রিপোর্টার: গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের বিনিরাইল গ্রামের ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলায় একটি পাখি মাছের ওজন৭৩ কেজি। মাছটি মেলার অন্যতম আর্কষণ হয়ে উঠেছে। মাছটি দেখতে ক্রেতা ও উৎসুক জনতা ভীড় করছেন। মাছটির দাম চাচ্ছেন ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা।
মেলাটি প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে অর্থাৎ বাংলা পৌষ মাসের শেষ দিনে অনুষ্ঠিত হয়। প্রকৃত জামাই মেলা প্রথমে ছিলো পৌষালী মেলা। এটা মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মেলা। পরে কালের পরিবর্তনের সাথে সাথে পৌষের এই মেলা মাছের মেলায় রুপান্তরিত হয় । স্থানীয়দের মতে এই মেলা বয়স প্রায় ২৫০ বছরের বেশি।
মেলায় মাছ ছাড়াও স্থানীয় বিক্রেতাগণ বিভিন্ন মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার, আসবাবপত্র, খেলনা ইত্যাদি বিক্রি করেন। কেনাকাটার পাশাপাশি গ্রামীণ ঐতিহ্য অনুসারে বিনোদনের জন্য পুতুল নাচ, নাগর দোলা ও লাঠি খেলার আয়োজন করা হয়। ঐতিহ্যের কারণে বিনিরাইলের মাছের মেলায় কেনার চেয়ে দেখতে আসা মানুষের ভিড় বেশি।
প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো এই মেলাটি প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। স্থানীয় জামাই এবং শ্বশুরদের মধ্যে চলে বড় মাছ কেনার প্রতিযোগীতা। আর এই দৃশ্য উপভোগ করতে আসেন অনেকেই।
বিনিরাইল গ্রামের বিরাট এলাকাজুড়ে নানা জাতের মাছের পসরা সাজিয়ে বসেন। যেখানে দেখা যায়, বড় বড় সামুদ্রিক পাখি মাছ, শাপলা পাতা মাছ, কুড়াল মাছসহ নানা ধরনের মাছ। এছাড়াও রয়েছে দেশি জাতের রুই, কাতলা, বোয়াল, আইড়, বাঘাইর, চিতল, কালবাউশ ও রিটাসহ নানা ধরনের দেশি মাছ। বিক্রেতারা নানা অঙ্গভঙ্গি করে সুর ধরে ডেকে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কেউ কেউ বড় আকৃতির মাছ উপরে তুলে ধরে ক্রেতাদের ডাকেন।
স্থানীয়রা জানান, মেলাটি এখন সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। তাই বেড়েছে মেলার পরিধিও। এখানে শুধু মাছ নয়, এ মেলাকে কেন্দ্র করে বস্ত্র, চারু-কারু, প্রসাধনী, ফার্নিচার, খেলনা, মিষ্টি ও কুটির শিল্পেরও নানা পণ্যের স্টল বসে। এদিন এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে আত্মীয় স্বজনরা আসেন।
আমির হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, ৬৭ হাজর ২০০ টাকা দিয়ে বাঘাইর মাছ কিনেছি। মাছটি তরতাজা ও দেখতেও অনেক সুন্দর। প্রথম দেখাতেই পছন্দ হয়েছে। পরে দরদাম করে কিনে নিলাম। প্রতি বছরই আসি মেলায় একটি বড় মাছ কিনতে।
মেলায় মাছ বিক্রেতা পরিতোষ জানান, বড় বড় নদীর মাছ নিয়ে এসেছি। ২০ বছর ধরে এই মেলায় মাছ নিয়ে আসি। এটি আমাদেরও নেশায় পরিণত হয়েছে। ভৌরব, সিরাজগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার মাছ ব্যবসায়ীরা নিয়ে আসেন এ মেলায়। আমার বাবাও এই মেলায় আসতেন।
সোহাগ নামে এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, আমি হরেক রকম মাছ নিয়ে এসেছি। ৭৩ কেজি ওজনের পাখি মাছ এনেছি। এটির দাম ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। অনেকেই দেখছেন, সঠিক দাম পেলেই বিক্রি করে দিব।
মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি কিশোর আকন্দ বলেন, মেলাটি এখন এই অঞ্চলের উৎসবে পরিণত হয়েছে। মেলাটি আড়াইশ বছরের পুরনো। বিভিন্ন প্রকার বড় সাইজের মাছ কিনতে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। মাছ ছাড়াও ফার্নিচার, মিষ্টান্ন,লোকজ অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, মাছের জন্যেই এ মেলাটি বেশি পরিচিত। এজন্য ২০-২৫ বিঘা জমি পতিত রাখা হয়। এখানে বিভিন্ন জেলার মাছ ব্যবসায়ীরা নিয়মিত এদিন ব্যতিক্রম মাছ নিয়ে হাজির হন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available