ফিরোজ হুসাইন, নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি: ঢাকার নবাবগঞ্জে ১৪টি ইউনিয়নেই কম-বেশি কৃষি কাজ করে জীবন যাপন করেন অনেক কৃষকরা। সরকারের সবধরনের কৃষি সেবা মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে দিতে প্রতিটি ইউনিয়নে একই পদে ৩ জন করে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা দায়িত্বে রয়েছেন।
এই অঞ্চলে প্রায় ইউনিয়নে বেশিরভাগ কৃষক জানেন না মাঠ পর্যায়ে কৃষিসেবা পৌঁছে দিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে কে দায়িত্বে রয়েছে। কৃষকরা কোথায় গেলে কিভাবে তাদের দোরগোড়ায় সেবা পাবে এসব বিষয়ে নিয়মিত সভা সেমিনার বা উঠান বৈঠক ও প্রচার-প্রচারণা নেই এই দফতর থেকে। এতে, ফসল উৎপাদনসহ কৃষি বিষয়ক সরকারি বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার কৃষকরা। হাতে গুনা কয়েকজন উপ-সহকারী ছাড়া অন্যদের মাঠে দেখা যায় না। এমনটাই অভিযোগ কৃষকদের।
অভিযোগ রয়েছে, নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বপালন না করেই সরকারি বেতন ও অনান্য সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে এসব কর্মকর্তারা। এসব বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার তদারকি ও নিয়মিত মনিটরিংয়ের অভাবে এখানকার কৃষক কৃষি বিষয়ক পরামর্শ ও পর্যাপ্ত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব জেনেও বিশেষ কোনও উদ্যোগ নেয়নি কৃষকের দোরগোড়ায় সেবার লক্ষ্যে।
নবাবগঞ্জ উপজেলার শিকারীপাড়া, বারুয়াখালী, নয়নশ্রী, বান্দুরা, বক্সনগর, গালিমপুর, চুড়াইন ইউনিয়নসহ আরও বেশকিছু ইউনিয়নের অত্যন্ত ২০ জন চাষির সঙ্গে কথা হয়। এর মধ্যে দু' একজন ছাড়া কেউ কৃষি অফিসের এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চিনেন না। এমনকি কখনও মাঠে দেখা পায় না। ভালো ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে পরামর্শের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে গেলেও তাদের খুঁজে পায় না বলে অভিযোগ উঠেছে।
কৃষক তুতা মিয়া ও আবুল কালাম এশিয়ান টিভি অনলাইনকে বলেন, কৃষি অফিসের কোনও অফিসারকে আমরা মাঠে পাই না। তাদের দেখা পেলে একটু পরামর্শ নিতে পারতাম এবং কৃষিতে আরও আগ্রহ বাড়তো।
কৃষক আফাজ উদ্দিন ও বিশ্ন চরণ তালুকদার বলেন, আমি একজন প্রকৃত কৃষক। আমাদের পূর্বপুরুষ কৃষি কাজ করতো। অথচো কখনও সরকারি প্রণোদনা সার-বীজ কিছুই পাই না। এতবছর যাবৎ কৃষি কাজ করি কখনই মাঠে কৃষি অফিসের কারও পরামর্শ পেলাম না। তাদের না পেয়ে বেসরকারি প্রতিনিধি ও দোকানিদের দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী পণ্য ব্যবহার করেও তেমন ফলন ভালো পাই না।
শুধু তুতা মিয়া নয়, আরও একাধিক কৃষকের অভিযোগ রয়েছে এশিয়ান টেলিভিশনের প্রতিবেদকের কাছে। তারাও এমন একই অভিযোগ করেন। কখনোই মাঠ পর্যায়ে ব্লকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দেখেন না এবং কৃষি বিষয়ক পরামর্শও পান না।
অনেক ব্লকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সপ্তাহে একদিন বা দুদিন অফিস করেন। অফিস শেষে প্রদর্শনী প্লটে গিয়ে কৃষকের সাথে ফটোসেশন করেন। আর সেই ফটো সোশ্যাল মিডিয়াতে দু’লাইন লিখে আপলোড করে দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়।
অভিযুক্ত ইউনিয়নের বিভিন্ন ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মধ্যে কথা হয় বেশ কয়েকজনের সাথে মুঠোফোনে। এশিয়ান টিভি অনলাইনকে দেয়া বক্তব্যে তারা দাবি করে বলেন, নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ক'দিন নিজ কর্মস্থলে আবার ক'দিন নিজ বাড়িতে থেকে এসে কৃষকদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন তারা।
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আছমা জাহান এশিয়ান টিভি অনলাইনকে বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত কৃষকদের সেবা দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। আমিও মাঠে গিয়ে কৃষকের খোঁজখবর নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ঢাকা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. আহসানুল বাসার মুঠোফোনে জানান, এ বিষয়ে কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। যদি কর্মকর্তারা সঠিকভাবে দায়িত্বপলন না করে থাকে, তাহলে বিষয়টি খুবই দু:খজনক।
তিনি আরও বলেন, অবশ্যই মাঠ পর্যায়ে কৃষকের পাশে থেকে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। দায়িত্বপালনে অবহেলার কোনও সুযোগ নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available