মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধি: চা বিক্রি করে পরিবারের চাহিদা মেটানোসহ জীবিকা নির্বাহ করছেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম ফরাজী (৫০)। তিনি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার বালুরচর গ্রামের মৃত মো. নিজাম উদ্দিন ফরাজীর ছেলে ও ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। প্রায় ২০ বছর ধরে পৌরসভার ছেংগারচর বাজারে বঙ্গবন্ধু স্টোর নামে একটি চায়ের দোকান পরিচালনা করে আসছেন তিনি। রং চা বিক্রি করায় বেশ জনপ্রিয় তার ওই টি-স্টল। ছেংগারচর পৌরসভাসহ আশপাশের বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে চা খেতে আসেন রং চা প্রেমিরা। প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার চা বিক্রি হচ্ছে তার দোকানে।
এ পৌরসভাসহ জেলা উপজেলা জুরে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীর অনেকেই অনৈতিক কর্মকাণ্ড আর অপরাজনীতিতে বিতর্কিত হলেও তৃণমূল যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মাহবুব আলম ফরাজীর চা বিক্রি করে সংসার চালানোর বিষয়টি আদর্শ আর নিবেদিত রাজনীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত বলে দাবি করেছেন দলীয় নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয়রা।
জানা যায়, ২০০৪ সাল থেকে ছেংগারচর বাজারে পরিচালিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্টোর নামের টি-স্টল। আর এক কাপ রং চা বাজারে ৮/১০ টাকা বিক্রি করেন অন্য দোকানিরা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু চা স্টোরে প্রতি কাপ রং চা ৫ টাকা। এছাড়াও বিক্রি হচ্ছে বিস্কুট, পান আর সিগারেট। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দোকানটি চলছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু স্টোরের মালিক মাহবুব আলম ফরাজী।
স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘদিন যাবৎ আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনীতি করছেন মাহবুব আলম ফরাজী। ব্যক্তি হিসেবে অত্যান্ত সাধারণ মানুষ তিনি। এ পৌরসভাসহ আশপাশের ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাকর্মীর নামে নিয়োগ বাণিজ্য, তদবির বাণিজ্য, ড্রেজার ব্যবসা, নানা ধরণের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনাসহ টিআর, সরকারি ঘর ও করোনাকালীন সরকারের দেওয়া সাধারণ মানুষের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ থাকলেও ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবের বিরুদ্ধে নেই কোনো বিতর্ক। চায়ের দোকানের উপার্জিত টাকায় পরিবারের খরচ বহন করাসহ নিজ টাকা ব্যয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করার সুনামও রয়েছে তার। বিতর্কিত না হওয়ায় তার দোকানের ক্রেতা নিজ দলসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও গ্রামের সাধারণ মানুষ। এছাড়াও ছেংগারচর পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের চা প্রেমিরা তার দোকানের ক্রেতা। এই বাজারসহ আশপাশে বেশকিছু টি-স্টল থাকলেও বঙ্গবন্ধু স্টোরের ক্রেতা সর্বোচ্চ বলেও জানান তারা।
বাজারের ব্যবসায়ী ও আদুরভিটি গ্রামের বাসিন্দা মো. নাজিম দর্জি বলেন, মাহবুব ভাই অনেকদিন যাবৎ যুবলীগের সঙ্গে রাজনীতি করছেন। লোক হিসেবেও ভালো মানুষ তিনি। ছেংগারচর বাজারসহ দূর-দূরান্ত থেকে লোক আসে তার দোকানে চা খেতে। তার দোকানে বেচা-কেনা খুবই ভালো।
দোকানের ক্রেতা ও নিজ ছেংগারচর গ্রামের বাসিন্দা সানসাইন একাডেমিক কিন্ডার গার্ডেনের সিনিয়র শিক্ষক মো. জনি সরকার বলেন, এই দোকানের চা খুবই ভালো হয়। এ কারণে প্রতিদিন আসি চা খেতে। বাজারে বেশ কয়েকটি চায়ের দোকান থাকলেও এই দোকানের চা ব্যতিক্রম। শুধু রং চা বিক্রি করায় ক্রেতা বেশি।
তিনি বলেন, এই চায়ের দোকানের মালিক মাহবুব ভাই দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যবসা আর পরিবারের দায়িত্ব পালন করা ব্যতিত তার বিরুদ্ধে নেই মারামারি কাটাকাটিসহ নোংরা রাজনীতির কোনো অভিযোগ।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ফেরদৌস মিয়াজী বলেন, এই দোকানের চা খুব ভালো হয় শুনে ষাটনল থেকে চা খেতে এসেছি। পাশের বাড়ির লোক আর পৌরসভার বিভিন্ন পরিচিত জনের কাছ থেকে এই দোকানের ভালো চায়ের প্রশংসা অনেক শুনেছি।
বঙ্গবন্ধু স্টোরের মালিক মাহবুব আলম ফরাজী বলেন, ছেংগারচর ডিগ্রি কলেজে লেখাপড়া করা অবস্থায় কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম। ২৩/২৪ বছর যাবৎ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। চা বিক্রির টাকায় আমার সংসার চলে। অন্য কোনো ব্যবসা বা জমিজমাও নেই তেমন আমার। যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে চা বিক্রি করছি, এটা অনেকে খারাপ চোখে দেখলেও আমাকে যারা পছন্দ করেন তারা প্রশংসা করেন। চা বিক্রি করে আমি গর্বিত। কারণ আমি পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন করছি। দল ভালোবাসি। রাজনীতি করে কি পেলাম সেটি কখনো ভাবিনি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর ভাষণ আমার খুবই পছন্দের। তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর কথা বার্তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসেই তার নামে দোকানটি দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আগে খুবই ভালো ছিল। এখন বেচা বিক্রি একটু কম। আগে প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা বেচা বিক্রি হলেও এখন হচ্ছে তিন থেকে চার হাজার টাকা।
ছেংগারচর পৌরসভার সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) মেয়র হাজী রুহুল আমিন মোল্লা বলেন, মাহবুব ছোট্ট বেলা থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। বর্তমানে তিনি ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক চা বিক্রি করে খেলেও তাকে সম্মানের চোখে দেখেন স্থানীয়রা। দলীয় নেতা চা বিক্রি করায় আমরাও রীতিমত তার দোকান থেকেই চা খেয়ে আসছি।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ কুদ্দুস বলেন, মাহবুব ভাই দলের একজন নিবেদিত তৃণমূল নেতা। চা বিক্রি করে যেমন জীবিকা নির্বাহ করছেন, তেমনি টি-স্টল থেকে দলের নিবেদিত প্রচার-প্রচারণা করছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে খুবই সম্মানের চোখে দেখি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available