গুরুদাসপুর (নাটোর) উপজেলা সংবাদদাতা : নাটোরের গুরুদাসপুরে পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন চাতালে ধান সিদ্ধ কাজে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে জুট। চাতালের কালো ধোঁয়া ও দূষিত বর্জ্যে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। এসব জুটের বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় বাড়ছে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি।
এদিকে উপজেলার সব চাতাল মালিককে জুটের ব্যবহার বন্ধের নির্দেশপত্র প্রদান করলেও মিল মালিকরা সময় চাওয়ায় জুট পোড়ানোর সময় বেঁধে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায়। চাতাল মালিকরা অতিরিক্ত লাভবান হতে জুটকে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে পরিবেশ দূষণের অবৈধ এই কর্মকান্ড চালাচ্ছেন। ফলে এলাকায় শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। পৌরসভার আবাসিক এলাকা গাড়িষাপাড়ায় বিকাল বেলা গেলেই এমন দৃশ্য দেখা যায়।
জানা যায়, গুরুদাসপুরে ১৩২টি চাতাল মিল রয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই পৌরসভার মধ্যে আবাসিক এলাকায় যত্রতত্রভাবে গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ৪৪টি চাতালের অবকাঠামো তৈরিতে সরকারি নিয়মনীতি কিছুটা মানলেও অন্যরা কিছুতেই মানছে না কোনো নিয়মনীতি। এমনকি জ্বালানির ধোঁয়া বের হওয়ার উঁচু চিমনি পর্যন্ত নেই অনেক চাতালে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, আগে চাতালে ধান সিদ্ধ হতো রাতে। এখন সেটা বিকালেই চালু হয়। একসময় চাতাল মালিকরা ধান সিদ্ধ কাজে ব্যবহার করতেন কাঠের গুঁড়া বা ধানের তুষ। ফলে তেমন সমস্যা হতো না। বর্তমানে খরচ কমানোর জন্য পোড়ানো হচ্ছে বিষাক্ত জুট। জুট পোড়ানোয় পরিবেশ দূষণের কারণে মানুষের শরীরে চুলকানিসহ এলার্জি হচ্ছে। এমনকি অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের আরও বেশি সমস্যা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে বাড়ছে কার্বন ডাই-অক্সাইড। এতে ছড়িয়ে পড়ছে নানা রোগব্যাধি। জুটের ব্যবহার বন্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা। বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরের নাটোর অফিসকে অবগত করেও কোনো লাভ হয়নি বলে তারা জানান।
এদিকে জুট পোড়ানো সময় চাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে চাতাল মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইউএনও সাহেব জুট পোড়ানোর সময় বেঁধে দিয়েছেন। রোববার আমাদের মালিক সমিতির মিটিং আছে। এখনতো সিজিন শেষের দিকে। আর অল্প কয়েকদিন চলবে, ফাল্গুন মাসে সব চাতাল বন্ধ হয়ে যাবে। সামনের বৈশাখ মাস থেকে চাতালের কার্যক্রম আবার শুরু হবে।
ইউএনও শ্রাবণী রায় জানান, এ বিষয়ে অবগত হওয়া মাত্রই উপজেলার সব চাতাল মালিককে জুটের ব্যবহার বন্ধের নির্দেশপত্র প্রদান করা হয়েছে। মিল মালিকরা সময় চেয়েছেন। যে জুট রয়েছে তা পোড়ানোর পর আর নতুন করে আনবেন না মর্মে জানিয়েছেন। এ সময়টুকু তাদের দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মুজাহিদুল ইসলাম জানান, জুটের বিষাক্ত ধোঁয়া শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের মারাত্মক অবস্থায় ফেলে। সুস্থ মানুষও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হন। এটা দ্রুত বন্ধ করা না হলে এলাকায় শ্বাসকষ্টজনিত রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নাটোর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক সুকুমার সাহা বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমেই জানলাম। পরিবেশের জন্য এটা হুমকি স্বরুপ এবং বেআইনি। পরবর্তীতে পরিবেশের ছাড়পত্র নবায়নের জন্য এলে তখন বিষয়টি দেখা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available