রামু (কক্সবাজার) প্রতিনিধি : কক্সবাজারের রামুতে থামছে না পাহাড়ের কান্না। রাতে দিনে নানা কৌশলে চলছে পাহাড় কাটা। অন্যদিকে রামুর বাঁককালী নদীতে চলছে ড্রেজারে বালি উত্তোলনের প্রতিযোগীতা। দিনের পর দিন এসব অসঙ্গতি চলমান থাকলেও এগুলো ঠেকানোর দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের রহস্যজনক নিরবতার কারণে পাহাড় খেকো ও বালু দস্যুরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রক্ষা পাচ্ছে না ফসলি জমির মাটিও।
এক শ্রেণির ভূমিদস্যুরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলে পাহাড়গুলোকে সাবাড় করছে। নিজস্ব ফায়দা লুটতে পাহাড়ের মাটি কেটে বিক্রি, আবাস্থল গড়ে তোলাসহ নানা স্বার্থে এসব পাহাড়গুলোকে নির্বিচারে বিলীন করে দিচ্ছে। প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তায় এসব নেতিবাচক কর্মকান্ডে মানুষকে উৎসাহীত করছে বলে সচেতন মহলের অভিযোগ।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার রামুর খুনিয়াপালংয়ের থোয়াংগা কাটা গহীন পাহাড়ে ড্রেজার মেশিনে বালি উত্তোলনের সংবাদে রাজারকুল বনবিভাগ অভিযান চালিয়ে ড্রেজার মেশিন জব্দ করেন। এসময় স্থানীয় মৃত মোঃ শফির পুত্র দিদারুল আলম জিসান বনকর্মী ও সংবাদকর্মীর উপর হামলা করতে উদ্যত হয় বলে জানান কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক আনিসুর রহমান। এর আগে একই এলাকা থেকে পাহাড় কেটে মাটি নেওয়ার সময় একটি ডাম্পার (মিনি পিক-আপ) জব্দ করা হয় বলে জানান প্রশাসনের এ কর্মকর্তা।
পাহাড়, নদী অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর রামু উপজেলা। কিন্তু এই সৌন্দর্য দিন দিন যেন শ্রীহীন হয়ে পড়ছে। পাহাড় কাটা ও অবৈধ ড্রেজার যেন গলার কাটায় পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় রামুর প্রায় সব ইউনিয়নেই পাহাড় কাটা অব্যাহত রয়েছে। পাহাড়ের এসব মাটি ব্যবসায়িকভাবে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে। এতে করে পাহাড়ের শক্ত ভিত দুর্বল হয়ে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা বাড়ছে। উজাড় হচ্ছে গাছপালা, ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
এদিকে রামুর চাকমারকুল, ফতেখাঁরকুল, কাউয়ারকোপ, কচ্ছপিয়া ও গর্জনিয়ার বাঁকখালী নদীতে চলছে বালি উত্তোলনের প্রতিযোগীতা। চোখ যেদিকে যায় শুধু ড্রেজারের দেখা মেলে।
ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো। ভাঙ্গছে নদীর পাড়, সরে যাচ্ছে পাথরের ব্লকগুলো। এছাড়া একটি পাহাড়খেকো চক্র পাহাড়ের গোড়ায় খুঁড়ে পাম্প মেশিনে পানি দিয়ে নির্মাণ কাজের বালি আহরণের মাধ্যমে পাহাড় ধসের ব্যবস্থা করছে।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ জানান, পাহাড় খেকো ও বালু দস্যুদের চিহ্নিত করে সমানুপাতিকভাবে শাস্তি প্রদান করতে হবে। শুধু জরিমানায় সীমাবদ্ধ থেকে পাহাড় কাটা ও ড্রেজার বন্ধ করা যাবে না। অভিযান পরিচালনাকালে ড্রেজার মেশিন ধ্বংশ-জব্দ, উত্তোলনকৃত বালি জব্দসহ জেল জরিমানার বিধান চালু করা হলে এ সকল পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ড চিরতরে বন্ধ হয়ে যেত।
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) ফাহমিদা মুস্তফা জানান, তদন্তপূর্বক পাহাড় কাটা ও ড্রেজারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available