হাবিবুর রহমান, মধুপুর (টাঙ্গাইল) : টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ে কপি চাষে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা। সাদা কপির জমিতে এখন রঙিন কপি। বেগুনি ও হলুদ দুই জাতের কপি। পুরো গাছ সাদা রঙের কপির গাছের মতই। গাছের ডাটাগুলো একদম সবুজ সতেজ। সবুজে ঢাকা পাতার আড়ালে রঙিন কপি। যেন সবুজের মাঝে হাসছে বেগুনি-হলুদ রঙ। দেখতে চকচকে! মনকাড়া! উপজেলার কুড়াগাছা গ্রামে রঙিন এ জাতের কপি চাষ করেছেন ছবর আলীর ছেলে আলমগীর হোসেন নামের এক কৃষক। রঙিন কপির ভালো ফলনে হাসি ফুটেছে এই কৃষকের মুখে।
সরেজমিনে মধুপুর শহর থেকে ৯ কি.মি. দূরে কুড়াগাছা গিয়ে দেখা যায়, রঙিন কপি চাষ। কৃষক আলমগীরের বাড়ি কুড়াগাছা বাজারের পাশ ঘেঁষেই। বাড়ির পাশ দিয়ে চলে মধুপুর-পীরগাছা-চাঁদপুর রাবার বাগানের পাকা সড়ক। সড়কে পাশেই আলমগীর হোসেন ৭ একর জায়গার উপর গড়ে তোলেছেন এক খন্ড কৃষি রাজ্য। করেছে বেগুন, ডাটা, বাঁধা কপি, শিম, লাউ, লাল শাক ও রঙিন কপির চাষ। তার বাড়ি থেকে আইল ধরে ফসলের মাঠ গিয়ে দেখা যায়, উপরে নেটের জাল দিয়ে ছাউনি। নিচে সবুজ কপি গাছ। একটু সামনে এগিয়ে গেলে চোখে পড়ে সবুজের ফাঁকে ফাঁকে যেন হলুদ আর বেগুনি কপি হাসছে। কপির রঙ দেখতে হুবহু পাকা হলুদ আর গাঢ় বেগুনি রঙের। দেখতে দারুণ সতেজ। দেখে যে কারোর চোখ জুড়িয়ে যাওয়া কথা।
এ কপি চাষ নিয়ে কথা হয় কৃষক আলমগীর হোসেনের (৩৫) সাথে। তিনি জানান, সে সারা বছরব্যাপী নানা ধরনের মৌসুমী সবজির চাষ করেন। গত কয়েক বছর তার চাষকৃত বেগুন বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। করোনার কারণে সারা দেশের ন্যায় তারও বেগুন রপ্তানি সাময়িক বন্ধ। শীত কালিন সবজি চাষের আগে তার এলাকার উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা তাপস কুমার সরকার তাকে প্রথম রঙিন কপি চাষের জন্য উদ্ভুদ্ধ করেন। তার সহযোগিতায় মধুপুর উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করেন। পরে তাকে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা প্রকল্পের আওতায় রঙিন জাতের কপির চারা দেয়া হয়।
তিনি তার বাড়ির পালানে এক বিঘা জমিতে এ রঙিন জাতের কপি চাষ করেছেন। আড়াই হাজার চারা রোপন করেছে। সবগুলো গাছে কপি ধরেছে। একপাশে সবগুলো হলুদ আর পূর্ব পাশে বেগুনি। উপরে জালের নেট দিয়ে পুরো কপির জমিটা ঢেকে দিয়েছে। তিনি জানান, কপির রঙ রঙিনের কারণে বুলবুলিসহ কয়েক প্রজাতির পাখির উপদ্রব বেশি। যাতে কপি খেয়ে নষ্ট না করতে পারে সে জন্য জাল দিয়ে বেড়া দিয়েছেন। ফলন ভালো হয়েছে। বিক্রি শুরু করেছে কপি। প্রতি কেজি ৫০ টাকা দামে জমি থেকেই বিক্রি হচ্ছে। শুধু বিক্রি নয়, স্থানীয় মানুষেরা তার নতুন জাতের কপি দেখতে আসে।
তিনি জানান, আগামীতে যদি এ জাতের চারা পান, তাহলে সে আরও বেশি জমিতে কপি চাষ করবেন। তার আশা সাধারণ জাতের কপির চেয়ে কয়েকগুণ লাভ বেশি পাবেন।
তিনি আরও জানান, এ কপি খেতে স্বাদ বেশি। পুষ্টিও বেশি। পরিবারের সবাই খেতে পছন্দ করে।
আলমগীর শুধু এ কপিই চাষ করেন নি। করেছেন বাড়ির পালানে মডেল গ্রামের জৈব সার, সবজিবাগান, ফলের বাগান, লেবুর বাগান। পাশেই গড়ে তোলেছেন তার এক খন্ড কৃষির রাজ্য। আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি অবলম্বন করে সেক্স ফেরোমন, জৈব পদ্ধতি, হলুদ আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করে নিরাপদ সবজি চাষ করেন। তিনি একজন সফল কৃষক। প্রয়োজনে কৃষি অফিসে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। তার কৃষি ফসল দেখতে কৃষি বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালক আসেন। দেখে এ কৃষকের প্রশংসা করেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাপস কুমার সরকার জানান, এই কৃষক নানা ধরনের সবজি চাষ করে থাকে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব সময় পরামর্শ দেয়া হয়। সেক্স ফেরোমন ও হলুদ আঠালো ফাঁদ ও জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ সবজি চাষের জন্য কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, রঙিন জাতের কপি চাষ এটাই মধুপুরে প্রথম। ইন্ডিয়ার সিনজেন্টা থেকে বীজ এনে চারা উৎপাদন করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা প্রকল্পের মাধ্যমে মধুপুরের কুড়াগাছা গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেনের মাধ্যমে চাষ করা হয়েছে।
তিনি জানান, সাধারণ কপির চেয়ে দাম বেশি। সুস্বাদু ও পুষ্টিগুন বেশি। ভিটা ক্যারোটিন ও এন্টি অক্সাইড সমৃদ্ধ এ কপি ক্যান্সারসহ নানা রোগের জন্য নিরামক। এ রঙিন কপির চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে বলে তিনি আশাব্যক্ত করেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available