বাসাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের বাসাইলে নানার বাড়িতে বেড়াতে এসে জিজান হাসান দীপ্ত (১৮) নামের এক মেধাবী শিক্ষার্থী কিশোর গ্যাংয়ের হামলার শিকার হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এ ঘটনায় কিশোর গ্যাংয়ের মূলহোতা শাকিল আহাম্মেদ ওরফে টিকটক শাকিলসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এর আগে ২৪ জানুয়ারি বাসাইল মনি ক্লিনিকের সামনের মোড়ে ধারালো দা, কাঠের স্ট্যাম্প ও লোহার পাইপ দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে দীপ্তকে গুরুতর আহত করে গ্যাং সদস্যরা।
গুরুতর আহত জিজান হাসান দীপ্ত সখীপুর উপজেলার চাকদহ গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম মল্লিকের ছেলে। দীপ্ত ঢাকায় বিজিবি পিলখানায় অবস্থিত বীর শ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ থেকে ২০২৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। দীপ্ত মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এঘটনায় জিজান হাসান দীপ্তর মা বাদি হয়ে ২৭ জানুয়ারি বাসাইল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান বাসাইল থানা পাড়ার হোসেন আলীর ছেলে শাকিল আহাম্মেদ (২৫) সহ অন্যান্য আসামিরা হলো, বাসাইল শ্মশানঘাটা এলাকার টুইনা ওরয়ে টুনু মিয়ার ছেলে আলমগীর হোসেন (২৪), থানাপাড়ার শাহ আলমের ছেলে স্বাধীন মিয়া (২০), বিরু আহাম্মেদের ছেলে মনা মিয়া (১৯), থানাপাড়ার মনির হোসেনের ছেলে অনিক মিয়া (১৯), থানাপাড়ার সেলিম মিয়ার ছেলে রাহাত হাসান (২০), শুকুর মিয়ার ছেলে জিহাদ মিয়া (১৯) ও কালু মিয়ার ছেলে সিমান্ত মিয়ার (১৯)। এছাড়াও মামলায় আরও ৩, ৪ জন অজ্ঞাতনামা যুবকের নাম উল্লেখ করা হয়।
মামলার পর পুলিশ ঘটনার মূলহোতা শাকিল, তার সহযোগী অনিক এবং আসাদ মিয়াকে গ্রেফতার করেছে। শাকিল ও অনিককে গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটা রাম দা, লোহার পাইপে মোটরসাইকেলের চেইন ও প্রিমিয়াম ঝালাইযুক্ত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এরপর শাকিল ও অনিকের বিরুদ্ধে থানায় অস্ত্র আইনেও মামলা হয়েছে। বর্তমানে তারা তিনজন কারাগারে রয়েছে।
এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, জিজান হাসান দীপ্ত ২৩ জানুয়ারি বাসাইল দক্ষিণপাড়া এলাকায় তার নানা রফিকুল ইসলামের বাড়িতে বেড়াতে আসে। ২৪ জানুয়ারি দুপুরে সমবয়সী বাসাইল উত্তরপাড়ার নাঈম ও সজল খানের সঙ্গে জিজান হাসান দীপ্ত বাসাইল বাজারে বেড়াতে যায়। সেখান থেকে নাঈমকে কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান শাকিল বাসাইল বাজারের একটি ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ছেড়ে দেয়। এ সময় জিজান হাসান দীপ্ত ও সজল খানও উপস্থিত ছিল। এরপর সন্ধ্যায় আবার তারা তিনজন মিলে বাসাইল বাজারের দিকে যাওয়ার সময় বাসাইল মনি ক্লিনিকের সামনের মোড়ে পৌঁছালে কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান শাকিলের নেতৃত্বে অতর্কিতভাবে তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় নাঈম ও সজল প্রাণ রক্ষার্তে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে জিজান হাসান দীপ্তকে ধারালো দা, কাঠের স্ট্যাম্প, লোহার পাইপে মোটরসাইকেলের চেইন প্রিমিয়াম ঝালাইযুক্ত দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। তার ডাক-চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান শাকিলসহ অন্যরা পালিয়ে যায়। জিজান হাসান দীপ্তকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখান থেকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে আবার তাকে ঢাকায় হস্তান্তর করা হয়। ওইদিন থেকে তাকে ঢাকার পপুলার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাজহারুল আমিন বলেন, ‘হামলার ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী জিজান হাসান দীপ্তর মা বাদি হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৩, ৪ জন অজ্ঞাত যুবকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার প্রধান আসামি শাকিল ও অনিককে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনেও মামলা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত তিজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আহত শিক্ষার্থী ঢাকায় হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রয়েছে বলেও তিনি জানান।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available