ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের কোতয়ালী থানায় স্যুটকেসের ভেতরে পাওয়া চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক মরদেহের মূল হত্যাকারীকে ২ দিনের মধ্যে গ্রেফতারসহ মালামাল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
৩০ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিং এ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামানসহ ফরিদপুর জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। এ সময় ফরিদপুরে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, ২৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কোতয়ালী থানাধীন গোয়ালচামট নতুন বাসস্ট্যান্ড গোল্ডেন লাইন কাউন্টারের পূর্ব দিকে ১টি পরিত্যক্ত লাগেজ দেখে স্থানীয় লোকজন ৯৯৯ এ পুলিশে কল দেয়। তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উপস্থিত লোকজনের সহায়তায় লাগেজের তালা ভেঙে অজ্ঞাতনামা এক পুরুষের মরদেহ দেখতে পায়।
প্রাথমিকভাবে নিহতের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় কোতয়ালী থানার এসআই মো. শামীম হাসান বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে পুলিশের একটি চৌকস টিম মামলাটির তদন্ত শুরু করে। উন্নত তথ্য-প্রযুক্তি ও স্থানীয় তদন্তের মাধ্যমে জানা যায় ২৭ জানুয়ারি সকাল অনুমান ৮.টায় অজ্ঞাতনামা ১জন বোরকা পরিহিত মহিলা মাহেন্দ্র গাড়িতে এসে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিকাশ পরিবহনে ১টি টিকেট কাটে এবং লাগেজটি গাড়ির মালামাল রাখার বক্সে রেখে নাস্তা করার কথা বলে পালিয়ে যায়।
নির্ধারিত সময়ে গাড়িটি ছাড়ার মুহুর্তে লাগেজের মালিককে না পেয়ে গাড়ি কর্তৃপক্ষ লাগেজটি ঘটনাস্থলে রেখে যায়। উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে নিবিড় তদন্তকালে পুলিশ টিম রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দঘাট থানাধীন গোয়ালন্দ বাজার থেকে মাহেন্দ্র গাড়ি ও গাড়ির ড্রাইভারকে শনাক্ত করে হেফাজতে নেয়।
তার দেয়া তথ্যমতে লাগেজ বহনকারী রিক্সা চালককে হেফাজতে নিয়ে গোয়ালন্দঘাট থানাধীন পতিতাপল্লীর জনৈক রুবেল মাতুব্বর এর বাড়ির ২য় তলার ভাড়াটিয়া রোজিনার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ঘটনার পর হতে রোজিনা পলাতক ছিল।
পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় রোজিনাকে ৩০ জানুয়ারি দিবাগত রাত ৩টার সময় ডিএমপির কদমতলী থানাধীন জুরাইন এলাকার জনৈক মো. দেওয়ান বাড়ির ৬ তলা হতে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামি রোজিনাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে অনুমান ১০, ১২ বছর যাবৎ গোয়ালন্দঘাট দৌলতদিয়া
পতিতা পল্লীতে আছে। তার বয়স যখন ১৪ বছর তার বাবা-মা তাকে বিয়ে দেয় । বিবাহের কিছু দিন পর তার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
পরবর্তীতে দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর চায়ের দোকানদার জনৈক হাকিমের সাথে তার ২য় বিবাহ হয়।
হাকিম মারা যাওয়ার পর সে জনৈক সুজনকে ৩য় বিবাহ করে। আসামি আরও জানায়, এ মামলায় উল্লেখিত নিহত ব্যক্তি মিলন প্রামানিকের বাড়ি পাবনা সদর থানায় হলেও রাজবাড়ী জেলায় বিভিন্ন ইট ভাটায় কাজ করতেন তিনি। সে প্রায়ই যৌন পল্লীতে আসত বলে তথ্য সূত্রে জানা যায়।
২৬ জানুয়ারি নিহত ব্যক্তিটি আসামির ভাড়া বাসায় যায় এবং ২৭ জানুয়ারি রাত অনুমানিক ২টার দিকে তাদের মধ্যে টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে নিহত ব্যক্তি মামলায় নথিভূক্ত আসামির মায়ের নাম তুলে অশ্লীল ভাষায় গালি দিলে আসামি ক্ষিপ্ত হয়ে তার পরিহিত ওড়না দ্বারা গলায় পেঁচ দিয়া তাকে হত্যা করে।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হলে তাকে খাট হতে নামিয়ে মরদেহটি কালো রঙের ১টি কম্বল, ১টি সাদা লাল বেগুনী রঙের বড় বেড
শীট, একই রঙের ৩টি বালিশের কাভার দ্বারা মুড়িয়ে তার ঘরে থাকা বড় ১টি লাগেজের ভিতরে রাখা হয়।
পরের দিন সকাল সাড়ে ৬টায় ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে মরদেহ ভর্তি লাগেজটি নিয়ে রিক্সা যোগে গোয়ালন্দ বাজারে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ফরিদপুর যাওয়ার জন্য ৬০০ টাকা দিয়ে ১টি মাহেন্দ্র গাড়িতে মরদেহ ভর্তি লাগেজসহ উক্ত আসামি ফরিদপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড গোল্ডেন লাইন কাউন্টারের পূর্ব পাশে বিকাশ পরিবহনে ৮টার গাড়িতে টিকিট কাটে এবং মরদেহ ভর্তি লাগেজটি গাড়ির হেলপারের সহায়তায় গাড়ির বক্সের সামনে রাখে। গাড়ি ছাড়তে কিছুটা বিলম্ব হলে কৌশলে নাস্তা খাওয়ার কথা বলে আসামি গাড়ির কাউন্টারে মরদেহ ভর্তি লাগেজটি রেখে দ্রুত পালিয়ে যায়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available