নওগাঁ প্রতিনিধি: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় বিল জাতীয় সংসদে পাস হওযায় আনন্দে ভাঁসছেন নওগাঁবাসী। মঙ্গলবার নওগাঁ জেলায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ আকারে বিলটি পাশ হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধূরীরর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনের বিলটি পাশ করার প্রস্তাব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি। যাচাই-বাছাইয়ে পর বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
জানা গেছে, উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রসরমান বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা ও সমতা অর্জন এবং জাতীয় পর্যায়ে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা, বিশেষ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিক জ্ঞানচর্চা ও পঠন-পাঠনের সুযোগ সৃষ্টি ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে নওগাঁ জেলায় একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম নির্দশন ঐতিহ্যবাহী পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার (সোমপুর বিহার)। পাল বংশীয় রাজা ধর্মপাল ৭৮১-৮২১ অষ্টম শতকের শেষ দিকে বা নবম শতকে এ বিহারটি নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রায় ৩০০ বছর ধরে বৌদ্ধদের ধর্মচর্চা অন্যতম কেন্দ্র ছিল এ বিহারটি। ৪ দশমিক ৪ মিটার চওড়া প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত বিহারটিতে ১৭৭ টি কক্ষ আছে। মোট ৭০ দশমিক ৩১ একর জমির ওপর বৌদ্ধ বিহারটি অবস্থিত। মুল ভূমি থেকে বিহারটির উচু প্রায় ৭২ ফুট। জানালার পরিবর্তে কুলঙ্গী ও টানা বারান্দা দেওয়া কক্ষগুলোতে বসবাস এবং জ্ঞান চর্চা করতেন ভিক্ষুরা। পাহাড়পুরকে প্রাচীন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিনি সংস্করণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। পাল বংশের পতনের পর বিহারটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। এরপর ১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়। চীন, তিব্বত, মায়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বৌদ্ধরা এখানে ধর্মচর্চা ও ধর্মজ্ঞান অর্জন করতে আসতেন। খ্রিষ্টীয় দশম শতকে এই বিহারের আচার্য ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার (সোমপুর বিহার) এর বহু বছর পর নওগাঁ আবারও পেল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়। সেই বিশ্ববিদ্যালয় এখন নওগাঁর দোড়গোড়ায়। আর সেই সুখবরের আনন্দে ভাসছে নওগাঁ। খুশির স্ট্যাটাস ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। কোথাও কোথাও আনন্দ মিছিলও হয়েছে।
নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান বলেন, অষ্টম শতাব্দির পর একবিংশ শতাব্দিতে আমরা একটি বিশ্ববিদ্যালয় পেলাম। যা আমাদের জন্য একটি গর্বের বিষয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এ জেলার ছেলে-মেয়েরা বাহিরের জেলায় গিয়ে পড়াশুনা করাটা সত্যিই কষ্টকর ছিল। এখন থেকে জেলাবাসীর জন্য সুবিধা হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করা যাবে। কৃষি প্রধান এ জেলা ধান, আম ও সবজির জেলা। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব নিয়ে গবেষণা করা হলে আর্থসামাজিক দিক দিয়েও এগিয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় সভ্যতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে এগিয়ে যাবে। আমাদের আরও বেশি মানোন্নয়ন হবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় অপরিসীম প্রয়োজন আছে। যা অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু অনেক পরে হলেও তা হয়েছে।
নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম বলেন, নওগাঁবাসীর জন্য একটি খুশির খবর। আমাদের প্রয়াত নেতা আব্দুল জলিল যে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতে তা বাস্তবায়ন হয়েছে। এখন আপাতত আইনগত কোন ঝামেলা নাই। আগামীতে আইনিপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণ হবে। জেলার সাড়ে ২৭ লাখ মানুষের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এ বিষয়ে নওগাঁ-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন বলেন, আমার বাবার (প্রয়াত নেতা আব্দুল জলিল) স্বপ্ন ছিল এমন একটি বিদ্যাপিঠ প্রতিষ্ঠার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিকে নজর দিয়ে দ্রুত বিলটি পাশ করেছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে দেশ আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে। দীর্ঘদিন পরে হলেও এমন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। স্থান নির্ধারণ করা হবে। জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে সবাই মিলে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আসলে কোথায় হলে ভাল হয়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available