তানভীর আহাম্মেদ, খানসামা প্রতিনিধি: দিনাজপুরের খানসামায় ঐতিহ্যবাহী আওকরা মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ২৫০ বছরের পুরোনো এই মসজিদের দায়িত্ব প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের হাতে থাকলে বাস্তব চিত্র হলো, সংস্কারের অভাবে নানা সমস্যায় জর্জরিত এ মসজিদটি।
সরেজমিনে ৪ ফেব্রুয়ারি রবিবার মসজিদটি ঘুরে দেখা যায়, জেলার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম খানসামা উপজেলার আওকরা মসজিদটি। এটি উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের হাসিমপুর-এলাকায় মির্জার মাঠ নামক স্থানে অবস্থিত।
কালের সাথী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় আড়াইশ বছরের ও বেশি বছর পূর্বের এ স্থাপনাটি ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, একসময় মসজিদের আশেপাশে মুসলিম জনবসতি ছিল। তাই মির্জা লাল বেগ নামের একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ বাংলা ১১৭২ সালে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য এটি নির্মাণ করেছিলেন। এখানে তারা নামাজ আদায় ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকতেন।
তাদের ধারণা, ব্রিটিশদের শাসনের সময় অথবা অন্য কোন কারণে তারা মসজিদটির আশপাশ এলাকা ছেড়ে অন্য কোন জায়গায় চলে যায় । ফলে অযত্ন-অবহেলায় এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় দীর্ঘকাল পড়ে থাকে।
নীলফামারী সৈয়দপুর এলাকার সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জানান, কাহারল বাজারে গরু কিনতে গেলে লোকে মুখে তিনি শুনেছেন যে, আওকরা মসজিদের মানত করলে মনের নেক বাসনা পূরণ হয়। পরে তিনি মসজিদটি দেখার জন্য এসে দেখেন পরিত্যক্ত অবস্থায় ঝোপঝাড়ে ঢেকে পড়ে আছে।
এলাকাবাসী সূত্রে আরও জানা যায়, জিন, ভূত, সাপ-পোকামাকড় থাকার কারণে কেউ যেতে না পারায় পড়ে আছে বেহাল অবস্থায়। পরে তিনি ৩০ থেকে ৪০ জন মাদ্রাসা ছাত্রদের নিয়ে এসে পরিষ্কার করে মোমবাতি-আগরবাতি জ্বালিয়ে স্থানীয়দের নামাজ আদায় করার কথা জানিয়ে তিনি। কিন্তু তিনদিন পর সে স্বপ্নে দেখেন তাকে মসজিদে এসে নামাজ আদায় করতে বলা হচ্ছে এবং এতে তার কোন ক্ষতি হবে না বলেও স্বপ্নে জানানো হয়। পরে তিনি স্থানীয়ভাবে মসজিদ এলাকায় বসবাস শুরু করেন।
লোকজন মসজিটির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তায় চলাচলের সময় এটির মধ্যবর্তী অংশে দূর থেকে দাঁড়িয়ে কথা বললে এক সময় জোরে প্রতিধ্বনির সৃষ্টি হত। তাই শুনে তারা ভাবত মসজিদটি তাদের কথার উত্তর দিচ্ছে। এ থেকে মসজিদটির নাম হয়ে যায় আওকরা মসজিদ অর্থাৎ কথা বলা মসজিদ।
মজার ব্যাপার হলো, মীর্জা সাহেব মসজিদটি প্রতিষ্ঠার সময় কি নাম রেখেছেন তাও কেউ বলতে পারে না এখন। ওই এলাকার একাধিক প্রবীণ লোকজনের সাথে আলোচনা করেও মসজিদটিতে সর্বশেষ কত সালে নামাজ আদায় হয়েছে তা জানা যায়নি।
তবে মীর্জা লাল বেগের ওই মসজিদকে ঘিরে র্মীজার মাঠে একটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে দুইটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। এখনও এটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শব্দ করে কথা বলে প্রতিধ্বনি শোনার আশায়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঐতিহ্যবাহী আওকরা মসজিদটি প্রত্নতত্ব সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হলেও কাগজ কলম আর সাইনবোর্ডে তা সীমাবদ্ধ ।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available