জাজিরা (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি: কালের বিবর্তনে কলা গাছের ভেলা হারিয়ে গেলেও হারিয়ে যায়নি নৌকা। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের ফেদুল্লা বেপারীর কান্দি নদী প্রায় ৩০০ মিটার বর্ষায় একমাত্র ভরসা নৌকা। নদীর ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে শত বছর ধরে চলাচল করছে এই ইউনিয়নের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। এখানে নৌকাডুবিতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘাটেছে। অনেকটাই নিরুপায় ১৫টি গ্রামের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ।
প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন স্থানীয়রা। এখন ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে চলাচলের সময় মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা।
ফেদুল্লা বেপারি কান্দি রূপাবোর হাটের মধ্যে শাখা নদীর ওপর তৈরি করা হয়েছে বাঁশের সাঁকো। দীর্ঘ দিন ধরে ওই স্থানে একটি পাকা সেতুর দাবি বিভিন্ন দফতর ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে জানিয়ে এলেও এখনো তার সুরাহা হয়নি।
এদিকে, সেতু নির্মাণের প্রস্তাব অধিদফরের পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ শাখা নদীর এক মাথা পদ্মার সঙ্গে যুক্ত হলেও আরেক মাথা জাজিরা এলাকায় গিয়ে প্রায় ভরাট হয়ে কৃষি জমিতে পরিণত হয়েছে। বর্ষায় এই নদীতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। তবে শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে এলে এর বুকের বিভিন্ন স্থানে জেগে থাকা জমিতে চাষাবাদ করেন কৃষকরা। তবে এটি নদী না কি খাল, তা নিয়ে পাউবো ও এলজিইডির বিরোধ রয়েছে।
উপজেলার পালেরচর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মধ্যবর্তী শাখা নদীর সাথেই রয়েছে আমজাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব নাওডোবা পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়, কিন্ডার গার্ডেন, মহিলা মাদরাসা, সরকারি বি কে নগর বঙ্গবন্ধু কলেজ ও উপজেলা সদরে জাজিরা ডিগ্রি কলেজ। এ সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শাখা নদীর ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পার হতে হয়। অনেক সময় সাঁকো থেকে পড়ে আহত হয় তারা, ভিজে যায় বই-খাতাসহ পোশাক। সাঁতার না জানায় অনেক শিশু শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে চায় না।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, সাঁকোতে ঝুঁকি থাকায় বয়স্ক ও নারীদের পারাপারে আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। জরুরি প্রয়োজনে গর্ভবতী মায়েদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য দীর্ঘ পথ ঘুরে সড়কে উঠতে হয়। তারপরও প্রতিদিন হাজারো মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম বাঁশের সাঁকো।
ফেদুল্লা কান্দির বাসিন্দা রাইসুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, নির্বাচন এলেই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এখানে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ভোটে পাস করার পর প্রতিশ্রুতির কথা আর মনে থাকে না। কত জনপ্রতিনিধি আসলো কিন্তু কেউ কথা রাখেনি।
পূর্ব নাওডোবা ইউপি চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন খান বলেন, নদীতে একটি সেতু না থাকার বিষয়টি এ অঞ্চলের মানুষের জন্য এটা চরম দুর্ভোগের। সেতুটি নির্মাণ হলে পালেরচর, পূর্ব নাওডোবা, বড় কান্দি, কুন্ডেরচর, মাঝিরচর ও বি কে নগর এলাকায় বড় ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা হবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইমন মোল্লা বলেন, আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের নদীর উপর সেতু নির্মাণের ডিজাইন প্রস্তুত করেছিলাম, কিন্তু (বিআইডব্লিউটিএ) ক্লাসিফিকেশনে নদী দেখানো। আর ডিসি অফিসে জলমহল দেখানো। যদি নদী থাকে তাহলে বিআইডব্লিউটিএ এর ক্লিয়ারেন্স লাগে। তারা যেই ডিজাইন দিয়েছে সেটাতে অনেক উঁচু হয়ে যায়। আর তাতে বাজারের দোকান নিচে পরে যাবে তাই কাজটি করতে পারিনি। সেজন্য আমরা বিকল্পভাবে চিন্তা করতেছি যে, নিচু করে ব্রিজটি করা যায় কি না। সেভাবে যদি অনুমোদন পাই আশা করি খুব দ্রুতই সেতুটির কাজ আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available