রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি যেন থামছেই না। একের পর এক অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসব নিয়ে এর আগেও একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। নানা অভিযোগ পেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনও অভিযান চালিয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। দায়ের করা হয়েছে মামলাও। তবুও থামানো যায়নি অনিয়মের চাকা। এসব দুর্নীতির বিষয় প্রকাশ পাওয়ায় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে চলছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে চরম অসন্তোষ।
মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রমতে, ভূমি অধিগ্রহণের আগেই পরামর্শক কন্সালটেন্ট নিয়োগ দিয়ে প্রতি মাসে ২ লাখ এক হাজার টাকা বেতন দেওয়া হচ্ছে এক কর্মকর্তাকে। আবার রেজাউল হোসেন রিটু নামের ওই কর্মকর্তা চুক্তি অনুযায়ী যেখানে চার বছরে ৮০টি টিএ ও ডিএ (ট্রাভেল এলাউয়েন্স) পাওয়ার কথা, সেখানে তিনি এক বছরেই তুলেছেন ৬৬টি টিএ-ডিএ। অথচ, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ডিপিপি ২০০৬ পিপিআর ২০০৮ অনুযায়ী কোনো মতেই ভূমি অধিগ্রহণের আগে পরামর্শক কন্সালটেন্ট নিয়োগ দেওয়া যাবে না। সেই নির্দেশনা অমান্য করে রেজাউল হোসেন রিটুকে ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণের সময়সীমা ছিল সর্বশেষ গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত। কিন্তু নানা জটিলতায় এখনো ওই কাজে হাতই দিতে পারেনি রাজশাহী জেলা প্রশাসন। কিন্তু পরামর্শক কন্সালটেন্ট রেজাউল হোসেন রিটু এরই মধ্যে ২৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা বেতন এবং ৬৬টি টিএ উত্তোলন করেছেন। প্রতিটি টিএর পরিমাণ হলো ৪ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা শুধু টিএই উত্তোলন করেছেন তিনি।
নিয়ম অনুযায়ী, পরামর্শক কন্সালটেন্ট রেজাউল হোসেন রিটুর দায়িত্ব হলো রামেবির নতুন ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত কার্যক্রম করা। সেই হিসেবে ভূমি অধিগ্রহণের পর ভূমির ম্যাপ দেখে তিনি পরামর্শ দেবেন। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ না হতেই এরই মধ্যে রিটুর যোগযোসজে প্রাথমিক ডিজাইন করে তিন কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে।
এছাড়া আরও দুই কোটি টাকার বিল দাখিল করা হয়েছে। তারিক হাসান এসোসিয়েটকে দিয়ে প্রাথমিক ডিজাইন করা হয়েছে জমি বুঝে পাওয়ার আগেই। আবার সেই প্রতিষ্ঠানে সহকারী আর্কিটেকচার পদে চাকরি করেন রিটুর এক মেয়ে। বলা যায়, মেয়ের প্রতিষ্ঠানকে দিয়েই নামকাওয়াস্তে কাজটি করা হয়েছে। তবে এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পরামর্শক কন্সালটেন্ট রেজাউল হোসেন রিটু কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘যা কিছু বলার ভিসি স্যার বলবেন।’
এদিকে, রামেবির ৪৮ লাখ টাকার মালামাল সরবরাহ কাজের দুটি টেন্ডারে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে ৩০ লাখ টাকার ফার্নিচার সরবরাহ কাজের টেন্ডার দেওয়া হয়েছে ৬ নম্বরে থাকা সর্বোচ্চ দরদাতাকে। এ নিয়ে এক নম্বরে থাকা সর্বনিম্ন দরদাতা ফারজানা হোসাইন আদালতের মাধ্যমে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। সেই নোটিশের কোনো জবাবও দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
একইভাবে স্টেশনারী সরবরাহ কাজের ১৮ লাখ টাকার কাজ দেওয়া হয়েছে চার নম্বরে থাকা সর্বোচ্চ দরদাতাকে। এসব কাজের টেন্ডারের সদস্য সচিব হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন কর্মকর্তা ও চলতি দায়িত্বের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নাজমুল হোসেন। তার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে নানা অনিয়মের অভিযোগে দুদক অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে। তবে এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নাজমুল কোনো উত্তর দেননি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডা. এ জেড এম মোস্তাক হোসেন বলেন, ‘কয়েকটি অভিযোগ আছে। সেগুলো আমরা ক্ষতিয়ে দেখছি। এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম করতে দেওয়া হবে না কাউকে। তবে পরামর্শক কন্সালটেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নিয়ম অনুযায়ী। সেখানে কোনো অনিয়ম হয়েছে বলে আমার জানা নাই।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available