নওগাঁ প্রতিনিধি: রেলওয়ের খালাসি পদে চাকরির প্রলোভন দিয়ে ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আব্বাস আলী ও তার দুই সন্তানের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী আজিজুল হক জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করে প্রতিকার না পেয়ে অবশেষে নওগাঁ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।
অভিযুক্ত নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার চাকরাইল গ্রামের মৃত জমির উদ্দীনের ছেলে আব্বাস আলী দেওয়ান এবং তার দুই সন্তান ডিএম আব্দুল ওয়াহাব পলাশ ও সাব্বির আহম্মেদ সাদি। ভুক্তভোগী আজিজুল হক নওগাঁ সদর উপজেলার বরুনকান্দি (স্কুলপাড়া) গ্রামের মৃত ঝরু মন্ডলের ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, আব্দুল ওয়াহাব পলাশ রেলওয়ের খালাসি হিসেবে পারবর্তীপুরে চাকরি করেন। বড় ভাই পরিবার নিয়ে আজিজুল হকের বাসায় বাড়া থাকার সুবাদে আজিজুর হকের সাথে পালাশের পরিবারের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সুযোগে পালাশ তার বাবা ও ভাইকে দিয়ে আজিজুল হকের ছেলে মেহেদী হাসানকে রেওয়ের খালাসী পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ নেন। ভুক্তভোগী সরল বিশ্বাসে কোনো প্রমাণপত্র ছাড়া তাকে ১১ লাখ টাকা দেন। টাকা নেওয়ার পর বেশ কিছু দিন পার হয়ে গেলে ছেলের আর চাকরি হয় না। আজিজুল হক তার ছেলের চাকরির জন্য পলাশ ও তার বাবার কাছে ঘুরে ছেলেকে চাকরি দেন না, টাকাও ফেরত পান না।
ছেলের চাকরি ও টাকা কোনোটি ফেরত না পেয়ে ভুক্তভোগী আজিজুলের বাবা ও ছেলে কাছ থেকে নন জুডিসিয়াল ট্যাম্প করে নেন। বাবা ও ছেলে আগামী ১ মাসের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ট্যাম্পে অঙ্গিকার করেন। অঙ্গিকার করার পরে আব্বাস আলী আজিজুল হকের বিরুদ্ধে জোর করে স্ট্যাম্প করে নেওয়া হয়েছে বলে চাঁদাবাজি মামলা করেন। চাঁদাবাজি প্রমাণ করতে না পারায় মামলা আদালত থেকে বাতিল করা হয়েছে। আজিজুল হক নিরুপায় হয়ে বিভিন্ন দফতরে টাকা ফেরতের জন্য আবেদন করেন। অবশেষে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ডিএম আব্দুল ওয়াহাব পলাশ ও তার ভাই সাব্বির আহম্মেদ সাদি জেল হাজতে আছেন।
এ ব্যাপারে চাকরিপ্রার্থী মেহেদী হাসান অভিযোগ করে বলেন, পলাশ ও তার পরিবার সাথে আমাদের পরিবারে ভালো সম্পর্ক ছিল। আমাদের জমি-জমা বিক্রি করে ১১ লাখ টাকা দেওয়া হয়। আমাদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আমাদের পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে এলাকার গণ্যমান্য লোকজনকে ধরে তাকে অনুরোধ করেও টাকা ফেরত পাচ্ছি না। এছাড়া কয়েক মাস পূর্বে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প করে দেন পলাশ ও তার বাবা। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে পেরিয়ে গেলেও টাকাগুলো আর ফেরত দেননি তারা।
ভুক্তভোগী আজিজুল হক দাবি করেন, পলাশ ও তার বাবা টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অঙ্গীকার করে স্ট্যাম্প করে দেন। তবে এখন টাকা না দিয়ে উল্টো আমাদেরকে জোর করে তার কাছে থেকে স্ট্যাম্প নেওয়া হয়েছে বলে ভুল তথ্য সরবরাহ করে টাকা নেওয়ার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমাদের কিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা করেন। তবে সেই মামলা তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি বলেন, বিভিন্ন দফতরের অফিযোগ করার পর বিষয়টি জেলা গোয়েন্দা স্ংস্থা তদন্ত করে ১১ রাখ টাকা নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণ হয়েছ। তারপর তিনি টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন। তাই আমি আইনের আশ্রায় নিয়েছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পালাশ জেল হাজতে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়।
পালাশের পিতা আব্বাস আলী বলেন, চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়ার যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সত্য নয়। মিথ্যা ও ভীত্তিহীন। তারা জোর করে আমাদের কাছ থেকে স্ট্যাম্প করে নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আমার দুই ছেলেকে জেলে পাঠিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. গোলাম মাওলা বলেন, যদি চাকরির কথা বলে অভিযুক্ত ওই টাকা নিয়ে থাকেন তবে এটা আইনগতভাবে অন্যায় করেছেন। অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাকরির প্রলোভনে টাকা হাতিয়ে নেওয়া অভিযোগ বিষয়ে রাজশাহী রেওয়ের প্রধান প্রকৌশলী (পশ্চিম) মো. আসাদুল হক বলেন, অভিযোগের বিষয় আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে দেখবো। যদি অভিযুক্ত ডিএম আব্দুল ওয়াহাব পলাশ চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে থাকেন, তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available