মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধি: চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীর অববাহিকা ও চরাঞ্চলে বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, মতলব উত্তর উপজেলার চরাঞ্চলে এবার ২০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে বাদামের দাম ও ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। মেঘনা নদীর চরাঞ্চলের বুকজুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় চর রয়েছে। আর এসব বালুচরে মাইলের পর মাইল হয়েছে বাদামের চাষ। সাদা বালুর জমিতে সবুজ আর সবুজে ছেয়ে গেছে লতানো বাদামের গাছে। প্রতিটি বাদাম গাছের মুঠি ধরে টান দিলেই উঠে আসছে থোকা থোকা সোনালি রঙের বাদাম। এ যেন বালুর নিচে লুকিয়ে থাকা গুপ্তধন।
উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নের ষাটনল, চর চারআনী, এখলাছপুর ইউনিয়নের চরকাশিম, বোরোচর, সুলতানাবাদ ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর, চর-লক্ষ্মীপুর, মোহনপুর ইউনিয়নের বোরোচর, নয়াচরসহ চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চরের জমিতে এবার ব্যাপকভাবে বাদামের চাষ করা হয়েছে। বাদাম পরিচর্যায় খরচ ও সময় দুটোই কম লাগে। এসব চরে বাসন্তী, সিংগা সাইস্টোর, বারী চিনাবাদাম-৫, বারী চিনাবাদাম-৬ সহ স্থানীয় জাতের বাদামের আবাদই বেশি করা হয়েছে। প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিরা জমি থেকে বাদাম হাটে নিয়ে বিক্রি করছেন। বাদাম চাষ করে চরাঞ্চলের কৃষক পরিবারে ফিরে এসেছে স্বছলতা। দূর হয়েছে নিত্য দিনের অভাব অনটন। তাদের মলিন মুখে ফুটেছে হাসি। চরের বালুতে প্রতি বিঘা জমিতে বাদাম হচ্ছে ২০ থেকে ২৪ মণ। প্রতিমণ কাঁচা বাদামের বাজার মূল্য ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা।
উপজেলার ষাটনল গ্রামের কৃষক গিয়াস উদ্দিন জানান, বালু মাটিতে অন্য কোনো ফসল উৎপাদন করে বাদামের সমপরিমাণ লাভ হয় না। অন্য ফসল উৎপাদনের চেয়ে বাদাম উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় চরের সবাই বাদামের চাষ করে। বাদাম রোপণের পর অন্য ফসলের মতো কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। নেই রাসায়নিক সারের ব্যবহার। বীজ রোপণ আর পরিপক্ক বাদাম উঠানোর খরচ ছাড়া তেমন কোনো খরচ নেই বললেই চলে। একটি ফসলেই আমাদের সারা বছরের সংসার চলে।
এখলাছপুর ইউনিয়নের চর কাশিমের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম গাজী জানান, তিনি এ বছর এক একর জমিতে বাদাম আবাদ করছিলেন। এ বছর বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। ছয় বিঘা জমিতে বাদাম তুলে পেয়েছেন ৬০ মণ। অন্য ফসল আবাদের চেয়ে বাদাম আবাদে পরিশ্রম ও খরচ অনেক কম হয়। গুণগত মান ভালো হওয়ায় এ অঞ্চলের বাদামের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাদাম ব্যবসায়ীরা বাদাম কিনতে আসেন।
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফয়সাল মোহাম্মদ আলী জানান, চরে এ বছর বাদামের আবাদ ও উৎপাদন ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাদামের দানা পুষ্ট হয়েছে। এছাড়া বাদাম গাছে তেমন কোনো রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ ছিল না। ফলে কৃষকরা বাদামের বাম্পার ফলন পেয়েছেন। সরকারি সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে ব্যাপকহারে বাদাম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available