নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁ সদর উপজেলার ইলশাবাড়ি এলাকায় কম দামে ইট দেওয়ার কথা বলে শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ইটভাটা মালিক সবেদুল ইসলাম ওরফে রনির বিচারসহ পাওনা টাকা ফেরতের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ইলশাবাড়ি-চন্ডিপুর গ্রামের ভুক্তভোগীরা।
১৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে নওগাঁ-রাণীনগর সড়কের ইলশাবাড়ির সুরমা ব্রিকস নামের ইটভাটায় ভুক্তভোগী জনসাধারণ ব্যানারে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
ইলশাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী সাইদুর রহমানের (মিনকো) সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ভুক্তভোগী বেদারুল ইসলাম, চন্ডিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. আলতাফ হোসেন, সদর উপজেলার মাদারমোল্লা খিদিরপুর গ্রামের মিজানুর রহমান, ইলশাবাড়ি গ্রামের মোশাররফ হোসেন, বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার তারাপুর গ্রামের তপেস কুমার প্রমুখ।
ভুক্তভোগীরা জানান, বছরের কিছু সময় ইটের দাম বেড়ে যায়। অন্যান্য সময়ে কম দামে ইট পাওয়া যায়। ভাটা কর্তৃপক্ষকে অগ্রিম টাকা দিলে প্রতি হাজার ইটে দুই-তিন হাজার টাকা কম পড়ে। ২০২০, ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে বিভিন্ন সময়ে কম দামে ইট পাওয়ার চুক্তিতে সদর উপজেলার ইলশাবাড়ি এলাকায় পাশাপাশি অবস্থিত সুরমা ব্রিকস-১ ও সুরমা ব্রিকস-২ নামের দুটি ইটভাটার মালিক সবেদুল ইসলামকে ভুক্তভোগীরা অগ্রিম টাকা দেন।
ভুক্তভোগীরা আরও জানান, টাকা লেনদেনের রসিদ তাদের কাছে রয়েছে। কিন্তু নানা অজুহাতে নির্ধারিত সময়ে তাদেরকে ইট দেওয়া হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে ইট না পাওয়ায় অগ্রিম দেওয়া টাকা ফেরত চেয়ে বারবার ধরনা দিয়েও ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত দেয় না সবেদুল ইসলাম। গত দুই মাস ধরে সদর উপজেলার ইলশাবাড়ি এলাকায় অবস্থিত সুরমা ব্রিকস-১ ও সুরমা ব্রিকস-২ টাকা ফেরত না দেওয়ায় অনেকে সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসেছেন।
ইলশাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, আমি সুরমা ব্রিকস-১ ইটভাটা থেকে ৫৫ হাজার ৬০০ ইট কেনার জন্য সবেদুল ইসলাম রনিকে ৫লাখ ৪হাজার টাকা অগ্রিম দেই। গত বছরের ১ অক্টোবর এই টাকা দেই। চুক্তি অনুযায়ী ১ বছরের মধ্যে সব ইট দেওয়ার কথা। বারবার তাগাদা দেওয়া সত্তেও আজ পর্যন্ত একটি ইটও পাইনি। গত দুই মাস ধরে ভাটা মালিক ও ম্যানেজার সবাই উধাও, ভাটার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ। আমার মতো অগ্রিম টাকা দেওয়া অন্য পাওনাদাররা ভাটায় এসে মালিক কর্তৃপক্ষের কাউকে পাচ্ছে না। ইটভাটা মালিক সবেদুল ইসলাম ও তার ম্যানেজার সবার মুঠোফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে বুধবার আমরা জেলা প্রশাসক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি।
আদমদিঘী উপজেলার তারাপুর গ্রামের বাসিন্দা তপেস কুমার বলেন, কম দামে দেড় লাখ ইট কেনার জন্য তিন বছর আগে সুরমা ব্রিকস ইটভাটা মালিক সবেদুল ইসলাম ৭ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়েছিলাম। চুক্তি অনুযায়ী ১ বছরের মধ্যে সব ইটা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ইট পাইনি। বারবার ধর্ণা দিয়েও কোনো কাম হয়নি। গত দুই মাস ধরে দেখতেছি, ইটভাটাটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। মালিক কর্তৃপক্ষের সব লোক উধাও। সবেদুল ইসলামকে অগ্রিম টাকা দিয়ে আমার এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। আমার মতো নওগাঁ সদর, রাণীনগর ও আদমদিঘী উপজেলার আরও অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ কম দামে ইট কেনার জন্য সুরমা ব্রিকস ইটভাটা মালিক কর্তৃপক্ষকে অগ্রিম টাকা দিয়ে ধরা খেয়েছেন।’
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার ইটভাটার মালিক লাপাত্তা হয়ে যাওয়া সবেদুল ইসলামের মুঠোফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম. রবিন শীষ জানান, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরবর্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available