শেরপুর প্রতিনিধি: শেরপুরে ছেলে সন্তানের আশায় একটি নার্সিং হোমে নিয়ে গর্ভপাতের নামে পরিকল্পিতভাবে ৬ মাসের গর্ভবতী স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ করেছে স্বজনরা। এ ঘটনায় নার্সিং হোমের মালিক বিপ্লব আহমেদ ও তার স্ত্রী নাজনীনকে আটক করেছে পুলিশ। এমন নির্মম ঘটনার বিচার দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, শেরপুর জেলার সদর উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের তিলকান্দি গ্রামের জয়নাল আবেদীন তার কন্যা রেহানা আক্তারকে বিয়ে দেন একই গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে আরিফুল ইসলাম মনসুরের সাথে। বিয়ের পর তাদের সংসারে তিনটি মেয়ে সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। এরপর থেকে ছেলে সন্তানের জন্য স্ত্রী রেহানা আক্তারের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছিল পাষন্ড স্বামী আরিফুল।
স্বামীকে সন্তুষ্ট করতে ছেলে সন্তানের আশায় আবারো সন্তান নেন রেহানা। ছয় মাসের গর্ভবতী ওই নারী সম্প্রতি আল্টাসনোগ্রাম করে জানতে পারেন আবারো তার গর্ভে মেয়ে সন্তানই রয়েছে।
এরপর থেকেই স্বামী আরিফুলের নির্যাতন শুরু হয় রেহানার ওপর। তাকে চাপ প্রয়োগ করে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে জেলা শহরের মারিয়া নার্সিং হোমে নিয়ে ডাক্তার ছাড়াই ওই ক্লিনিকের মালিক বিপ্লব আহমেদ তার স্ত্রী নার্স নাজনীন ও দালাল আসমানী মিলে রেহানার গর্ভপাত করায়। এসময়ই তার মৃত্যু হয়। পরে দ্রুত রেহানার মরদেহ আরিফুলের বাড়িতে নিয়ে দাফন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। টের পেয়ে রেহানার পরিবারের লোকজন ও পুলিশসহ ঘটনাস্থল গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে করে ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়।
এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যা বলে বিচার চেয়ে রেহানার স্বামী আরিফুল ইসলাম মনসুর, মারিয়া নার্সিং হোমের মালিক বিপ্লব আহমেদ, তার স্ত্রী ও শেরপুর জেলা হাসপাতালের নার্স নাজনীন, দালাল আসমানীসহ চারজনের বিরুদ্ধে শেরপুর সদর থানায় এজাহার দায়ের করেছেন রেহানার বাবা জয়নাল আবেদীন। সেই সাথে পরিবারের পক্ষ থেকে বিচারও দাবি করেছেন।
রেহানার বাবা জয়নাল আবেদীন বলেন, ছেলে সন্তানের জন্য আমার মেয়েকে অনেক নিরযাতন করেছে। পরিকল্পিতভাবে আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি এর কঠিন বিচার চাই।
তার ভাই নাজমুল হক বলেন, আমার বোনক অনেক নির্যাতন করেছে। সে আবার বিয়ে করার জন্য আমার বোনকে হত্যা করেছে। আমরা এর বিচার চাই।
মানবাধিকার সংগঠন আমাদের আইনের জেলা সাধারণ সম্পাদক নাজমূল ইসলাম ও স্বেচ্ছা সেবী সংগঠন আজকের তারুন্যের সভাপতি রবিউল ইসলাম রতন বলেন, এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ছয়মাসের গর্ভবতী মহিলাকে গর্ভপাত করাতে ডাক্তার প্রয়োজন। ডাক্তার ছাড়া এমন কাজ করেই এ মহিলাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর বিচার দাবি করেছি।
ডাক্তার ছাড়া এমন গর্ভপাত ঘটানো বিধি সম্মত নয় বলে জানালেন শেরপুর জেলা হাসপাতাল আরএমও মো. খায়রুল কবির সুমন। তিনি জানান, ময়নাতদন্তের পরই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে, কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে।
এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. এমদাদুল হক বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় ২ জনকে আটক করা হয়েছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available