বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার গাবতলীতে প্রতি বছরের মতো বসে প্রায় ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা। এ মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিক্রির জন্য আনা হয় নানা প্রজাতির বিশালা আকৃতির মাছ। বিখ্যাত এ মেলাকে ঘিরে শতাধিক গ্রামজুড়ে চলছে অতিথি আপ্যায়ন ও আনন্দ উৎসব।
এবার মেলায় সবচেয়ে বড় ৪০ কেজি ওজনের পাখি মাছের দাম হাঁকানো হয় ৮০ হাজার টাকা। মাছটি প্রতি কেজি দুই হাজার টাকা দর পড়েছে। কক্সবাজার থেকে টাঙ্গাইলের ব্যবসায়ী শরীফ তালুকদার এ মাছটি এনেছেন। এ ছাড়াও বড় বড় রুই-কাতলা মাছও নজর কাড়ে ক্রেতাদের। তবে সরকারি নিষেধাজ্ঞায় এবারও বড় আকারের বাঘাড় মাছ মেলায় তোলা হয়নি। এ মেলাকে ঘিরে গাবতলী উপজেলাসহ আশপাশের পাঁচটি উপজেলায় চলে উৎসবের আমেজ।
প্রায় ৪০০ বছর আগে থেকে গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দরসংলগ্ন গাড়ীদহ নদী ঘেঁষে সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানার জমিতে এক দিনের জন্য মেলাটি বসে। মেলাটি শুরু থেকেই মহিষাবান গ্রামের মণ্ডল পরিবার পরিচালনা করে আসছে।
এবারের মেলায় ২ শতাধিক মাছের দোকান, আসবাবপত্র, মাংস, রসগোল্লা, সন্দেশ, জিলাপি, নিমকি, তিলের নাড়ু, খই, শুকনা মিষ্টি উঠেছিল। মেলার আয়োজক ও গাবতলীর মহিষাবান ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মণ্ডল জানান, এ মেলাটি ঐতিহ্যবাহী, দাদার মুখে এ মেলার কথা আমরা শুনেছি। হিসাব করলে এটি প্রায় চারশ বছরের বেশি হবে। এ মেলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা উৎসবে মেতে ওঠেন। তিনি জানান, পোড়াদহ মেলা নিছক আনন্দ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্র নয়। এর সঙ্গে যুক্ত আছে মানুষের দীর্ঘকালের ধর্ম সাধনা, আছে গ্রামীণ জীবনগাথার নানা কথা। তাই তো দীর্ঘ ৪শ বছরের পুরাতন ঐতিহ্যের মেলাটি একটি বারের জন্যও বন্ধ হয়নি।
২৫ কেজি ওজনের ব্ল্যাককার্প আর কাতল মাছের দাম হাঁকা হয়েছে প্রতি কেজি ৯৫০ টাকা। এর পাশাপাশি চিতল, বোয়াল, ব্রিগহেড, আইড়, সিলভার কার্পসহ সামুদ্রিক নানা জাতের মাছ উঠেছে এবারের মেলায়। আকার ও ওজন ভেদে কাতল ৪০০ থেকে ৮৫০ টাকা, ব্রিগহেড ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, সিলভারকার্প ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, বোয়াল ১০০০ থেকে ১৪০০ টাকা, চিতল ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা, গ্রাসকার্প ৩৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। পাঙ্গাশ ৩৫০ থেকে ১০০০ টাকা, রুই ৩৫০ থেকে ১০০০ টাকা এবং আইড় মাছ ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে মেলায়।
মেলায় মাছ ছাড়াও শিশুদের জন্য খেলাধুলার সামগ্রী আর হরেক রকমের খাবারের দোকান বসেছে। মেলায় এবারও ১২ কেজি ওজনের মিষ্টি বিক্রি হয়েছে ৭শ টাকা কেজি দরে। মাছ আকৃতির মিষ্টিসহ বিভিন্ন আকারের মিষ্টি ছিল মেলার দোকানগুলোতে।
রাজশাহী থেকে আসা এলাকার জামাই জানান, তিনি মাছ কিনতেই এখানে এসেছেন। প্রতিবারই আসেন তিনি ঐতিহ্যের অংশ হতে। মেলায় আসা জামাই করিম হৃদয় জানান, বাজারে এত বড় মাছ দেখা যায় না, তাই মেলায় এসেছি। সাধ্যমতো বড় মাছটি কিনেই শশুরবাড়ি যাব। বাংলা প্রতিবছরের মাঘ মাস শেষ অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার মেলাটি উদ্যাপিত হয়। কিছু সমস্যার কারণে বিগত দুই-তিন বছর একটু দূরে মেলা হলেও এবারে মূল জায়গায় মেলাটি বসানো হয়।
মেলার পরিচালক ও মহিষাবান ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মণ্ডল জানান, প্রশাসন ও এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে মেলা সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি আরও জানান, পোড়াদহ মেলা শেষে মহিষাবানে বউমেলা অনুষ্ঠিত হবে। শুধু তরুণী-মেয়ে-স্ত্রীদের জন্যই হবে ‘বউমেলা’। এতে পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ থাকায় তরুণী-গৃহবধূরা স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারবেন। প্রায় ২৫ বছর ধরে ‘বউমেলা’ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available