নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় দাফন করার ৬২ দিন পর আদালতের আদেশে গৃহবধূ শাহেনা আক্তারের (৩৪) মরদেহ উত্তোলন করেছে সিআইডি। উপজেলার চরবাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমজিদ গ্রামের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল হাই খোকন বেপারী বাড়িতে এ মরদেহ উত্তোলন করা হয়।
১৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার দুপুরে ওই গৃহবধূর স্বামীর বাড়ির পারিবারিক কবরস্থান থেকে মরদেহ উত্তোলন করা হয়। সুবর্ণচরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অশোক বিক্রম চাকমার উপস্থিতে সিআইডিকে সার্বিক সহযোগিতা করে চরজব্বর থানা পুলিশ । এ সময় এলাকার শত শত নারী পুরুষ ন্যায় বিচারের দাবিতে ২ ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন।
জানা যায়, মৃত গৃহবধূ শাহেনা আক্তারের পিতা আবুল হাসেম গেল জানুয়ারিতে তার মেয়ের মৃত্যুকে অস্বাভাবিক মৃত্যু দাবি করেন। এর পর শাহেনার স্বামী বেলাল হোসেন (৩৫) দেবর মাঈন উদ্দিন (১৯), মনোয়ারা বেগম (৩৫), আজাদ হোসেন (৩৮) ও শাশুড়ি মোকছেদা খাতুন (৬০) কে অভিযুক্ত করে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালতে দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে মরদেহ উত্তোলন করে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারক।
মামলার বাদি আবুল হোসেন জানায়, ২০২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাত ৩টার সময় আমার মেয়ে শাহেনা আক্তার (৩৪) স্বামীর বাড়িতে মারা যাওয়ার সংবাদ পেয়ে আমরা ছুটে যাই। পরে মেয়ের মরদেহ তার স্বামীর বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ মৃত্যু আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হয়নি বলে অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে সত্য উদঘাটনের জন্য মামলা দায়ের করেন তারা। এছাড়াও শাহেনার শ্বশুড় বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে, জমিন দখল, যৌতুক, ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসা অবহেলা এবং পারিবারিক অশান্তির বিষয়ে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
গৃহবধূর স্বামী বেলাল হোসেন জানান, ২০১৯ আমার সাথে শাহেনার আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে আমরা সুখী ছিলাম। আমার প্রথম ছেলে শিশুটি মারা যায়, দ্বিতীয় কন্যা শিশুর বয়স ৪ বছর। বিয়ের পর থেকে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত কোন অশান্তি ছিলো না আমাদের সংসারে। আমরা ভালোবাসা করে বিয়ে করি। সাংসারিক জীবনে কখনো আমাদের নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি ও সমস্যা হয়নি। মৃত্যুর পূর্বে আমার স্ত্রী ৮ মাসের গর্ভবতী ছিল। হঠাৎ ১৫ ডিসেম্বর রাতে সে বুকে ব্যথা অনুভব করে। পরে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। তার অবস্থা অবনতির দিকে গেলে তার মা-বাবাকে খবর দেওয়া হয়। তাদের উপস্থিতিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতিকালে সে মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যুর পর উভয় পরিবার একত্রিত হয়ে তার দাফন কাজ সম্পন্ন হয়। তখন আমার শ্বশুড় পক্ষ কোন অভিযোগ করেনি।
এছাড়াও উভয় পরিবার একসাথ হয়ে পারিবারিক দোয়া অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার স্ত্রীর পূর্বের স্বামীর দেওয়া জমির দখল ও ভাগবাটোয়ারা নিয়ে কিছু দিন যাবৎ আমার শ্বশুড় পক্ষ সাথে বিরোধ করছে। জমির ভাগভাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে আমাকে ও আমার পরিবারকে হয়রানি করতে এ মামলা করেছে আমার শশুর।
এ ঘনটায় তদন্তকারী কর্মকর্তা নোয়াখালী সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক শাহ আলম বলেন, মামলার অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করলে অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় স্থানীয় চেয়ারম্যান রাজিবসহ ইউনিয়নের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available