নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও বাজারে সম্প্রতি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে চুরি। চোরেরা একের পর এক গরু, ব্যাটারি চালিত ভ্যান ও মোবাইল ফোন চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে পাশাপাশি তিনটি দোকান থেকে নগদ টাকা চুরির ঘটনাও ঘটেছে। মাত্র দশ-পনের মিনিটের ব্যবধানে ওই তিন দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানান। হঠাৎ করেই চুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামের সাধারণ মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, পুলিশ যথাসময়ে চোরদের আটক করতে না পারায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে চোরেরা। বাড়িতে চুরির ঘটনা অধিকাংশই রাতের বেলায় সংঘটিত হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক পরিবার ও দরিদ্র ভ্যান চালকরা।
গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলার ১০টি স্থানে চুরির ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত ২০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাতে উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের জাতোপাড়া গ্রামের শফির উদ্দিনের বাড়ি থেকে দুটি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে।
এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার উপজেলার নওদুলী বাজারে একই দিন তিনটি বিকাশের দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেছে। মাত্র ১০-১৫ মিনিটের ব্যবধানে ওই তিনটি দোকানে চুরি হয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, চোরেরা শুধুমাত্র বিকাশ এজেন্টের দোকান থেকে নগদ এক লাখ ১৫ হাজার টাকা চুরি করেছে। নামাজের সময় বেলা দেড়টা থেকে ১টা ৪০ মিনিটের মধ্যে চুরির এসব ঘটনা ঘটে। এরপর ঘটনাস্থল পুলিশ পরিদর্শন করলেও নেওয়া হয়নি কোনো অভিযোগ বা জিডি। কাউকে সন্দেহ বা না চেনার কারণে থানায় কোনো লিখিতভাবে জানানো হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আইয়ুব।
সভাপতি আইয়ুব মুঠোফোনে বলেন, খাবারের জন্য দোকান মালিকরা বাড়ি গেলে নামাজের সময় এই বাজারে দুটি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেছে। বাজারের পশ্চিম দিকে আনোয়ারের বিকাশের দোকান থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকা এবং পূর্ব দিকে ইসলামী এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নিচে রইচের দোকান থেকে ১৬ হাজার টাকা চুরি হয়েছে। এছাড়া দিঘির পাড় এলাকার সোহাগের ২৫ হাজার টাকা চুরি হয়েছে। থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে শুধু নাম ও কী চুরি হয়েছে, সেগুলো লিখে নিয়ে চলে গেছে। কোথাও এরকম কিছু পেলে আমাদের জানানো হবে। তিনি এটাকে পরিকল্পিত উল্লেখ করে বলেন, এলাকার কেউ জড়িত না থাকলে কোনোভাবেই একই সাথে একাধিক দোকানে চুরি করা সম্ভব না। তবে যার চুরি হয়েছে সে কাউকে সন্দেহ বা চিনতে পারেনি। তাই অভিযোগ করা হয়নি। এছাড়া একই দিন পতিসর এলাকায় চুরির চেষ্টা করেছিল চোরেরা। কিন্তু সেখানে চুরি করতে পারেনি। বর্তমানে আমরা আতংকে আছি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গত ৭ দিনের মধ্যে উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের জাতোপাড়া গ্রামে পর পর চারটি চুরির ঘটনা ঘটে। ওই গ্রাম থেকে এমরান নামে এক ব্যক্তির ব্যাটারি চালিত ভ্যান ও মিলন হোসেনের মুদির দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। উপজেলার মাধাইমুড়ি গ্রামে দুটি গরু চুরি সংঘটিত হয়। ভবানীপুর বাজার এলাকায় রসুলপুর গ্রামের ছাত্তার হোসেনের চার্জার চালিত একটি ভ্যান চুরির ঘটনা ঘটে। তারাটিয়া গ্রামে একটি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। রাইপুর গ্রামে রফিকুল ইসলামের বাড়িতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চোরেরা গরু চুরির চেষ্টা চালায়।
উপজেলার ভবানীপুর বাজার এলাকায় প্রায়ই ব্যাটারি চালিত ভ্যান চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটে। কিন্তু কোনো ঘটনারই এ পর্যন্ত ক্লু উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে জাতোপাড়া গ্রামের ইমরান হোসেন মুঠোফোনে বলেন, আমি প্রতিদিনের ন্যায় রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। ভোরের দিকে বাড়ির বারান্দা থেকে চোর আমার ভ্যান নিয়ে চলে যায়। ওইদিনই আত্রাই থানাতে অভিযোগ করি। কিন্তু পুলিশ প্রায় এক সপ্তাহ পরে আমার এখানে আসে।
দিঘির পাড় বাজার এলাকার সোহাগ মুঠোফোনে বলেন, আমি দোকান থেকে দুপুর একটার সময় বাড়িতে যাই। এসে দেখি দোকানের তালা নেই। ভিতরে ঢুকে দেখি, নগদ ২৫ হাজার টাকা নিয়ে গেছে চোরেরা। সেই সাথে তারা তালা সঙ্গে নিয়ে গেছে। একইভাবে অন্য দুই দোকানেরও তালা সঙ্গে নিয়ে গেছে তারা। অভিযোগ বা জিডি করেছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পুলিশ এসে আমাদের কাছ থেকে ঘটনা লিখে নিয়ে গেছে।
ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রোপাইটর ফিরোজ হোসেন বলেন, ৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ছিলো হাটের দিন। দিনে দুপুরে এভাবে একই সাথে একই রকমের দোকানে চুরি, এটা একপ্রকার রহস্যজনক চুরি বলা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, নামাজে সময় দেড়টা থেকে পৌনে দুটার মধ্যে চুরি করেছে।
এ ব্যাপারে শাহাগোলা ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মামুনুর রশিদ জানান, শাহাগোলা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে চুরির ঘটনা তো প্রায়ই শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশও তো বসে নেই। পুলিশকে সন্ধ্যার পর পর বিভিন্ন রাস্তায় ডিউটি করতে দেখা যায়। আবার এর মধ্যে চুরির ঘটনাও ঘটছে। অপরাধীদের ব্যাপারে পুলিশকে সহযোগিতা করতে হবে। শুধু পুলিশের ওপর নির্ভর করে বসে থাকলে হবে না।
এলাকায় চুরি বৃদ্ধির বিষয়টি জানতে চাইলে আত্রাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জহুরুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, এলাকার বাড়িতে চুরির ঘটনারোধে চৌকিদারদের সচেতন হতে হবে। আপনাদের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। কারণ, আমার ফোর্স সীমিত। চোরের উপদ্রব রুখতে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। চুরি সংঘটিত হওয়ার সকল তথ্য সংগ্রহ চলছে। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া বিকাশের দোকানে চুরির ঘটনা শোনামাত্রই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। সে সময় কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। আমরা তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছি। খুব শীঘ্রই জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে পারবো। কেউ অভিযোগ দিলে আমরা অবশ্যই নিবো। এছাড়া গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখবেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available