মোহাম্মদ শফিক, জেলা প্রতিনিধি (কক্সবাজার) : পাসপোর্ট করতে আসা মানুষের কাছ থেকে সরকারি নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত টাকা আদায়, অজুহাত দেখিয়ে ঘুষ বাণিজ্যসহ নানা বিরাজমান অভিযোগের ভিত্তিতে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত ২ দালালকে ১০ দিন করে কারাদণ্ড দিলেও পলিয়ে যায় মূল ‘রাঘব বোয়ালরা’।
২০ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শহরের গোল চত্বর এলাকায় অবস্থিত আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে এ অভিযান চালানো হয়।
এসময় দুদকের উপস্থিতি টের পেয়ে ‘ঘুষের হাটের পাহারাদার’, ‘মূল নাটেরগুরু’ অফিস সহকারী শাখাওয়াত হোসেন, সাগর, আনসার মণির, রানা, সুমনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনেকেই বাউন্ডারি টপকিয়ে পালিয়ে যান। এমনকি সেসময় কর্মকর্তা-কর্মচারী শুন্য হয়ে পড়ে অফিস।
দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- কক্সবাজার দক্ষিণ বাহারছড়ার ১১ নং ওয়ার্ডের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে আব্দুর সবুর (৩২) ও পেকুয়া উপজেলার শীল খালী ইউনিয়নের সব্বির আহমদের পুত্র মনির উদ্দিন (৬০)।
এদিকে দুদকের এই অভিযানকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে আমরা কক্সবাজারবাসী সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো: আলী, সাধারণ সম্পাদক, নাজিম উদ্দিন, কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী, রিপোর্টার্স ইউনিটি কক্সবাজারের সভাপতি এইচ এম নজরুলসহ স্থানীয় সচেতন মহল।
তারা জানান, ‘চুনোপুঁটি’দের পাশাপাশি অফিসের মূল ‘রাঘব বোয়াল’দের গ্রেফতার করতে হবে। তাহলেই ঘুষ বাণিজ্য ও গ্রাহক হয়রানি বন্ধ হবে। এছাড়া কক্সবাজার এই আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিস এ যেন এক ঘুষের হাট বাজার। নগদ টাকা, ঘুষ ও দালাল ছাড়া জমা হয় না পাসর্পোট। ইতোমধ্যে পাসর্পোট নিয়ে গ্রাহকদের হয়রানি বন্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন সমাবেশ করে ‘আমরা কক্সবাজারবাসী’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন। তাঁর পরও বিরাজমান গ্রাহক হয়রানি বন্ধ হয়নি।
জানা যায়, অফিস সহকারী শাখাওয়াত হোসেন, মনির, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা সেবা প্রত্যাশীদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত অশালীন আচরণ করে তাদের জিম্মি করে রেখেছে। আর এসব অভিযোগ নিয়ে সহকারী পরিচালকের কাছে গেলেও মিলে না কোন সুরহা। উল্টো তুমিও খাও, আমিও খাই চুপে চুপে দরজা বন্ধ করে খাই এ মনোভাব নিয়ে চলে সহকারি পরিচালকরা।
আরও জানা যায়, পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে অফিস সহকারী কামম্পিউটার শাখাওয়াত হোসেন, মনির, দালাল সাগর, দালাল জনি, আনসার জাহাঙ্গীর, মহিম ও একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্র পাসপোর্ট অফিসকে ঘুষের হাট বাজাররে পরিণত করেছে। এ সিন্ডিকেরে মূল নাটেরগুরু শাখাওয়াতকে আইনের আওতায় আনতে পারলে সব অনিয়ম বন্ধ হবে এবং পাসর্পোট প্রত্যাশীরা সরকারি নিয়মের মধ্যে পাসর্পোট পেয়ে যাবে।
কক্সবাজার জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত অফিসের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন জানান, কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আসা সেবা প্রত্যাশীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ফি’র থেকে বাড়তি অতিরিক্ত অর্থ নেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ২ জনকে আটক করা হয়। পরে আটক ২ জন পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজে দালালির মাধ্যমে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করলে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা শাহজাদী মাহাবুবা প্রত্যেককে ১০ দিন করে কারাদণ্ড দেন। নিয়মিত এই অফিসে অভিযান চলবে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, পাসপোর্ট অফিসের তিনজন কর্মকর্তার বিষয়ে ব্যাপক অনিয়মের তথ্য পাওয়ায় দুজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসা করা হয়, অপরজন পালিয়ে যায়।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট সৈয়দা শাহজাদী মাহাবুবা জানান, সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান ও গ্রাহককে হয়রানীর অভিযোগে আটক ২ দালালকে দন্ডবিধি ১৮৬০ সালের ১৮৬ ধারায় ১০ দিন করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available