লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারা দেশের মতো লক্ষ্মীপুরে আজ ১ মার্চ শুক্রবার থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকর হয়েছে দুই মাসের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা। এর অংশ হিসেবে লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে জাটকা নিধন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে পহেলা মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ২ মাস নদীতে সকল ধরনের জাল ফেলা ও মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মোট ৪৬ হাজার জেলে রয়েছে, এর মধ্যে ৪১ হাজার রয়েছে কার্ডধারী। নিষেধাজ্ঞার এই দুমাস বেকার ও অলস সময় পার করবেন জেলেরা। এ সময় মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেক জেলের জন্য ১৬০ কেজি চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৪০ কেজি করে চাল পাবেন নিবন্ধিত জেলেরা।
তবে শতভাগ বরাদ্দ না থাকায় নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যেও অনেকেই চাল পাবেন না বলে জানা গেছে। এতে করে জেলেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার এমনকি মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে চালের কার্ড বিক্রির অভিযোগ করেছেন তারা।
তাদের অভিযোগ, জেলে না হয়েও জেলের তালিকা নাম রয়েছে অনেকের। যার কারণে প্রকৃত জেলেরা বঞ্চিত হচ্ছে বিজিএফ এর সহায়তা থেকে। একটি চালের কার্ড করতে চেয়ারম্যান মেম্বার এমনকি মৎস কর্মকর্তাকেও টাকা দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন জেলেরা । আবার অনেকে টাকা দিয়েও মিলছেনা কার্ড।
জেলেরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জেলে কার্ড করতে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা নেন চেয়ারম্যান মেম্বাররা। সরকার বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা দেয়, অথচ আমাদের টাকা দিয়ে সেই সহায়তা কিনতে হয়। তারপরও ভোগান্তির শেষ নেই। কমলনগর উপজেলার সাহেবের হাট, পাটারির হাট, চর মার্টিন ইউনিয়নের হলে জেলেদের কার্ড মিলে, না হলে টাকা দিয়েও কার্ড থেকে বঞ্চিত হতে হয়। এছাড়াও চেয়ারম্যানের ছেলে, ওষুধের দোকানদার, এমনকি চাকরিজীবীরাও পাচ্ছেন কার্ড।’
জেলেরা অভিযোগ করেন, রামগতি উপজেলার চর আব্দুল্যাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মঞ্জুর ছেলের নামে জেলে কার্ড বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে চাহিদার শতভাগ বরাদ্দ না থাকার কারণে জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসন সকল কার্ডধারী জেলেদের চাল দিতে পারছে না প্রশাসন। এতে করে জেলেদের তোপের মুখে পড়তে হয় জন প্রতিনিধিদের।
তবে টাকার বিনিময়ে কার্ড বরাদ্দসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান। তারা বলেন, টাকার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। সকল জেলে চাল না পাওয়ার কারণে এমন অভিযোগ করছে তারা। সরকার যেন শতভাগ জেলেদের জন্য দ্রুত চাল বরাদ্দ দেয়, তারা সেই অনুরোধ করেন।
কমলনগর উপজেলার সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, নিবন্ধিত সকল জেলে চাল না পাওয়ার কারণে এমন অভিযোগ ওঠেছে। জেলে না হয়েও জেলে কার্ড আছে এমন জেলেদের বাছাইয়ের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। তাহলেই বরাদ্দের চাল সঠিকভাবে সকল জেলেদের কাছে যাবে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
আগে বস্তা খুলে দেওয়ার কারণে চাল কম পাওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠায় কমলনগর উপজেলায় শতভাগ স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে বস্তাসহ চাল দেওয়ার স্বিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস। তিনি বলেন, বর্তমানে চাল কমের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় না।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, জেলাতে প্রকৃত জেলে ধরলে খুব বেশি হবে না, যারা জেলে না তারা সুবিধা পাওয়ার আশায় জেলে হয়ে কার্ড করে। দেখা গেছে, এরা নদীতে যায় না মাছও ধরে না এরকম হলেতো তাদেরকে রাখা যাবে না। চেয়ারম্যান আছে, মেম্বার আছে, আমরা আছি, প্রশাসন আছে, সবাই মিলে আমরা চেষ্টা করছি যাতে অনিয়ম না হয়।
তিনি আরও বলেন, জেলে সংখ্যা হিসেবে প্রাপ্তির স্বল্পতা আছে, যার কারণে অনেকে পায় আবার অনেকে পায় না। তবে ভিজিএফ চালের পরিমাণ আরও বাড়াতে অধিদপ্তরের কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে। সকল অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করে প্রকৃত জেলেদের তালিকা করে চাল সহায়তা দেওয়া নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান তিনি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available