খাইরুল ইসলাম মুন্না, বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি: দেশের উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীতে দেরমাসেরও বেশি সময় ধরে মুরগির ভ্যাকসিন নেই উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে। ভ্যাকসিন না পেয়ে প্রতিদিন খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন মুরগি পালনকারী গৃহস্থালী ও প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মুরগি ও কবুতরের রাণীক্ষেত রোগ দেখা দিলেও গত দেরমাসেরও বেশি সময় ধরে উপজেলা প্রণিসম্পদ কার্যালয়ে এই রোগের প্রতিষেধক। এর অভাবে অসংখ্য মুরগি ও কবুতর মারা গেছে।
জানা গেছে, রাণীক্ষেত ভাইরাসজনিত মুরগির এক প্রকার মারাত্মক রোগ। এ রোগে আক্রান্ত মুরগিদের শতকরা ৯০ ভাগই মারা যায়। তাই প্রতিরোধক হিসেবে নির্দিষ্ট বয়সে ছানাদের ভ্যাকসিন দিতে হয়। ৬ দিন বয়সী ছানাদের এক ডোজ ও ২১ দিন বয়সী ছানাদের ২য় ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের অভিযোগ, প্রণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা এসব প্রতিষেধকের একটি অংশ বাইরে বিক্রি করে থাকেন। ফলে প্রতি বছরই সংকটের সৃষ্টি হয়। এতে পোলট্রি গৃহস্থ ব্যক্তি ও খামারমালিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। প্রণিসম্পদ বিভাগ অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।
প্রান্তিক পর্যায়ের ছোটখাট খামারি ও গৃহস্থালী পর্যায়ে যারা অল্প পরিমাণে মুরগি পালন করে তাদের কথা বিবেচনা করে সরকার উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে রাণীক্ষেতের ভ্যাকসিন সরবরাহ করে। প্রতি ১শ ছানার ভ্যাকসিনের সরকার নির্ধারিত মূল্য ২৫ টাকা। তবে সুবিধাভোগিরা জানান, এ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ২৫ টাকার স্থলে নেওয়া হয় ৩০ টাকা। যা বাইরে বেসরকারিভাবে ২ থেকে ৩শ টাকায় বিক্রি হয়।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, শীত মৌসুমের শুরুতে রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কায় আগেভাগেই জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে প্রতিটি উপজেলায় চাহিদা অনুযায়ী আর ভি ডি প্রতিষেধক (রাণীক্ষেত রোগের ভাইরাস ভ্যাকসিন) সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্ত বর্তমানে সাপ্লাইয়ের অভাবে তা সরবরাহ করা যায়নি। এই অবস্থায় প্রাণী সম্পদ অফিসে ভ্যাকসিন না পেয়ে অনেকে বাইরে থেকে অতিরিক্ত দামে ভ্যাকসিন কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
বেতাগী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলা প্রণিসম্পদ কার্যালয় থেকে সর্বশেষ গত ১২ নভেম্বর ১৩০ ইমপুল আর ভি ডি সরবরাহ করা হয়। এগুলো থেকে ২৮ হাজার মুরগি বা কবুতরকে টিকা দেওয়া সম্ভব (প্রতি ইমপুল ভ্যাকসিন দিয়ে ১০০ মুরগি বা কবুতরকে টিকা দেওয়া যায়)। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে এর পর থেকে আর ভি ডি ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়নি।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের কেওড়াবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন বলেন,‘ বারংবার প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে গিয়েও প্রতিষেধক মেলেনি। অপেক্ষার প্রহন গুনতে গুনতে অনেক মুরগিরই ততক্ষনে কাজ সারা হয়েগেছে। যে গুলো বেচে আছে তা নিয়েও আতঙ্কে রয়েছি। এখন আর বলে লাভ কি? প্রতিষেধকগুলো কোথায় যায় এ নিয়েও মানুষের অভিযোগ রয়েছে।
একই ইউনিয়নের বাসিন্দা বিধবা আয়শা বেগম বেগম বলেন, তার ১০ টি মুরগি সম্বল ছিল। সবগুলোই মারা গেছে। একাধিকবার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে গিয়েও তিনি প্রতিষেধক পাননি। অফিসের লোকেরা বলেন বাইর থেকে কিনতে।
শুধু আয়েশা বেগমই নন, একই ধরনের অভিযোগ অনেকের। গত দেরমাসেরও বেশি সময় ধরে বেতাগী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে মুরগি ও কবুতরের ভ্যাকসিন না থাকায় মুরগির রানিক্ষেতের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় শীতের শুরু থেকে ইতেমধ্যে উপজেলার ১টি পৌরসভা সহ ৭টি ইউনিয়নে এ রোগের প্রকোপে অসংখ্য মুরগি ও কবুতর মারা গেছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই প্রতিষেধক না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। এমনই একজন বেতাগী পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল মজিদ।
তিনি বলেন, আমিও প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে গিয়েও ভ্যাকসিন পাইনি। গত ১৫ দিনে আমার প্রতিবেশী বিমল ও আলেয়ার কয়েকটি মুরগি মারা গেছে। আর মারা যাওয়ার আশঙ্কায় অনেক মুরগী জবাই করে খেয়ে ফেলেছেন। তবে আমি বিকল্প হিসেবে প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ঔষধ খাইয়ে দিয়েছি।
বেতাগী পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের মোসা. নারগিস আক্তার বলেন, গত মাস থেকে ভ্যাকসিনের জন্য অপেক্ষা করছি। প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে বেশ কয়েকবার লোক পাঠিয়েও ভ্যাকসিন পাইনি। তারা ফার্মেসি থেকে ভ্যাকসিন কেনার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্ত ফার্মেসির লোক বলছে দেশীয় জাতের মুরগির জন্য তাদের কাছে কোনো ভ্যাকসিন নেই। তারা যে টি বিক্রি করেন তা দেশীয় জাতের মুরগির জন্য নয়। পোলট্রি খামারমালিকরা যে জাতের মুরগি পালন করেন তার জন্য বিক্রি করেন।
উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ের একাধিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পোলট্রি খামারিরা জানান, শীতের শুরুতে মুরগি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। কিন্ত প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে ভ্যাকসিন না পাওয়ায় বাইরে থেকে চড়া দামে কিনতে হয়। প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে ভ্যাকসিন না পাওয়ায় এবারে অনেকেই খামারে মুরগির বাচ্চা তোলেন নি। আর যারা তুলেছেন এর মধ্যে অনেকেরই শত শত মুরগি মারা যাওয়ায় তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
বেতাগী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. আশরাফ হোসেন বলেন, জেলায় সাপ্লাই না থাকায় আমাদেরকে তারা ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পারেনি। তবে খুব দ্রুতই ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে। আর ভ্যাকসিন বাইরে বিক্রির কোন সুযোগ নেই। এসব অপপ্রচার। আমরা সঠিকভাবেই ঔষধ বিতরণ করি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available