হাতিবান্ধা (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি: লালমনিরহাট জেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের মৃত খললুর রহমানের ছেলে জাহিদ বসুনিয়া। পড়াশুনার পাঠ চুকিয়েছেন কয়েকবছর আগেই। ইচ্ছা ছিল সরকারি চাকরি করে মায়ের অভাবের সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু চাকরির প্রতিযোগিতায় কয়েকবার হার মেনে হতাশায় পড়েন তিনি।
হতাশা থেকে বের হতে সিদ্ধান্ত নেন বাবার রেখে যাওয়া জমিতে শুরু করবেন চাষাবাদ। পরীক্ষামূলকভাবে ২০ শতাংশ জমিতে স্ট্র-বেরির চাষ শুরু করেন মাস্টার্স পাশ জাহিদ। আর এই চাষেই সফলতা পান তিনি। দারিদ্র্যতাকে বিতাড়িত করে স্ট্রবেরি চাষে এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩ সালে একটি এনজিওতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তিনি স্ট্রবেরি চাষ সম্পর্কে জানতে পারেন। পরবর্তীতে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে স্ট্রবেরি চাষে উদ্যোগী হন এবং বগুড়া থেকে চারা সংগ্রহ করে মাত্র ২০ শতক জমিতে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। পরীক্ষামূলক চাষে সফলতার পর এবার চলতি বছর চাষ করেছেন ১শ’ শতক জমিতে। জাহিদের বাগানজুড়ে এখন আকর্ষণীয় টকটকে লাল বর্ণের স্ট্রবেরি রয়েছে। আকারেও বেশ বড়।
ইতোমধ্যে লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন বেকার এ যুবক। চলতি মৌসুমে প্রায় ৮ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী তিনি। তবে সুষ্ঠু বাজারব্যবস্থা না থাকার কারণে বেকায়দায়ও পড়তে হচ্ছে জাহিদকে ।
এ বিষয়ে জাহিদ বলেন, বাবার মৃত্যুর পর কিছুটা টাল মাটাল অবস্থা কেটেছে পরিবারে। পড়াশুনা শেষ করে চাকরির পিছনে ছুটেছি অনেক। হয়নি চাকরি। হতাশায় সব হারাতে বসছিলাম। পরে সিদ্ধান্ত নেই বাবার রেখে যাওয়া জমিতেই চাষাবাদ করব। আর সে সিদ্ধান্ত সফলতা এনে দেয়।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমি লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছি। এ মৌসুমে আরও কয়েক লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রির সপ্ন দেখছি। তবে বাজারে স্ট্রবেরির চাহিদা না থাকায় আমাকে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে আমার জার্নিটা আরও সহজ হবে। এদিকে জাহিদের সফলতা দেখে অনেকেই স্ট্রবেরি চাষে উদ্যোগী হচ্ছেন। স্থানীয় কয়েকজন কৃষক আগামী মৌসুমে স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হয়েছে ।
স্থানীয় আরেক কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, জাহিদ তো ভালোই ফলাইছে। বাজারে নাকি এই ফলের দামও বেশি। দেখি আগামীবার হামরাও চাষ করির চাইছি।
মোকারম হোসেন নামের এক কৃষক বলেন, যদি ভালো ফলন হয় আর টাকা বেশি হয় কেন চাষ করব না। জাহিদ সফলতা পেয়েছে আমরাও সে পথে হাটব। ও নতুন মানুষ যদি পারে। আমরা এত বছর চাষাবাদ করে কি পাব না।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) কর্মকর্তা সৈয়দা সিফাত জাহান জানান, নানা পুষ্টিগুণ ও ভিটামিন এ. সি এবং ই সমৃদ্ধ সৌখিন ও দামি ফল স্ট্রবেরি মূলত শীতপ্রধান দেশের ফসল হলেও বাংলাদেশের আবহাওয়ার রবি মৌসুম সর্বত্র চাষোপযোগী একটি উচ্চফলনশীল ফসল। বিশেষ করে লালমনিরহাটে জলবায়ু, আবহাওয়া ও মাটি স্ট্রবেরি চাষের জন্য উপযোগী। নভেম্বর মাঝামাঝি সময়ে গাছে ফুল আসতে শুরু করে এবং ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ফল আহরণ করা যায়।
তিনি আরও বলেন, এ ফলের চাষাবাদ বাড়লে কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহায়তা করে বাজারজাত করণের সুযোগ করে দিবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available