মোঃ ফারুক হোসেন, খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি গুইমারা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বেশির ভাগ মানুষের বাড়ি, ‘বাড়ি তো নয় পাখির বাসা-ছন পাতার ছানি, একটু খানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি’। ভূমিহীনদের খুঁজে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দিতে তালিকা বাছাইয়ে অভিনব কৌশল অবলম্বন করেছেন গুইমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রক্তিম চৌধুরী।
সরেজমিনে দেখা যায়, শুক্রবার ও শনিবার দুপুরের পরে পাহাড়ী অঞ্চলের এ পাহাড় থেকে ওই পাহাড়ে ছুটে খুঁজে বের করেছেন বেশ কিছু অসহায়, হতদরিদ্র ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবার। রীতিমত তার এ কার্যক্রমটি সংগে থাকা উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের অভিভূত হয়েছে। কারণ প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের শুরুতে এসব অসহায় পরিবারগুলো বাদ পড়েছিলো। তিনি মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন গুইমারা উপজেলায়। দিনের দাপ্তরিক কাজ প্রায় সেরেই গুইমারা উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ঝর্না ত্রিপুরা, সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্মল নারায়ন ত্রিপুরা ও ওয়ার্ড মেম্বারকে নিয়ে বের হয়েছেন সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়। লক্ষ্য একটাই গৃহহীনদের যাচাই বাছাই করে প্রকৃত গৃহহীনদের ঘর প্রদান করা।
সন্ধ্যা পর্যন্ত ছুটে চলেছেন সদর ইউনিয়নের কবুতরছড়া, মুসলিমপাড়া, মুলিপাড়া, হাজাপাড়া, ডাক্তারটিলাসহ আরও বেশ কয়েকটি গ্রামের আনাচে-কানাচে। সূর্য অস্ত হয়ে গেছে, তবুও আপন গতিতে পাহাড়ের এ গ্রাম থেকে ওই গ্রামে খুজেঁছেন প্রকৃত গৃহহীনদের। বেশির ভাগ ঘর পাহাড়ের উপর। যার কারণে গাড়ি রেখে হেঁটেই যেতে হয়েছে বেশ পথ। এরই ভিতরে বেশকিছু ঘর যাচাই করেছেন। প্রতিটি ঘরের ভিতর ঢুকে অসহায় পরিবারগুলোর সাথে কথা বলেছেন, নিয়েছেন তাদের প্রত্যাহিক জীবন যাপনের খোজঁ।
হাসি মাখা মূখে কথা বলেছেন শিশুদের সাথে। খোঁজ নিয়েছেন শিশুদের লেখাপড়া ও বিদ্যালয়ের। ইউএনওর সাথে কথা বলে শিশুরা বেশ আনন্দিত। তার এই ছুটে চলা যেনো ভূমিহীন, গৃহহীন, দুর্দশাগ্রস্ত ও ছিন্নমূল পরিবারের আশ্রয়ের নির্ভরতা বহন করেছে। মনে হয়েছে, এটা একটা বিরাট মানবিক কর্মযজ্ঞ।
তরু চাকমার একই পরিবারে দুইজন প্রতিবন্ধি রয়েছে। তার কুড়েঁ ঘর আর প্রতিবন্ধি সন্তানদের দেখলেন ইউএনও। কথা বলার ফাঁকে ঘরের অবস্থা কেমন, ভাঙা ঘরে ঢুকে দুপুর বেলায় কি রান্না হয়েছে ঢাকনা তুলে পাতিল দেখা, সাংসারিক জিনিসপত্র কি আছে ,সবমিলিয়ে দারিদ্রতটা কেমন, ছেলে মেয়ে মিলিয়ে সংসারে সদস্য কয়জন, লেখাপড়া করে কিনা, আয় কি, বয়স্ক লোক কেমন, অসুস্থতায় ভুগছে কিনা, এমনকি পরিবারের প্রধান কি করে এমন তথ্যগুলো সুন্দর আচারণের মাধ্যমে একজন পেশাদার সাংবাদিকের মত বের করে নিয়েছেন তিনি।
এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার রক্তিম চৌধুরী বলেন, মুজিববর্ষে ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের বাসস্থান নিশ্চিতকল্পে সেমিপাকা একক গৃহ নির্মাণের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। দুই কক্ষবিশিষ্ট গৃহ, প্রশস্ত বারান্দা, রান্নাঘর ও টয়লেট রয়েছে এ ঘরে। এঘর পেতে কোন টাকার প্রয়োজন হয় না। এটি প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিষয়টি বার বার সাধারণ মানুষকে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
প্রতিবন্ধি পরিবার প্রধান তরু চাকমা বলেন, আমি গরিব মানুষ। আমার ছেলে মেয়ে দুটি প্রতিবন্ধি। বৃষ্টি পড়লে ঘরে পানি পড়ে। গতবার তুফানে আমার ঘর ভেঙ্গে গেছিলো। পাড়ার কার্বারীও কোন সময়ে ঢুকে দেখে নাই। আমার ঘরে ইউএনও ঢুকে সব দেখে গেলো। আমি ঘর পাইলেও খুশি, না পাইলেও জীবনে কোন দু:খ নাই।
বৃদ্ধ ভ্যান চালক নারায়ন ধর জানান, ভ্যান গাড়ি চালাই জীবন শেষ। পাচঁটি ছেলে মেয়ে নিয়ে এমন ঘরে থাকি। কখনও কেউ ঘরে ঢুকে দেখে নাই। এবার ইউএনও আমার ঘরে ঢুকে দেখলো। এরকম ইউএনও তো আগে দেখি নি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available