• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বিকাল ০৫:১৪:০১ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বিকাল ০৫:১৪:০১ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

জেলার খবর

কুষ্টিয়ার পানের বরজে আগুন, গ্রামজুড়ে বাতাসে পোড়াগন্ধ আর সব হারানো আহাজারি

১২ মার্চ ২০২৪ সকাল ১০:০৭:০৯

কুষ্টিয়ার পানের বরজে আগুন, গ্রামজুড়ে বাতাসে পোড়াগন্ধ আর সব হারানো আহাজারি

ফয়সাল চৌধুরী,  কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পানের বরজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রায়টা পাথরঘাটা থেকে কুচিয়ামোড়া গ্রাম পর্যন্ত পুরো সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এখন শুধু ধ্বংসস্তূপ। কোথাও ছাই বা কোথাও পোড়া পানগাছ কঙ্কাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পুরো এলাকার বাতাসে এখনও পোড়াগন্ধ। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্তদের আহাজারি। চোখের সামনে সব কিছু হারিয়ে বাকরুদ্ধ অনেক পরিবার। কেউবা যতটুকু বরজ বাঁচাতে পেরেছেন, তা থেকে একটু একটু করে বেছে তুলছেন, যদি বিক্রি করা যায়, এই আশায়।

১১ মার্চ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুচিয়ামোড়া মাঠে গিয়ে দেখা যায়, পঞ্চাশঊর্ধ্ব এক নারী পানের বরজের সামনে আহাজারি করছেন। জানতে চাইলে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘তাঁর স্বামী রহিম আলী আট বিঘা জমিতে পানের বরজ করেছিলেন। সামনে ঈদ, কত চিন্তা ভাবনা করে রেখেছিলেন, আগুনে সব শেষ করে দিলো।’ তার পাশেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন জরিনা বেগম নামের আরেক নারী। তাঁর স্বামী বিশেষ কাজে রাজশাহী গেছেন। আগুনের খবর বিভিন্ন মাধ্যমে শুনে বার বার ফোন দিচ্ছেন, জানতে চাইছেন তার বরজের কী অবস্থা। স্ত্রী জরিনা বারবারই তাকে মিথ্য বলছে যে তাদের বরজ ঠিক আছে, কিন্তু আসলে তো সবই শেষ। এখন বজের খুঁটি ধরে বিলাপ করছেন জরিনা, ‘তুমাক আমি কি জবাব দিবো। সুমিতির কিস্তি কীভাবে শোধ হবি। ওরে আল্লাহ, আমাদের সব কিছুই নি নিলি ক্যা।’

আগের দিন ১০ মার্চ রোববারের আগুনে জরিনার মতো কয়েক হাজার পান চাষির স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে।

রোববার বেলা ১১টার দিকে রাইটা পাথর ঘাটা এলাকার একটি পানের বরজে হঠাৎ করেই আগুন দেখতে পান স্থানীয়রা। দ্রুত সময়ের মধ্যে আগুন বিস্তার লাভ করতে থাকে। স্থানীয় নারী-পুরুষ যে যার মতো করে চেষ্টা করে আগুন নেভাতে ব্যর্থ হন। খবর দেওয়া হয় ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিসকে। ততক্ষণে আগুন তাদেরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। একে একে আগুন নেভাতে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর এবং পাবনা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট এসে কাজ শুরু করেন। সাথে যোগ দেন স্থানীয় কয়েক শত নারী-পুরুষ। সকলের চেষ্টায় প্রায় ৬ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু ততক্ষণে কয়েক হাজার কৃষকের স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর ও ভেড়ামারা) আসনের সংসদ সদস্য কামরুল আরেফিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষিদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের করা হবে বলে জানান। এছাড়াও তিনি তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষিদের মাঝে নগদ অর্থ দেবেন বলেও জানান। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিকভাবে স্থানীয় এ সংসদ সদস্য আগুনে পুড়ে পান চাষিদের শত কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।

চুয়াডাঙ্গা অঞ্চল ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক রফিকুজ্জামানের নেতৃত্বে কুচিয়ামোড়া এলাকার আগুন নেভানোর কাজ করেন একদল ফায়ার ফাইটার। জানতে চাইলে রফিকুজ্জামান বলেন, যেভাবে আগুন ছড়িয়ে পড়ছিলো পর্যাপ্ত পানির অভাবে আমরা আগুনের সাথে পেরে উঠছিলাম না। তবে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় অমাদের চেষ্টা অবশেষে সফলতা পেয়েছে। আগুনের উৎপত্তির কারণ খুঁজে না পাওয়া গেলেও ধারণা করা হচ্ছে, বিড়ির আগুন থেকে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে। তবে বিষয়টি আমরা গভীরভাবে খুঁজে দেখার চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে আমাদের একটি টিম পুলিশ প্রশাসন এবং স্থানী প্রশাসনের সাথে কাজ করছে।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের জন্য কাজ করছে জেলা প্রশাসন। ঘটনার তদন্তে ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় সংসদ সদস্যের বরাত দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকাশ কুমার কুন্ড বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুতের পর তাদের ক্ষতিপূরণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, তাতে প্রায় চার হাজার কৃষক প্রত্যক্ষ এবং পরক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে মোট ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে আরও সময় লাগবে।

তবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক কৃষকের প্রায় তিন হাজার বিঘা জমির পানের বরজ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রতি বিঘায় ক্ষতি হয়েছে প্রায় দুই থেকে তিন লাখ টাকা। এতে শতকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষিরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর পানের বরজে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ক্ষতিগ্রস্তরা। তারা এই পানের বরজকে ঘিরে স্বপ্ন বুনেছিলেন। সব হারিয়ে সরকারি সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

যেসব পরিবার অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের মাঝে শুকনা খাবার এবং চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এহেতেসাম রেজা।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ



সেনাকুঞ্জে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া
২১ নভেম্বর ২০২৪ বিকাল ০৪:২০:৫২





আলু বীজের চড়া দামে দিশেহারা হাওরের চাষিরা
২১ নভেম্বর ২০২৪ বিকাল ০৩:৩৬:৫৫