লংগদু (রাঙ্গামাটি) প্রতিনিধি: সহকারী শিক্ষক হতে শুরু করে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির কেউই অবগত নয় স্কুলের কোন বিষয়ে। প্রধান শিক্ষক নিজের মত করেই নয় ছয় করে চালিয়ে যাচ্ছে স্কুলের নানান কার্যক্রম, এমনটাই অভিযোগ সহকারী শিক্ষকসহ স্থানীয়দের। ঘটানাটি ঘটছে রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার মাইনীমুখ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
স্কুলটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় নানা অনিয়মের চিত্র। অভিযোগ আছে, স্কুলটিতে নিয়মের তোয়াক্কা না করেই প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন সরকারী গাছ কাটা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্র সংস্করণ বাবদ দেড় লক্ষ টাকার মধ্যে কিছু টাকার কাজ করে বাকি টাকা নয় ছয়সহ প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণ করার।
এর আগে একই শিক্ষক পাশ্ববর্তী অন্য একটি স্কুলে থাকাকালীন সময়ে সহকারী নারী শিক্ষককে কু-প্রস্তাব দেওয়ার কারণে, শিক্ষকরা জেলা পরিষদে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তখন তিনি স্থানীয় উপজেলা পরিষদে অঙ্গীকার নামা দেন। সেখান থেকে বদলি হয়ে মাইনী স্কুলে আসলে এখানেও নানান অভিযোগে অভিযুক্ত তিনি।
শিক্ষকরা বলছেন, তিনি স্কুলের কোন বিষয়ে সহকারীদের সাথে আলাপ আলোচনা করেন না। নিজের মত করে যা ইচ্ছে করে যাচ্ছেন। এছাড়াও অফিসিয়ালি অনেক কাজ ইচ্ছা করে জমা করে পরের সময় শেষ হলে তৎক্ষনাৎ কাজ সম্পন্ন করে জমা দিতে চাপ প্রয়োগ করে। স্কুলের সংস্করণের টাকা কোথায় কি করেছে জানে না শিক্ষকরা কেউ। স্কুলের সরকারি গাছ চারটি গাছ কোনরকম রেজুলেশন ছাড়াই কর্তন করেছে প্রধান শিক্ষক। এছাড়াও নানান অভিযোগ করেন তারা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের কোন রেকর্ড দিতে রাজি হয়নি। তবে জোড় পূর্বক নির্বাচনী সংস্করণ বাবদ অল্প কিছু কাজের প্রমাণ দেখিয়েছে। যা আনুমানিক ৩৫ হাজার টাকার মত হবে। বাকি টাকার চোখে পড়ার মত কোন কাজ দেখাতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে মাইনী বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও মাইনীমুখ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সামশু সওদাগর বলেন, আসলে আমি স্কুলের কোন বিষয়ের প্রতি লোভ লালসা করি না। গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে প্রধান শিক্ষক বলেছিলো ডাল কাটবে, গাছ কাটার বিষয় জানতাম না।
নির্বাচনী কেন্দ্র সংস্করণ বাবদ টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো প্রধান শিক্ষক কাজ করেছে তিনি জানেন না। হিসাব নিকাশ তার কাছে আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্কুলের সকল বিষয়ে প্রধান শিক্ষক জানে। এছাড়াও কিছু দিন পূর্বে স্লিপের টাকা উত্তোলন করলেও সভাপতি জনেইনা স্লিপের টাকা এসেছে কি না। প্রধান শিক্ষক নিয়মিত স্কুলে আসে কিনা জানতে চাইলে, সভাপতি বলেন, প্রতিদিন তিনি ১১টার দিকে আসেন, পরে সব কিছু ম্যানেজ করে চলে যান। শেষ পর্যায়ে গাছ কাটার দৃশ্য দেখার জন্য সভাপতিকে সাংবাদিকরা আহবান করলে প্রধান শিক্ষক সভাপতিকে যেতে বার বার বারণ করেন। শেষ পর্যন্ত সভাপতির সাথে তিনিও আসেন।
লংগদু উপজেলার শিক্ষা অফিসার এম কে ইমাম উদ্দীন বলেন, আমার জানামতে প্রধান শিক্ষক ভালো। তিনি যেখানে যায় সেখানেই পরিবর্তন হচ্ছে। বর্তমানে ঐ স্কুলের সহকারী শিক্ষকরা তাকে মেনে নিতে পারছে না। প্রধান শিক্ষক চার দিনের ছুটি নিয়ে দশ দিন অফিস করেনি। কিন্তু পরবর্তীতে হাজিরা খাতায় চারদিন সি এল এবং বাকি ছয় দিন হাজিরা উঠেছে এটা কিভাবে সম্ভব? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নয়। এছাড়াও কোন রকম রেজুলেশন ছাড়া স্কুলের গাছ কাটা যাবে কিনা? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এরকম নিয়ম নাই। এটা আমরা খতিয়ে দেখবো। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্র সংস্করণ বাবদ দেড় লক্ষ টাকা স্কুলটি পেয়েছে, সে টাকার কাজ কত দুর হয়েছে? এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের অফিসার গিয়েছে কাজ দেখে আসছে, আমাদের কাছে সব ঠিক আছে মনে হলো।
এরপর সাংবাদিকরা স্কুলটি ঘুরে চোখে পড়ার মত দেড় লাখ টাকার তেমন কোন কাজ দেখতে পায়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা অফিসার বলেন, ইন্জিনিয়ার এবং আমাদের অফিসার দেখে শুনেই বিল করেছে। এক পর্যায় সাংবাদিকরা শিক্ষা অফিসারকে কাজটি পুনরায় তদন্ত করার আহবান জানান। এর আগেও ওনার বিরুদ্ধে নারী শিক্ষকদের যৌন হয়রানির অভিযোগে আপনাদের কাছে এবং জেলা পরিষদে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী। সে বিষয়টির কোন সমাধান হয়েছে কি? প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা অফিসার বলেন, এ বিষয়ে আমরা তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি, কিন্তু জেলা পরিষদ বা বিভাগীয়ভাবে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সেটা আমাদের জানা নাই।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available